মঙ্গলবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

পানিফল চাষে স্বাবলম্বী নওগাঁর সাইদুর

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

পানিফল চাষে স্বাবলম্বী নওগাঁর সাইদুর

নিজের জমিজমা বলতে কিছুই নেই। সারা বছর মৌসুমি ফলের ব্যবসা ও অন্যের জমি বর্গাচাষ করেন। আর এ থেকে টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে তিন সদস্যের ভরণপোষণ চলত। পরে পানিফল চাষ করে ভাগ্য বদলে যায়। স্বল্পসময়ে ও কম পরিশ্রমে পানিফল চাষে লাভবান হয়েছেন। সংসার থেকে অভাব দূর হয়েছে। এখন স্বাবলম্বী সাইদুর রহমান (৪০)। তার বাড়ি নওগাঁর মান্দা উপজেলার গণেশপুর ইউনিয়নের পারইল  গ্রামে। জানা গেছে, বিভিন্ন খাল-বিল, নদী-নালা, ডোবা ও পুকুরে বাণিজ্যিকভাবে পানিফল চাষ করা হয়। পানিফল সবচেয়ে সস্তা ফল। এখন সবজির দোকানগুলোতে স্থান করে নিয়েছে এটি। স্বল্পসময়ে কম পরিশ্রমে অধিক ফলন হওয়ায় অনেকেই চাষ করেন পানিফল। দুদিকে ধারালো শিং। ফলটি পানিফল নামে পরিচিত। আবার কেউ কেউ শিঙ্গাড়া ফলও বলে। পানির নিচে মাটিতে এর শেকড় থাকলেও পানির ওপরে ভেসে থাকে পাতাগুলো। কচি অবস্থায় পানিফল দেখতে প্রথমে লাল, একটু পরিপুষ্ট হলে সবুজ এবং সব শেষে কালো রং ধারণ করে। ফলের ভিতরের অংশে সাদা শাঁস। এই শাঁস অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। কাঁচা এবং সেদ্ধ অবস্থাতেই খাওয়া যায়। আষাঢ় মাসে যখন জলাশয়গুলোতে পানি জমে তখন সে পানিতে পানিফলের চারা ছেড়ে দেওয়া হয়। ক্রমেই বাড়তে থাকে চারাগাছের সংখ্যা। গাছে গাছে ভরে যায় জলাশয়। পানিতে ছড়ানোর তিন মাস পর থেকেই এই ফল পাওয়া যায়। ভাদ্র মাস থেকে গাছে ফল আসা শুরু করে এবং কার্তিক মাসের শেষে ফল বিক্রি শুরু হয়। শুরুতে ফল কম আসায় মাসে দু- তিনবার ফল সংগ্রহ করা হয়। তবে গাছে বেশি ফল আসা শুরু হলে প্রতি সপ্তাহে ফল সংগ্রহ করা হয়। জলাশয়ে হাঁটু সমান পানি থাকলে নেমে পানিফল সংগ্রহ করে। আবার পানি বেশি থাকলে নৌকায় চড়ে পানিফল সংগ্রহ করা হয়। সাইদুর রহমান বলেন, ২০ বছরে আগে বিয়ের পর সংসারে অভাব ছিল। এরপর স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে বাড়ির পাশে ডোবায় অন্যের জমি বর্গা নিয়ে পানিফল চাষ করি। সে বছর ভালো লাভ পেয়েছিলাম। পরের বছর ধারদেনা করে বেশি পরিমাণ জমিতে পানিফল চাষ করা হয়। ২০ বছর থেকে পানিফল চাষ করছেন। এবার ১৭ হাজার টাকায় ১৬ বিঘা জমি এক বছরের জন্য লিজ নিয়ে পানিফল চাষ করেছি। তিনি বলেন, কীটনাশক, শ্রমিক, সার দিয়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বীজ নিজের থাকায় খরচ কম হয়েছে। পানিফল গাছে এক ধরনের লতি হয়, সেই লতি তুলে রেখে পানিতে সংরক্ষণ করে রাখা হয়। একমাত্র জলাবদ্ধ জলাশয়েই পানিফল ফলে। কাটিং থেকে বংশবিস্তার হয়। এ  মৌসুমে প্রায় ২ লাখ টাকার মতো বিক্রি হবে। পাশাপাশি  মৌসুমে আম, জলপাই ব্যবসা করা হয়। তবে স্বল্প পরিশ্রম ও কম সময়ে পানিফল একটি লাভজনক ব্যবসা। এ পর্যন্ত তিনবার পানিফল সংগ্রহ করেছেন এবং প্রায় ২৫ হাজার টাকার মতো বিক্রি হয়েছে। বাজারে এখন ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা মণ। ৬ জন শ্রমিক দিয়ে মাসে দুবার ফল উঠানো হয়। প্রতিজনকে ২০০ টাকা মজুরি দিতে হয়। রাজশাহীতে পাইকারি বিক্রি হয়। এ ছাড়া স্থানীয়রা খুচরা নিয়ে বিক্রি করেন। সাইদুরের স্ত্রী জাহানারা বেগম বলেন, ‘আগে অনেক অভাব ছিল। ধারদেনা করে চলতে হতো। ফলের ব্যবসা করেই ১৮ কাঠা ফসলি জমি বন্ধক ও আড়াই বিঘা জমি বর্গাচাষ নিয়েছি। দিয়েছি ইটের দুই ঘরে টিনের ছাউনি। মেয়ে সুমাইয়া এবার এসএসসি পাস করেছে। আল্লাহ আমাদের দিকে তাকিয়েছেন।’

সর্বশেষ খবর