বুধবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বদরুলের বিরুদ্ধে চার্জশিট স্মৃতি ফিরছে খাদিজার

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

বদরুলের বিরুদ্ধে চার্জশিট স্মৃতি ফিরছে খাদিজার

সিলেট এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে কলেজছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিসের ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) আদালতে দাখিল করা হয়েছে। হামলার ঘটনার এক মাস পাঁচ দিন পর গতকাল চাঞ্চল্যকর এ মামলার চার্জশিট অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে দাখিল করলেন তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর পুলিশের শাহপরান থানার উপ-পরিদর্শক হারুনুর রশিদ। চার্জশিটে একমাত্র আসামি করা হয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র (বহিষ্কার) এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল আলমকে। ৩ অক্টোবর সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিস পরীক্ষা দিতে যান এমসি কলেজ কেন্দ্রে। প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ওই দিন পরীক্ষা শেষে কলেজ ক্যাম্পাসে খাদিজাকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন বদরুল। আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে ঢাকায় পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হামলার পরদিন খাদিজার চাচা আবদুল কুদ্দুস বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার জেদান আল মুসা জানান, হামলার আলামত জব্দ ও প্রত্যক্ষদর্শীসহ তদন্ত-সংশ্লিষ্ট ৩৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ১৩৬ পৃষ্ঠার চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হয়েছে। চার্জশিটে বদরুলকে একমাত্র আসামি করা হয়েছে। বদরুলের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতে চার্জশিট তৈরিতেও সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। চার্জশিটে সন্তোষ প্রকাশ করে বাদী আবদুল কুদ্দুস বলেন, খাদিজার মামলা তদন্তে পুলিশ আন্তরিক ছিল। এখন তিনি আদালতের কাছে বদরুলের সর্বোচ্চ শাস্তির প্রত্যাশা করছেন। খাদিজার চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন তিনি। সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট মফুর আলী জানান, আগামী ধার্য তারিখে অভিযোগপত্র আদালত আমলে নেওয়ার পর মামলার পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হবে। তবে মামলাটি যাতে দ্রুততম সময়ে নিষ্পত্তি এবং হামলাকারীর সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা যায়, এ ব্যাপারে সরকারি কৌঁসুলিদের পক্ষ থেকে সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুরনো কথা মনে করছেন খাদিজা : আরেক হাতে অস্ত্রোপচারের পর জ্ঞান ফিরেছে সিলেটে ছাত্রলীগ নেতা বদরুলের চাপাতির কোপে গুরুতর আহত কলেজছাত্রী খাদিজার। জ্ঞান ফেরার পরই তিনি তার পুরনো কথা মনে করতে পারছেন। সোমবার তার বাম হাতে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। পরে অপারেশন থিয়েটার থেকে তাকে পোস্ট অপারেটিভ কক্ষে রাখা হয়েছিল। সেখান থেকে গতকাল দুপুরে কেবিনে নেওয়া হয়েছে। খাদিজার বাবা মাসুক মিয়া জানান, ‘অপারেশন শেষে রাতে তার মেয়েকে পোস্ট অপারেটিভ কক্ষে রাখা হয়েছিল। গতকাল দুপুরে তাকে কেবিনে নেওয়া হয়েছে। এখন সে আগের চেয়ে ভালো। ধীরে ধীরে পুরনো কথা মনে করতে পারছে। আগে কখনো আঙ্কেল আবার কখনো বাবা বলত। এখন আর আঙ্কেল বলে না। শুধু বাবা বলে।’ গত ৪ অক্টোবর খাদিজার মাথায় প্রথম এবং ১৭ অক্টোবর তার ডান হাতে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। ডান হাতের সফল অস্ত্রপচারের পর তার বাঁ হাতেও অস্ত্রপচার সম্পন্ন করা হয়েছে। গত ৩ অক্টোবর সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিসকে সরকারি এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে চাপাতি দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করেন শাবি ছাত্রলীগের সহসম্পাদক বদরুল আলম। আশঙ্কাজনক অবস্থায় খাদিজাকে প্রথমে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় পরের দিন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এরপর খাদিজাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল।

সর্বশেষ খবর