শুক্রবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

যেমন চলছে ময়মনসিংহের রাজনীতি

চাঙ্গা আওয়ামী লীগ, বিএনপি গৃহবন্দী, ঘর গোছাতে চায় জাপা

সৈয়দ নোমান, ময়মনসিংহ

যেমন চলছে ময়মনসিংহের রাজনীতি

প্রায় দেড় যুগ পর ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পরিবর্তন এসেছে। এ পরিবর্তন অনেকটাই যেন বিপ্লবের মতো। দীর্ঘ সময় ধরে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালনের পর সম্প্রতি ধর্মমন্ত্রী প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান নেতৃত্ব হারিয়েছেন। তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন আরেক প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা, বিদায়ী কমিটির সহসভাপতি ও জেলা পরিষদ প্রশাসক অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা। এ নেতা নেতৃত্বের ফ্রন্টলাইনে আসায় নব উদ্যমে জেগে উঠেছেন দলটির নেতা-কর্মীরা।

গত ৩ নভেম্বর জেল হত্যা দিবসে নতুন কমিটির নেতারা শোডাউন করে তাক লাগিয়েছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলা থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দলকে সুসংগঠিত করতে উদ্যোগ নিয়েছেন জেলা কমিটির নেতারা। দলীয় সূত্র জানায়, ২০০৪ সালে সম্মেলনে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান ও আবদুল মতিন সরকার। বর্ষীয়ান নেতা রাজনীতির মাঠে নিজের একক নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখলেও দৃশ্যপট বদলে যায় বছর দুয়েক আগে। জেলা আওয়ামী লীগের কো-অপ্ট কমিটিতে ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা ইকরামুল হক টিটুর ঠাঁই না হওয়ায় প্রতিবাদে ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে দলটির একাংশের নেতা-কর্মীরা। দলের সেই সময়কার সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা ওই সময় জেলা আওয়ামী লীগের কো-অপ্টে মেয়র টিটুর নাম প্রস্তাব করলেও সাড়া দেননি প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান। সেই থেকে ক্ষমতাসীন দলের বিরোধ প্রকাশ্যে রূপ নেয়। রাজনীতির মাঠে প্রিন্সিপাল মতিউরকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে গাঁটছড়া বাধেন অ্যাডভোকেট খোকা ও মেয়র টিটু। এ পক্ষ রাজনীতির মাঠ নিজেদের দখলে নেওয়ার পর থেকেই গুঞ্জন চলছিল প্রায় দেড় যুগ পর জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পরিবর্তন আসছে। এরপর চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও নতুন কমিটি ঘোষণা না করেই ঢাকায় ফিরে যান আওয়ামী লীগের ওই সময়কার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। থমকে যায় নতুন নেতৃত্ব নির্ধারণ। অবশেষে সব প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে গত ৯ অক্টোবর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা হয়। অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা যেমন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পান তেমনি সাধারণ সম্পাদক পদেও আসে চমক। আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল সাধারণ সম্পাদক পদে আসীন হন।

গৃহবন্দী বিএনপি : দলীয় কোন্দলে টালমাটাল ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপি। তার চেয়েও বড় কথা দমন-পীড়ন আর মামলার ভারে রাস্তায় বেরিয়ে এখন আন্দোলন করার শক্তি ও সাহস দুটিই হারিয়ে কার্যত গৃহবন্দী হয়ে পড়েছে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপি। দলটির সাধারণ সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দের পক্ষের নেতা-কর্মীরা দলীয় কার্যালয়ে আর দলীয় সভাপতি এ কে এম মোশাররফ হোসেনের নেতা-কর্মীরা বেশিরভাগ সময়ে তার বাসার দুয়ারে দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। ফলে দলটির বিরোধ-বিভক্তির পালে নতুন করে হাওয়া লেগেছে। জানা যায়, সাংগঠনিকভাবে ময়মনসিংহ দক্ষিণ ও উত্তর জেলায় গ্রুপিং কোন্দল ছড়িয়ে পড়েছে জেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে। ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনের প্রার্থিতা নিয়ে পূর্ণাঙ্গ অনুমোদিত দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি এ কে এম মোশাররফ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দের দ্বন্দ্ব পুরনো। তাদের দ্বন্দ্বের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দলটির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর ক্ষেত্রেও। দলটির সভাপতি মোশাররফ হোসেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হওয়ায় দক্ষিণ জেলা বিএনপির নেতৃত্ব হারাচ্ছেন। তার স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন নতুন মুখ। তবে আন্দোলন-সংগ্রামে না থাকা সুযোগ-সন্ধানী কোনো নেতাকে এ পদে মেনে নেবে না দলটির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। এ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ তৃণমূলে দলকে সুসংগঠিত করতে নানামুখী প্রয়াস নিয়ে এগোচ্ছেন। সূত্র মতে, ময়মনসিংহ বিএনপির মাঠ রাজনীতির প্রাণ হিসেবে পরিচিত ছিলেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সদস্য লিটন আকন্দ। কিন্তু আকস্মিকভাবে ২০১২ সালের পয়লা ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ জেলা যুবদলের গঠিত কমিটি থেকে বাদ পড়েন লিটন আকন্দ। দক্ষিণ জেলা যুবদলের সাবেক এ সাধারণ সম্পাদককে অদৃশ্য কারণে মাইনাস হওয়ার প্রভাব পড়ে মাঠের রাজনীতিতে। প্রায় পাঁচ বছর পরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি দক্ষিণ জেলা যুবদলের নেতারা। কোতোয়ালি ও শহর বিএনপির কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ।

ঘর গোছাতে চায় জাতীয় পার্টি : ময়মনসিংহেও রাজপথের বিরোধী দল হতে পারেনি জাতীয় পার্টি। জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ পরিচ্ছন্ন রাজনীতির দৃষ্টান্ত হলেও এক সময়কার দুর্গ সদরে নিজের দলকে শক্ত সাংগঠনিক ভিতের ওপর দাঁড় করাতে পারেননি। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় ময়মনসিংহে জাতীয় পার্টিকে সংগঠিত করার পরিকল্পনা নিয়েছেন রওশন। ময়মনসিংহের ভোট রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি বরাবরই ফ্যাক্টর। অতীতের রাজনীতির ঘূর্ণিপাকে জাতীয় পার্টি মাঠপর্যায়ে ঘুরে দাঁড়াতে না পারলেও এখন নড়েচড়ে বসার চেষ্টা করছে।

সর্বশেষ খবর