শনিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

চট্টগ্রাম-দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের কাজ শুরু মার্চে

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্প ‘চট্টগ্রাম-দোহাজারী  থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন ডুয়েলগেজ’ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এ প্রকল্পের বিভিন্ন টেন্ডারও ইতিমধ্যে আহ্বান করা হয়েছে। আগামী বছর ২০১৭ সালের মার্চের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। এ প্রকল্পের মোট ১৮ হাজার কোটি টাকার মধ্যে অধিকাংশ টাকা এডিবির। বাকি টাকা সরকারের রাজস্বসহ বিভিন্ন খাত থেকে যাবে বলে জানান রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফিরোজ সালাউদ্দিন।

তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী এ প্রকল্পটি ফাস্ট ট্র্যাক হিসেবে নিয়েছেন। কম সময়ের মধ্যে আমরা এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রধান কাজ হলো ভূমি অধিগ্রহণ। এটি একটি জটিল বিষয়। বিষয়গুলো নিয়ে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, রেললাইনের কিছু অংশ সংরক্ষিত বনবিভাগের ভিতর দিয়ে গেছে। যেখানে হাতি চলাচল করে। আমরা কীভাবে বন্যপ্রাণীর সঙ্গে সহাবস্থানের মাধ্যমে পরিবেশের সবচেয়ে কম ক্ষতি করে পরিবেশবান্ধব হিসেবে রেললাইন করতে পারি, সে বিষয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা করেই কাজ করছি। তবে এ প্রকল্পের উন্নয়ন কাজগুলো কেমন হচ্ছে, তা পরিদর্শনও করছেন বলে তিনি জানান।

পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) প্রকৌশলী আবদুল হাই বলেন, এ প্রকল্পটি যত দ্রুত সম্ভব শেষ করা যায়, সেই লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ের সচিব চট্টগ্রামে এসে রেলসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। এ রেললাইনটিও সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন তিনি। আশা করছি আগামী বছরের শুরুর দিকে কাজ শুরু হবে। চট্টগ্রাম-দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেললাইনের সহকারী প্রকল্প পরিচালক (এপিডি) মো. মফিজুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক আগামী বছরের মার্চের মধ্যে প্রকল্পের জমি হস্তান্তরের আশ্বাস দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যে প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে। তবে মন্ত্রণালয়ের সচিব চট্টগ্রামে এসে মতবিনিময় করেছেন।

জানা যায়, বর্তমানে মাঠপর্যায়ে ভূমি জরিপ ও অধিগ্রহণ এবং টেন্ডারিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগের কাজ চলছে। এ প্রকল্পের দুই ধাপে কাজ চলছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ করা হবে। রামু থেকে গুনধুম পর্যন্ত করা হবে পরের ধাপে। প্রথম ধাপে ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে ১৪২টি ব্রিজ ও কালভার্ট এবং ৯টি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। প্রকল্প এলাকায় সবচেয়ে বেশি স্পর্শকাতর বিষয় হলো সংরক্ষিত বন এলাকায় হাতি চলাচলের ৫টি স্থায়ী এবং ৬টি মৌসুমি স্থান রয়েছে। এ জায়গাগুলো চিহ্নিত করে কাজ চলছে বলে দায়িত্বশীলরা জানান। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পটি বহু প্রতীক্ষিত। ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে পাকিস্তান আমল এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিভিন্ন সময় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার খুব গুরুত্বের সঙ্গে প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে। সম্প্রতি রেলভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিদর্শনে গেলে ওই রেললাইন নির্মাণসহ যাবতীয় কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। যে অনুযায়ী রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা দ্রুততার সঙ্গে কাজও করে যাচ্ছেন। রেলওয়ের তথ্যমতে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে দোহাজারী-কক্সবাজার-গুনধুম রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটির সম্ভাবতা যাচাই শুরু হয় ২০১৩ সালে।

এতে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজ করে কানাডার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ক্যানারেল কোম্পানি। দোহাজারী-কক্সবাজার-গুনধুম প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ছিল ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর। পরে দুই দফা সময় বাড়িয়ে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। তবে এখনো প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি শূন্য শতাংশ। নতুন হিসাবে ২০২০ সালের জুনে রেলপথটি নির্মাণ শেষ হতে পারে। বুধবার ‘দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন ডুয়েলগেজ’ রেললাইন প্রকল্প বিষয়ে সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ মতবিনিময় সভায় রেলপথ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আহমেদ মোর্শেদ, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক সামসুল আরেফিন, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন, পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মো. মাসুদ করিম, ওই প্রকল্পের পরিচালক মাহবুবুল হক বকশী, সহকারী প্রকল্প পরিচালক মো. মফিজুর রহমান, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোমিনুর রশিদ আমিন, শঙ্কর রঞ্জন সাহা, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এম গোলাম মওলা, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন, বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ইশরাত রেজা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর