শনিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

হামলা ও গ্রেফতার আতঙ্ক সাঁওতাল পল্লীতে

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ আখ খামারের জমি সাঁওতালদের দখলমুক্ত করতে ৬ নভেম্বর পুলিশি অভিযান চালানো হয়। চিনিকলের জমি থেকে সাঁওতালদের উচ্ছেদ করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষে এ পর্যন্ত মঙ্গল মাদ্রি, শ্যামল হেমভ্রম, রমেশ সরেন নামে তিন সাঁওতালের মৃত্যু হয়েছে বলে সাঁওতালদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। তাদের অভিযোগ, সাঁওতাল অধ্যুষিত উপজেলার মাদারপুর, জয়পুরপাড়া, গোয়ালপাড়া ও শিন্টাছড়ির সাঁওতালরা এখন হামলা ও গ্রেফতারের ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত। গ্রামগুলো এখন প্রায় পুরুষশূন্য। ফলে ঘরে ঘরে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে এ ঘটনায় এ পর্যন্ত পুলিশ চার সাঁওতালকে গ্রেফতার করেছে। এদিকে আরও চার থেকে পাঁচজনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি করছেন সাঁওতাল নেতারা। পুলিশ জানায়, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুলিবিদ্ধ দীজেন টুটু, চরণ সরেন ও বিমল কিশকুকে সোমবার এবং গোবিন্দগঞ্জ থেকে মাঝিয়া হেমভ্রমকে মঙ্গলবার গ্রেফতার করা হয়েছে। চিনিকল কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদকৃত ওই জমিতে এখন পুলিশ পাহারায় আখ চাষের জন্য কলের লাঙল দিয়ে চাষ ও অন্যান্য কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ইক্ষু খামার জমি উদ্ধার সংহতি কমিটির সহসভাপতি ফিলিমন বাস্কে বলেন, ‘পুলিশের গুলিতে আমাদের মোট চারজন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া আরও চার থেকে পাঁচজনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি করছেন সাঁওতাল নেতারা। পুলিশ জানায়, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুলিবিদ্ধ দীজেন টুটু, চরণ সরেন ও বিমল কিশকুকে সোমবার এবং গোবিন্দগঞ্জ থেকে মাঝিয়া হেমভ্রমকে মঙ্গলবার গ্রেফতার করা হয়েছে। চিনিকল কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদকৃত ওই জমিতে এখন পুলিশ পাহারায় আখ চাষের জন্য কলের লাঙল দিয়ে চাষ ও অন্যান্য কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ইক্ষু খামার জমি উদ্ধার সংহতি কমিটির সহসভাপতি ফিলিমন বাস্কে বলেন, ‘পুলিশের গুলিতে আমাদের মোট চারজন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া আরও চার-পাঁচ জনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের গুম করা হতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।’ তিনি দাবি করেন, রবিবার উচ্ছেদ অভিযানের সময় পুলিশের উপস্থিতিতে ওই এলাকায় বসবাসকারী সাঁওতালদের অস্থায়ী ঘরগুলো সাধারণ লোকজন আগুন দিয়ে পুড়ে দেয়। সাঁওতাল পল্লীর রুমিলা কিশকু বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ কষ্টের টাকা দিয়ে মিলের জমিতে ঘর তুললাম, তা ভেঙে দিল। এখান থেকে পুরান বাড়িতে গেলাম। সেখানেও হামলা চালিয়ে গরু-ছাগল লুট করল। আমরা শিশু-বৃদ্ধদের নিয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছি। আমাদের সাহায্য দরকার।’ রবিবার গোবিন্দগঞ্জে রংপুর চিনিকলের জমিতে আখ কাটা কেন্দ্র করে পুলিশ ও সাঁওতালদের সংঘর্ষে পুলিশসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হন। তাদের মধ্যে তীরবিদ্ধ হন নয় পুলিশ আর গুলিবিদ্ধ হন চার সাঁওতাল। এ ঘটনায় গোবিন্দগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক কল্যাণ চক্রবর্তী বাদী হয়ে ওইদিন রাতে ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে ৩৫০ জনকে আসামি দেখিয়ে মামলা দায়ের করেন।

জমি উদ্ধার সংহতি কমিটির সহসভাপতি ফিলিমন বাস্কে বলেন, চিনিকল কর্তৃপক্ষ জমি অধিগ্রহণের সময় জমির মালিকদের সঙ্গে চুক্তি করে। সেখানে উল্লেখ ছিল কখনো ওইসব জমিতে আখ ছাড়া অন্য ফসলের চাষ হলে প্রকৃত মালিকদের জমি ফেরত দেওয়া হবে। কিন্তু কিছুদিন ধরে ওইসব জমিতে ধান ও তামাক চাষ হচ্ছে। অথচ জমি ফেরত দেওয়া হয়নি। তাই দখলের ঘটনা ঘটেছিল। রংপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল আউয়াল বলেন, ১৯৬২ সালে জমি অধিগ্রহণের সময় চুক্তিনামায় বলা হয়, কখনো চিনিকল বা খামার বন্ধ হলে সে ক্ষেত্রে ওইসব জমি সরকারের কাছে চলে যাবে। অথচ এলাকার কতিপয় সুবিধাবাদী ব্যক্তির উসকানিতে সাঁওতালরা অবৈধভাবে চিনিকলের জমি দখল করেন। ৬ নভেম্বর চিনিকলের রোপণ করা আখ বীজ হিসেবে সংগ্রহের জন্য কাটতে গেলে সাঁওতালরা বাধা দিলে সংঘর্ষ বাধে। পরে অবৈধ দখলদারদের জমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়। এসব জমিতে এখন থেকে আখ চাষের পাশাপাশি ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বেশকিছু প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর