রবিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ব্যাংকের অর্থে প্রমোদ ভ্রমণ

আলী রিয়াজ

ব্যাংকের অর্থে প্রমোদ ভ্রমণ

ব্যাংকের অর্থে প্রমোদ ভ্রমণ করছেন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক-কর্মকর্তারা। শীর্ষ কর্মকর্তারা ছুটির দিনেও শাখা পরিদর্শনের নামে বিল নিচ্ছেন ব্যাংক থেকে। সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানোর উদ্যোগ নিলেও তা ঠেকানো যাচ্ছে না। নামে-বেনামে বিভিন্ন খাতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন খাতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করছে। প্রতি মাসে একেকটি ব্যাংকের কোটি টাকার ওপর বিবিধ ও ভ্রমণ ভাতা বাবদ খরচ হয়। এসব খরচের বিল, ভাউচারের কোনো অডিটও হয় না। ব্যাংকের কর্মকর্তা ছাড়াও পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা বিভিন্ন খাত দেখিয়ে বিল নিচ্ছেন প্রতিষ্ঠান থেকে। অতিরিক্ত বিবিধ খরচের লাগাম টানতে বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েক দফা নোটিস জারি করেছে। এর পরও বন্ধ করা যাচ্ছে না অতিরিক্ত ব্যয়। সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের পুরো পরিচালনা পর্ষদের সব সদস্য চট্টগ্রামে একটি শাখা ব্যবস্থাপক সম্মেলনে গিয়েছেন কোটি টাকা ব্যয় করে। নিয়ম ভঙ্গ করে পুরো পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ওই সম্মেলনে অংশ নিয়েছে। ব্যাংকের সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী বিভাগীয় শাখা ব্যবস্থাপক সম্মেলনে উপস্থিত থাকেন প্রতিষ্ঠানের জিএম অথবা ডিএমডি পর্যায়ের কর্মকর্তা। বৃহৎ আকারে সম্মেলন হলে সেখানে এমডি উপস্থিত থাকেন। কিন্তু সম্প্রতি চট্টগ্রামে রূপালী ব্যাংকের বিভাগীয় শাখা ব্যবস্থাপক সম্মেলনে গিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মনজুর হোসেন, পরিচালক অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশিদ, আবু সুফিয়ান,    ড. সেলিম উদ্দিন, ব্যারিস্টার জাকির আহম্মদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেবাশীষ চক্রবর্ত্তী ছাড়াও একাধিক জিএম। ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ পুরো পর্ষদ সদস্য ঢাকা থেকে বিমানে গিয়ে অংশ নেন ওই অনুষ্ঠানে। চট্টগ্রামের হোটেল আগ্রাবাদে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে অংশ নিয়ে ঢাকায় ফিরেছেন তারা বিমানযোগেই। এই সফরে ব্যাংকের ব্যয় দেখানো হয়েছে প্রায় দুই কোটি টাকা। বর্তমান এমডি যোগ দেওয়ার পর রূপালী ব্যাংকের বিবিধ খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েক গুণ। সূত্রে জানা গেছে, একটি ব্যবসায়ী গ্রুপের প্রকল্প পরিদর্শনে যাওয়ার জন্য পর্ষদ সদস্যদের নিয়ে এমডি আতাউর রহমান প্রধান চট্টগ্রামে যান। প্রকল্প পরিদর্শনের জন্য বিভাগীয় শাখা ব্যবস্থাপক সম্মেলন আয়োজন করে পুরো ব্যয় ব্যাংকের মাধ্যমে বহন করা হয়েছে। ঘটনা জানার জন্য রূপালী ব্যাংকের এমডি আতাউর রহমান প্রধানকে ফোন দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শাখা ব্যবস্থাপক সম্মেলনে ব্যাংকের জিএম পর্যায়ের কর্মকর্তারাই থাকেন। অনেক সময় এমডি থাকতে পারেন। তবে পর্ষদ সদস্যরা এসব সম্মেলনে থাকা আইন ভঙ্গ না হলেও তা না থাকাই ভালো। ব্যাংকের সুশাসনের জন্য পর্ষদ সদস্যরা শাখা ব্যবস্থাপক সম্মেলনে না থাকাই ভালো। এমন একটি শাখা সম্মেলনে পর্ষদের চেয়ারম্যান, এমডিসহ একাধিক সদস্যের উপস্থিত থাকা ব্যাংকের অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়। রাষ্ট্রায়ত্ত আরেক প্রতিষ্ঠান প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের কর্মকর্তারা গ্রামের বাড়িতে গেলেও ব্যয় দেখানো হয় প্রতিষ্ঠানের অর্থে। ব্যাংকসূত্রে জানা গেছে, গত দুর্গাপূজার সময় ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্জয় কুমার বণিক মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী ও ফরিদপুর শাখা পরিদর্শন করেন। সরকারি ছুটির দিনেও তিনি শাখা পরিদর্শনে ছিলেন। প্রতিষ্ঠানের গাড়ি নিয়ে তিনি এসব শাখায় গিয়েছেন। এমনকি শুক্র ও শনিবার ছুটির দিনেও ব্যাংকের শাখা পরিদর্শন করে বিল করেছেন। জানা গেছে, ওই সময় তিনি নিজের গ্রামের বাড়ি গিয়েছেন। তবে ব্যাংক শাখা পরিদর্শন দেখিয়ে প্রতিদিন আলাদা ভাতা নিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রতিদিন কর্মকর্তাদের ট্রেনিং চলে। প্রতি ট্রেনিংয়ে ২৫ জনকে উপস্থিত দেখিয়ে প্রতি জন বাবদ ২৫০০ টাকা করে বিল করে তা আত্মসাৎ করছেন শীর্ষ কর্মকর্তারা। এমনকি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নামে প্রতিদিন দৈনিক পত্রিকা রাখার নিয়ম না থাকলেও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নামে তা নেওয়া হয়। প্রতি জন কর্মকর্তা মাসে প্রায় ৩ হাজার টাকা করে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করছেন।

ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানের এমডি ও ডিএমডির পিএস আনিসুজ্জামানই এসব বিল, ভাউচারের তদারকি করেন। বেশির ভাগ কর্মকর্তা বলেছেন, জনসংযোগ বিভাগের জন্য পত্রিকা রাখা হলেও অন্য কর্মকর্তা তা পান না। পুরো অর্থ আত্মসাৎ করছেন আনিসুজ্জামান। বাংলাদেশ ব্যাংক অতিরিক্ত ব্যয় কমানোর জন্য বিশেষ নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর এমডি থেকে শুরু করে জিএম পর্যন্ত সবাই লন্ড্রি ভাতাও উত্তোলন করছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব ভাতা বন্ধ করার নির্দেশ দিলেও কোনো ব্যাংকে এখনো বন্ধ হয়নি।

সর্বশেষ খবর