শিরোনাম
রবিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

নদীর নামটি ময়ূরাক্ষী

মেহের আফরোজ শাওন

নদীর নামটি ময়ূরাক্ষী

হুমায়ূন আহমেদের প্রতিটি কাজেই কিছু স্মৃতিকথা রয়েছে। হোক তা নাটক, সিনেমা কিংবা গান। এ রকমই একটি গান ‘নদীর নামটি ময়ূরাক্ষী’। আজ মনে পড়েছে সেই স্মৃতি। ‘বাইরে যাব মরতে! থাকব আমি গর্তে’— এই মতে বিশ্বাসী হুমায়ূন নিজেকে গর্তজীবী হিসেবে পরিচয় দিতেন। দাওয়াত কিংবা সামাজিক অনুষ্ঠানে যাওয়া তো বহু দূরের কথা, ‘চলো না দুজনে মিলে আজ কোথাও বেড়িয়ে আসি’ আমার এই কথায় গম্ভীর ভঙ্গিতে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে হুমায়ূন সাহেব বলতেন, ‘চলো নিউমার্কেটে কাঁচাবাজারে যাই। বড় একটা চিতল মাছ কিনব। তুমি টমেটো দিয়ে মাখা মাখা ঝোল করে রান্না করো। রাতে সবাই মিলে খাব।’ পুত্র নিষাদের জন্মের পর সারা দিন বাসায় থাকতে থাকতে বিষণ্নতায় ভুগতে শুরু করেছিলাম আমি। একদিন সকালে নিজ থেকেই হুমায়ূন বললেন পুত্রসহ তৈরি হয়ে নিতে, বাইরে যাব। আমি তো মহাখুশি। শাড়িটাড়ি পরে সেজেগুজে একেবারে হুলুস্থূল কাণ্ড। তিনজনে গাড়িতে উঠলাম। আমার মন ফুরফুরে। ওমা! গাড়ি তো যাচ্ছে নিউমার্কেটের দিকে! ঘুরে ঘুরে ছয় মাসের পুত্রকে কয়েক রকমের মাছ চেনালেন হুমায়ূন। প্রচুর বাজার নিয়ে গাড়িতে উঠলাম আমরা। এবার কোন রেসিপিতে কোনটা আজ রাঁধতে হবে সেই বয়ান শুরু করলেন হুমায়ূন সাহেব। আমার রাগ উঠে গেল। শুরু হলো কথাকাটাকাটি। একপর্যায়ে আমি বললাম, আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না। আমি দুই তিনটা দিন মা’র বাড়িতে কাটিয়ে আসতে চাই। হুমায়ূন বললেন, ‘মা’র বাড়ি গিয়ে বসে বসে ডিম পাড়ো গে যাও।’ এর পরের ঘটনাটুকু এস আই টুটুলের কাছ থেকে শোনা। “একদিন দুপুরবেলা হুমায়ূন স্যারের তলব। ‘টুটুল তাড়াতাড়ি আসো’। বেশ অবাকই হলাম। সচরাচর সন্ধ্যার পরই তলব করেন স্যার। দ্রুত দখিন হাওয়ায় পৌঁছে দেখি বিষণ্ন মুখে বসে আছেন স্যার। খালি গা, বুকের কাছে গিঁঠ দিয়ে লুঙ্গি পরা। আমাকে দেখে চিকন গলায় বললেন, ‘টুটুল তোমার বুবু তো চলে গেছে’ (মেহের আফরোজ শাওনকে আমি বুবু ডাকি)। আমি অবাক বলেন কী স্যার। স্যার এবার আরও চিকন গলায় বললেন, ‘কুসুমকে আনার ব্যবস্থা কর’। আমার সাফ জবাব আমি পারব না স্যার। স্যারের কথায় যা বুঝলাম, অনেক দিন কোথাও বেড়াতে না নিয়ে যাওয়ায় বুবুর মন খারাপ। ফলাফল দুজনের মন কষাকষি এবং বুবুর গৃহত্যাগ। স্যার আমার হাতে একটা কাগজ দিয়ে বললেন, ‘এই গানটা এই মাত্র লিখেছি। অতি দ্রুত এটার সুর কর। তারপর এই গান শুনিয়ে তোমার বুবুকে ফিরায়ে আনো’। আমি বাসায় গিয়ে গানটির সুর করলাম। বুবুকে ফোন করে বললাম, দখিন হাওয়ায় ফিরতে হবে না। শুধু ১০ মিনিটের জন্য এসে আমার একটা গান শুনে যাও। সন্ধ্যায় বুবু এলো। স্যার আর বুবু, কেউ কারও সঙ্গে কথা বলে না। দুজন দুই দিকে মুখ করে বসে আছে। আমি দুপুরের ঘটনা বলে গিটার বাজিয়ে গানটা শুরু করলাম। দুই লাইন যেতেই দেখি বুবুর চোখে পানি। স্যার হাত বাড়িয়ে দিলেন, বুবু উঠে এসে স্যারের হাত ধরে পাশে বসল। আমার চোখে পানি এসে গেল। এরপর যতবার এই গান গেয়েছি ততবার এই একই দৃশ্য দেখেছি স্যার আর বুবুর।”

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর