সোমবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

মেট্রোরেল প্রকল্পে অর্থ ছাড় জটিলতা

কমিশন বেশি চায় ব্যাংক অব টোকিও

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

মেট্রোরেল প্রকল্পে অর্থ ছাড় জটিলতা

ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় রাজধানীতে যে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে, এর অর্থছাড় নিয়ে কিছুটা জটিলতা দেখা দিয়েছে। জাপানের ব্যাংক অব টোকিও-মিটশুবিসি ঋণের কিস্তি ছাড়ে ট্রান্সফার ফি বাবদ যে কমিশন দাবি করছে, সেটিকে আগের চেয়ে অনেক বেশি বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এরই মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে (ইআরডি) বিষয়টি অবহিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এটি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ১৯ অক্টোবর একটি সভাও করেছে ইআরডি। সেখানে কমিশনের হার বেশি ধরায় আপত্তি তুলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তা যেন কমানো হয়। তবে ব্যাংক অব টোকিও-মিটশুবিসি প্রতিনিধি সভায় জানিয়েছে, তারা অর্থছাড়ের ক্ষেত্রে যে ট্রান্সফার ফি নির্ধারণ করেছে, সেটি সব দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বাংলাদেশের জন্য পৃথক কোনো সিদ্ধান্ত তারা নিতে পারবে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এ প্রকল্পে ঋণদাতা সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) ঢাকা অফিসের প্রতিনিধি সৌমেন দাশগুপ্ত কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে ইআরডির বৈঠকে উপস্থিত থাকার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘বৈঠকে ছিলাম, তবে এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। ঘটনাটি ব্যাংক দুটির নিজস্ব বিষয়। এ ব্যাপারে ব্যাংক অব টোকিও-মিটশুবিসি অথবা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জিজ্ঞেস করলে ভালো হয়।’

ইয়েন লোনের আওতায় (৩৭তম ওডিএ লোন প্যাকেজ) বাংলাদেশের ছয়টি মেগা প্রকল্পে সহায়তা করছে জাপান। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ঢাকা মাস রোড ট্রান্সপোর্টের (এমআরটি) উন্নয়ন প্রকল্প (মেট্রোরেল)। জুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এরই মধ্যে প্রকল্পের কাজও শুরু হয়েছে। প্রকল্পটিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২২ হাজার কোটি টাকা। মোট ব্যয়ের ১৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা অর্থায়ন করছে জাইকা এবং অবশিষ্ট টাকা যাবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে।

ইআরডি সূত্র জানায়, জাইকার কাছ থেকে ঋণ হিসেবে যে সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা পাওয়া যাবে, সেটি জাপানের ব্যাংক অব টোকিও-মিটশুবিসি থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে স্থানান্তর হবে। এ জন্য সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ওই অর্থছাড়ে একটি চুক্তির খসড়া পাঠিয়েছে জাপানের ব্যাংকটি। ওই খসড়ায় তারা প্রতি কিস্তি অর্থ ছাড়ের ক্ষেত্রে ১/২০ শতাংশ হার বা মোট কিস্তির দুই হাজার ভাগের এক ভাগ অর্থ ট্রান্সফার ফি হিসেবে চেয়েছে। এ হারকে অনেক বেশি উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংক ইআরডিতে লেখা চিঠিতে জানিয়েছে, এর ফলে অনেক বেশি পরিমাণ অর্থ কমিশন হিসেবে চলে যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের  কর্মকর্তারা বলেন, ‘এর আগে এ ধরনের ঋণে অর্থ স্থানান্তরে যে ফি ছিল, সেটি ১/৩০ শতাংশ অর্থাৎ মোট কিস্তির তিন হাজার ভাগের এক ভাগ ফি ধরা হতো। এবার সেটি ১/২০ বা দুই হাজার ভাগের এক ভাগ ধরা হয়েছে। অর্থাৎ আগের চেয়ে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বেশি ফি  পরিশোধ করতে হবে। এটি অবশ্যই কমিশন হিসেবে অনেক বেশি। সে কারণে আমরা বিষয়টি ইআরডিকে জানিয়েছি।’ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসি) এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা যেহেতু মধ্যম আয়ের দিকে যাচ্ছি, সে কারণে তারা এখন আর আগের কমিশনে টাকা দিতে চায় না। আমরা বিষয়টি নিয়ে ইআরডিতে বৈঠক করেছি। তারা কিস্তি ছাড়ের ট্রান্সফার ফি কমাবে না। তবে প্রতি কিস্তি ছাড়ে সর্বোচ্চ যে ট্রান্সফার ফির সীমা রয়েছে, সেটি যাতে বাড়ানো না হয়, আমরা সে প্রস্তাব দিয়েছি জাপানের ব্যাংকটিকে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে অর্থ স্থানান্তরের বিষয়ে তারা আগে যে চুক্তির খসড়া পাঠিয়েছিল, সেটিও আমরা নতুন করে পাঠাতে বলেছি।’ প্রসঙ্গত, মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত। তবে ২০১৯ সালের মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত এবং ২০২০ সালে মতিঝিল পর্যন্ত চালু করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে সরকার। এরই মধ্যে ওই লাইনের অবকাঠামোর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই লাইনে ১৬টি স্টেশন হবে। স্টেশনের স্থানগুলো হচ্ছে উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সচিবালয় ও মতিঝিল। এ লাইনে মেট্রোরেল চালু হলে ঘণ্টায় উভয় দিক থেকে ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা যাবে। আর বাস্তবায়নাধীন বিআরটি লাইন দিয়ে গাজীপুর থেকে এয়ারপোর্ট সড়কে ঘণ্টায় ২৫ হাজার যাত্রী পরিবহন সম্ভব হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর