সোমবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ভারতীয় নিষিদ্ধ রুপি নিয়ে সিদ্ধান্তহীন বাংলাদেশ ব্যাংক

রমরমা হুন্ডি ব্যবসা

আলী রিয়াজ

ভারত সরকারের নিষিদ্ধ-ঘোষিত রুপি নিয়ে সিদ্ধান্তহীন বাংলাদেশ ব্যাংক। সারা দেশে কী পরিমাণ ভারতীয় রুপি রয়েছে এরও কোনো হিসাব নেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। এমনকি ব্যাংকগুলোর হাতে কত মুদ্রা রয়েছে তাও সঠিকভাবে জানে না কেউ। আন্তর্জাতিক লেনদেনে রুপির ব্যবহার না থাকায় কোনো ব্যাংক বা মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকরা তা ভাঙাতে পারছেন না। ভারতে ভ্রমণরত বাংলাদেশিরা ছাড়াও হাতে থাকা রুপি নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছে দেশের সাধারণ মানুষ। ফলে দেশের অভ্যন্তরে গড়ে উঠেছে হুন্ডি চক্র, যারা নিষিদ্ধ-ঘোষিত ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট কিনছে অর্ধেক দামে। সাধারণ মানুষও উপায় না পেয়ে হুন্ডি চক্রের কাছে বিক্রি করছে এসব নোট। ভারতে চিকিৎসার জন্য যাওয়া ব্যক্তিরা, এমনকি হাতে থাকা বিপুল পরিমাণ অর্থ পরিবর্তন করতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা। হুন্ডির মাধ্যমে পুরো অর্থ পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

জানা গেছে, ভারত সরকার ৮ নভেম্বর ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট নিষিদ্ধ করে। এসব নোট ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিবর্তন করা যাবে সে দেশের ব্যাংকে। কিন্তু বাংলাদেশি নাগরিকদের হাতে থাকা নিষিদ্ধ নোট নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। ভারতে থাকা বাংলাদেশি নাগরিকরা এখনো নোট পরিবর্তন করতে পারছেন না। দেশের অভ্যন্তরে নাগরিকদের হাতে থাকা নোটের কী হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সবাই। নিষিদ্ধ-ঘোষিত এসব রুপির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। জানা গেছে, ব্যাংকগুলোর হাতে রুপির প্রায় ২০ লাখ নোট রয়েছে, যেগুলো পরিবর্তন করতে হবে। তবে এটি শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে। অন্যান্য ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কাছে কী পরিমাণ ভারতীয় মুদ্রা রয়েছে, এর কোনো তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে নেই। এসব মুদ্রা নিয়ে করণীয় নির্ধারণ করতে বাংলাদেশ ব্যাংক এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ব্যাংকে যে মুদ্রা রয়েছে তা দ্রুত পরিবর্তন করার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। সাধারণ মানুষের হাতে যেসব মুদ্রা রয়েছে তা নিয়ে আমরা এখনো কোনো চিন্তা করিনি। তবে কারও দুশ্চিন্তার কারণ নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি পদক্ষেপ নেবে।’ এদিকে দেশের ভেতর কোনো ব্যাংক বা মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান এ নোট পরিবর্তন করে না। সাধারণত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অনুমোদিত কয়েকটি এডি শাখার মাধ্যমে ভারতীয় রুপির এক্সচেঞ্জ করা যায়। সে ক্ষেত্রে ডলার ব্যবহার করা হয়। ভারতীয় রুপির মাধ্যমে সরাসরি লেনদেন বা মুদ্রা পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। ভারত সরকার নোট নিষিদ্ধ করার পর বাংলাদেশের হুন্ডি ব্যবসায়ীরা বড় সুযোগ পেয়েছেন। বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জ কোম্পানি, আমদানিনির্ভর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিরাও জড়িত হয়ে পড়ছে এই হুন্ডি কারবারিতে। একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হুন্ডি কারবারিরা নিষিদ্ধ রুপির নোট ক্রয় করছেন অর্ধেক দামে। অর্থাৎ ৫০০ রুপির একটি নোট তারা কিনছেন ২৫০ টাকায়, ১০০০ রুপির নোট ৫০০ টাকায়। অনিশ্চয়তায় থাকা অনেক গ্রাহক বলছেন, অর্ধেক দামে হলেও বিক্রি করাটাই এখন সমস্যা। তাই বাধ্য হয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। মতিঝিলে থাকা বিভিন্ন বৈদেশিক মুদ্রার এক্সচেঞ্জ বুথে গিয়ে দেখা গেছে, অনেক গ্রাহক আসছেন ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বিক্রি করতে। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রুপি বিনিময় করা হয় না। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারাই এখন হুন্ডির সঙ্গে জড়িত বলে তথ্য রয়েছে। এ বিষয়ে মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল আমিন বলেন, বাংলাদেশে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর কাছে খুব বেশি ভারতীয় মুদ্রা নেই। সরকারি ব্যাংকগুলোতে কিছু রয়েছে। এগুলো ভারত সরকার গ্রহণ না করার কোনো কারণ নেই। এখন সাধারণ মানুষের কাছে যেসব নিষিদ্ধ মুদ্রা রয়েছে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি উদ্যোগ নিতে পারে। তবে উদ্যোগটি দ্রুত নিতে হবে। ইতিমধ্যে হুন্ডির মাধ্যমে এসব নোট চলে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের ব্যাংকে সাড়ে তিন লাখের মতো ভারতীয় মুদ্রা রয়েছে। এর মধ্যে ৫০০ ও ১০০০ নোটের পরিমাণ খুব কম। আর সব ব্যাংকে যা আছে তা পরিবর্তন করতে কোনো সমস্যা হবে না। সাধারণ মানুষের হাতে যা রয়েছে সেগুলো সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে পরিবর্তন করার একটি সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্ভবত নিয়েছে। তাই সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হবে না।’

সর্বশেষ খবর