সোমবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিশ্বজুড়ে রোগী বাড়ছে প্রতিরোধ সচেতনতায়

ডায়াবেটিস দিবস আজ

ফরহাদ উদ্দীন

বিশ্বজুড়ে ক্রমাগত হারে বাড়ছে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা। সারা বিশ্বে প্রায় ৪১ কোটি ৫০ লাখ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। ২০৪০ সালের মধ্যে বিশ্বে প্রায় ৬৪ কোটি ২০ লাখ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রতি বছর প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করছে।

২০১৫ সালে ডায়াবেটিস রোগীর মোট সংখ্যা অনুসারে পৃথিবীতে বাংলাদেশের অবস্থান দশম। সচেতনতা ও নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ডায়াবেটিস রোগীর কিডনি, চোখ, হূিপণ্ড, পা ইত্যাদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যথাযথ চিকিৎসার অভাবে অসংখ্য মানুষ অন্ধত্ব ও পঙ্গুত্ববরণ করা ছাড়াও অকালে মৃত্যুবরণ করছে।

আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের (আইডিএফ) প্রতিবেদন এবং ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ সম্ভব।

‘বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির’ সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দেশে অব্যাহত নগরায়ণ, পরিবর্তিত জীবনযাপন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং কায়িক পরিশ্রমের অভাবে প্রায় সব শ্রেণির মানুষের মধ্যেই মোটা হয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। সাধারণত শরীর স্থূল বা মোটা হয়ে গেলে ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যায়। এ অবস্থায় ডায়াবেটিস ছাড়াও শরীরে অন্যান্য জটিলতা দেখা দেয়। তিনি বলেন, ডায়াবেটিস প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন সচেতনতা। শুধু আমাদের নিজেদের সচেতন হলেই হবে না, অন্যদেরও সচেতন করতে হবে। আইডিএফের তথ্য অনুযায়ী, উন্নত দেশের তুলনায় উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোতে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। আশঙ্কার বিষয়, বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগ বৃদ্ধির হার বাড়ছে। বর্তমানে দেশে ৭১ লাখেরও বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এ ছাড়া আরও প্রায় ৭১ লাখ মানুষ ডায়াবেটিস নিয়ে বসবাস করছে, যারা এ রোগে আক্রান্ত কিনা তা নিশ্চিতভাবে শনাক্ত হয়নি। এ যাবৎকালে প্রকাশিত দুটি গবেষণালব্ধ প্রবন্ধে দেখা যায়, বাংলাদেশের ২০ শতাংশের কম ডায়াবেটিস রোগী এই রোগটি নিয়ন্ত্রণে সফল হন। এমনকি ডায়াবেটিসের দীর্ঘকালীন জটিলতাগুলোতেও আমাদের ডায়াবেটিস রোগীরা বেশি ভুগছেন। বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক পরিস্থিতি হলো, এখানে অতি অল্প বয়সে মানুষ (পুরুষ-মহিলা) টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি বালক-বালিকা ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে বসবাস করছে। গবেষণায় দেখা যায়, দেশের আরও একটি বড় ঝুঁকি হলো বিপুল সংখ্যক গর্ভবতী মহিলা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। পৃথিবীতে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের হার বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি। মূলত এ দেশের মানুষের জীনগত  ত্রুটি আছে যা এই রোগের জন্য সহায়ক। গবেষণায় বলা হয়, এ দেশের মানুষের জীবনযাপন পদ্ধতি ও পরিবেশ ডায়াবেটিস হওয়ার জন্য উপযোগী। দ্রুত নগরায়ণ, অপরিকল্পিত নগরায়ণ বা অস্বাস্থ্যকর নগরায়ণ একটি বড় সমস্যা। গ্রামেও নগরায়ণের কুপ্রভাব প্রকট। যান্ত্রিক সুবিধা প্রাপ্তি, বাদ্যযন্ত্রনির্ভর জীবনযাপন আমাদের  শারীরিক শ্রমবিমুখ বা কুঁড়ে জাতিতে পরিণত করছে। এখন কম বয়সী থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাই দৈহিক স্থূলতায় ভুগছে। গবেষণায় তুলে ধরা হয়, দেশের মানুষের বর্তমান খাদ্যভ্যাস স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। মানুষকে শর্করা ও চর্বিনির্ভর খাদ্যের বলয় থেকে বের করার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। ডায়াবেটিস থেকে জাতিকে রক্ষা করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও ব্যর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া ডায়াবেটিসের কারণে দেশে অর্থনৈতিক চাপ বাড়ছে।

এক হিসাবে দেখা গেছে, কেবল ডায়াবেটিসের জটিলতা কমাতে পারলে দেশে স্বাস্থ্য খাতেই বছরে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা (স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাজেটের ১১%) পর্যন্ত ব্যয় কমানো সম্ভব।

কর্মসূচি : বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সংগঠন দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। জনগণের মধ্যে ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে ‘বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি’ আয়োজিত তিন দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে— বারডেম হাসপাতালে আজ সকাল ৮টা থেকে ফ্রি হার্ট ক্যাম্প, সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে ও ধানমন্ডি রবীন্দ্র সরোবরসহ রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বিনামূল্যে ডায়াবেটিস নির্ণয় করা হবে। ১৬ নভেম্বর ওয়ারী থেকে শোভাযাত্রা এবং আগামী ১৮ নভেম্বর শুক্রবার সকাল ১০টায় শাহবাগ পাবলিক লাইব্রেরিতে শিশু চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর