মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
৯০ কার্যদিবস অনুপস্থিত

সংসদে জাপা এমপি হান্নানের আসন শূন্য ঘোষণা হয়নি

আহমদ সেলিম রেজা

যুদ্ধাপরাধের মামলায় আটক জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য এম এ হান্নান সংসদ অধিবেশনে ধারাবাহিকভাবে নব্বই কার্যদিবস গর হাজির রয়েছেন। এ অনুপস্থিতির জন্য তিনি সংসদের কোনো অনুমোদনও নেননি। সেক্ষেত্রে সংবিধানের ৬৭(১)(খ) অনুচ্ছেদ মোতাবেক তার সংসদীয় আসন শূন্য হয়ে যাওয়ার কথা। তবে সংসদ সচিবালয় থেকে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। নির্বাচন কমিশন থেকেও কোনো ঘোষণা আসেনি। এ বিষয়ে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী কোনো মন্তব্য করতে নারাজ। এম এ হান্নান দশম জাতীয় সংসদে ময়মনসিংহ-৭ আসনে নির্বাচিত। ১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে গত বছরের ১ অক্টোবর তাকে আটক করা হয়। এখন তিনি কারাগারে অন্তরীণ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে গত ৩০ অক্টোবর আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ১ অক্টোবর থেকে দশম সংসদ পাঁচবার অধিবেশনে বসেছে। এর মধ্যে অষ্টম অধিবেশন ১২, নবম অধিবেশন ২৭ দিন। দশম ৯ ও একাদশ অধিবেশন চলে ৩২ কার্যদিবস। দ্বাদশ অধিবেশন চলে মোট ১০ কার্যদিবস। পরিসংখ্যান অনুযায়ী দ্বাদশ অধিবেশনের সমাপনী দিনেই এম এ হান্নানের বিনা নোটিসে সংসদে গর হাজির থাকার নব্বই কার্যদিবস পূরণ হয়ে গেছে। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তুরীন আফরোজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সংবিধানের ৬৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোনো সংসদ সদস্যের আসন শূন্য হইবে, যদি সংসদের অনুমতি না লইয়া তিনি একাদিক্রমে নব্বই বৈঠক দিবস অনুপস্থিত থাকেন।’ সে হিসেবে এম এ হান্নানের আসন শূন্য হয়ে গেছে। তবে এ বিষয়ে সরকারি কোনো ঘোষণা আমরা পাইনি। এখন প্রশ্ন হলো, একজন এমপি যদি একাদিক্রমে নব্বই বৈঠক-দিবস অনুপস্থিত থাকেন তবে তার জন্য সংসদের অনুমতি কবে নেবেন? অনুপস্থিতির নব্বই কার্যদিবস অতিবাহিত হওয়ার আগে না পরে? বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে অ্যাডভোকেট তুরীন আফরোজ ‘মওদুদ আহমদ বনাম আনোয়ার হোসেন খান (২০০৮) মামলার প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, এ মামলার রায়ে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ বলেছে, সংসদের অনুমতি নেওয়ার ব্যাপারটি একাদিক্রমে নব্বই বৈঠক-দিবস অনুপস্থিতি কাল অতিবাহিত হওয়ার পরই যৌক্তিক হবে। তবে কীভাবে এ নব্বই কার্যদিবস গণনা করা হবে, সে বিষয়ে সংসদের ‘রুলস অব প্রসিডিউরে’ও কিছু বলা নেই। তাহলে বিষয়টি কীভাবে সমাধান হবে জানতে চাইলে, অ্যাডভোকেট তুরীন আফরোজ ১৯৯৫ সালের হাইকোর্টের একটি বিশেষ রেফারেন্স তুলে ধরে বলেন, আপিল বিভাগ বলেছে, নব্বই বৈঠক-দিবস গণনা করার ক্ষেত্রে সংসদের দুই বৈঠক মধ্যবর্তী কাল এবং একই বৈঠক চলাকালীন সময়ে মুলতবি কাল অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। এ ছাড়া সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদে ‘বৈঠক’ শব্দটির অর্থ বলা হয়েছে, বৈঠক (সংসদ প্রসঙ্গে) অর্থ ‘মুলতবি না করিয়া সংসদ যতক্ষণ ধারাবাহিকভাবে বৈঠকরত থাকেন, সেইরূপ মেয়াদ।

সর্বশেষ খবর