মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ভারতও শুল্ক সুবিধা চায় বাংলাদেশের কাছে

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

তামাক ও অস্ত্র ছাড়া বাকি সব পণ্যে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দেওয়ার পর এবার ভারতও বাংলাদেশের কাছে শুল্ক সুবিধা চাইছে। দেশটি সাফটার আওতায় ২২৫টি পণ্য স্পর্শকাতর তালিকা থেকে প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে আসছে আগে থেকেই। এবার তারা ওই সুবিধাসহ সুনির্দিষ্টভাবে দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত খাবার, চিনি, বাইসাইকেল, কমলা, ডালিম, স্টিল বিলেট, সয়া কেক ও রেপ সিডসজাতীয় পণ্যগুলোর ওপর আরোপিত শুল্ক কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশকে। আগামীকাল বুধবার দিল্লিতে অনুষ্ঠেয় দুই দেশের বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠকে শুল্ক সুবিধার এ ইস্যুগুলো তুলবে ভারত। বৈঠকে যোগ দিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন গতকাল দিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন। এর আগে গত সপ্তাহে তিনি এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় আমাদের দিক থেকেও বেশ কিছু ইস্যু রয়েছে, যেগুলো অনেক দিন ধরেই অনিষ্পন্ন অবস্থায় আছে। আমরা সেগুলো সমাধানের অনুরোধ জানাব।’ যেসব ইস্যুতে বাংলাদেশ চাপ সৃষ্টি করবে এর মধ্যে রয়েছে— বিএসটিআই কর্তৃক স্বীকৃত মাননিয়ন্ত্রণ সার্টিফিকেট বিনা বাধায় ভারতের এলসি স্টেশনগুলোয় গ্রহণ, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকে আরোপিত কাউন্টার ভেইলিং ডিউটি (সিভিডি) প্রত্যাহার, পাটের ব্যাগ রপ্তানিতে রুলস অব অরিজিন সমস্যা দূর করা, ভারত থেকে পণ্য আমদানিতে অস্থায়ী বাধা দূর করা, স্থলবন্দর উন্নয়ন এবং খাগড়াছড়ি জেলার সীমান্তে ফেনী নদীর ওপর সেতু নির্মাণ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশের ২৭টি পণ্যের ১৬১টি পরীক্ষায় বিএসটিআই সনদ গ্রহণে স্বীকৃতি দিয়েছে ভারতের মাননিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এনএবিএল। তবে ওই স্বীকৃতির পরিপ্রেক্ষিতে বিএসটিআইর সনদ যাতে ভারতীয় শুল্ক কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করে সে ব্যাপারে দেশটিকে নোটিফিকেশন জারি করার অনুরোধ জানানো হলেও তা এখনো কার্যকর হয়নি। এর ফলে দেশটিতে কেমিক্যাল, খাদ্যপণ্য, সিমেন্ট, এমএস রড ও বস্ত্র রপ্তানিতে মানসংক্রান্ত বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা। ভারতে তৈরি পোশাক রপ্তানিতেও বাধার মুখে পড়ছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। ২০১৩ সালের মার্চে ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেটে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকে ১২ দশমিক ৩৫ শতাংশ হারে সিভিডি আরোপ করে। এর পর থেকেই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আরোপিত শুল্ক প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হচ্ছে। জানা গেছে, গত বাজেটে ভারত ওই সিভিডি আরও বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে, যা কার্যকর হলে দেশটিতে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রতিযোগিতার মুখে পড়বেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। তৈরি পোশাকশিল্পের ওপর আরোপিত সিভিডি প্রত্যাহার করা এবং পাটের ব্যাগে মেইড ইন বাংলাদেশ লেবেল না দেওয়ার ব্যাপারেও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে দুই দেশের স্থলবন্দরগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। ভারতের পাশে স্থলবন্দরগুলোয় ওয়্যারহাউস সমস্যা রয়েছে। ফলে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের আমদানিকৃত পণ্য খোলা আকাশের নিচে রাখতে হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কাঁচা পণ্য। ভারত যাতে তাদের এলসি স্টেশনগুলোয় ওয়্যারহাউসসহ আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়া অটোমেশন করে সে ব্যাপারে অনুরোধ জানানো হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ বেনাপোল স্থলবন্দরে যোগাযোগ সহজ করতে চার লেন সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। অন্য পাশে পেট্রোপোল বন্দরেও ভারতকে চার লেন সড়ক করার অনুরোধ জানানো হবে। নাকুগাঁও-ডালু, কড়ইতলী-ঘাসুয়াপাড়া, চেল্লা-শ্যালাবাজার, ইছামতি-বেলতলি স্থলবন্দরে কার পাস ইস্যু করার প্রস্তাব দেবে বাংলাদেশ। রামগড় ও তেগামুখ স্থলবন্দর কার্যকর করতে ফেনী নদীতে ব্রিজ করার জন্য ভারতকে দেওয়া প্রস্তাবের অগ্রগতি জানতে চাওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর