বুধবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

সেই ‘ধর্ষক’ রুবেল ফের গ্রেফতার, ছয় দিনের রিমান্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক

সেই ‘ধর্ষক’ রুবেল ফের গ্রেফতার, ছয় দিনের রিমান্ড

রাজধানীর বাড্ডায় গারো তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত রাফসান হোসেন রুবেলকে গ্রেফতার করেছিল র‍্যাব। পরে তাকে বাড্ডা থানা পুলিশের কাছে তুলে দেওয়া হয়। নেওয়া হয় পুরান ঢাকার আদালতে। কিন্তু আদালত প্রাঙ্গণ থেকে হাতকড়া পরা অবস্থায় পালিয়ে যান   রুবেল। পালাতে সক্ষম হলেও হাতকড়া খুলতে পারেননি তিনি। হাতকড়া আড়াল করতে হাতে কাপড় পেঁচিয়ে রেখেছিলেন। গতকাল সকালে বাড্ডা এলাকা থেকে হাতকড়া পরা অবস্থায় রুবেলকে ফের গ্রেফতার করে পুলিশ। এদিকে গতকাল রুবেলকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন বাড্ডা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বি এম মামুন। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াসির আহসান চৌধুরী ছয় দিন মঞ্জুর করেন। পুলিশের গুলশান বিভাগের ডিসি মোস্তাক আহমেদ খান দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রবিবার রুবেল আদালত থেকে বের হয়ে হাতকড়া আড়াল করে শাঁখারীবাজারের দিকে যান। পথে লেপ-তোশকের দোকান থেকে একখণ্ড কাপড় নিয়ে হাতে পেঁচিয়ে নেন, যেন হাতকড়া না দেখা যায়। পরে শাঁখারীবাজার মসজিদে গিয়ে ঢোকেন। সেখানে আসরের নামাজ পড়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে থাকেন রুবেল। বের হয়ে তার এক বন্ধুকে ফোন করে বিকাশের মাধ্যমে এক হাজার টাকা নেন। সেখান থেকে গুলিস্তান যান। পরে গ্রামীণ পরিবহনের একটি গাড়িতে বাড্ডা যান। সেখান থেকে রুবেল যান ভাটারার নূরেরচালা এলাকায়। বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তারা সাড়া না দেওয়ায় একটি নির্মাণাধীন ভবনে রাত কাটান। সোমবার সকালে তিনি ঢাকার বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরে বাসে টঙ্গীতে যান। ভিড় এড়াতে বিভিন্ন ফাঁকা স্থানে ঘোরাঘুরি করেন। পুলিশ তাকে খুঁজছে তাই তিনি কোনো হোটেলে যাননি। পথে চটপটি ও ফুটপাথ থেকে খাবার কিনে খেয়েছেন। একপর্যায়ে কোথায় যাবেন সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে সন্ধ্যায় আবার বাড্ডায় চলে আসেন। সুবাস্তু টাওয়ারের কাছে কালভার্ট-সংলগ্ন বস্তিঘরের পাশে রাত কাটান তিনি। ডিসি বলেন, বন্ধুদের সঙ্গে রুবেলের যোগাযোগের বিষয়টি জানতে পারে পুলিশ। তিনি কোথায় কোথায় গেছেন সে বিষয়েও তথ্য সংগ্রহ করা হয়। পুলিশ সাদা পোশাকে বিভিন্ন স্থানে নজরদারি করছিল। গতকাল সকালে সুবাস্তু টাওয়ারের পাশের বাসস্ট্যান্ডে রুবেলকে দেখে বাড্ডা থানার এসআই বি এম মামুন দৌড়ে তাকে জাপটে ধরেন। এসআই সাদা পোশাকে থাকায় তাকে ছিনতাইকারী বলে ফাঁসানোর চেষ্টা করেন রুবেল। কিন্তু পুলিশের অন্য সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে রুবেলের হাতে পেঁচানো কাপড় খুলে ফেলেন। রুবেলের হাতে হাতকড়া দেখিয়ে জনগণকে বিষয়টি অবহিত করে পুলিশ। পুলিশ বলছে, রুবেল উত্তর বাড্ডার মিশ্রীটোলা এলাকার মফিজ উদ্দিন ওরফে মফু মিয়ার ছেলে। তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, ডাকাতির প্রস্তুতি, মাদকদ্রব্য ও সন্ত্রাসী ঘটনায় বাড্ডা থানায় আটটি এবং রামপুরা থানায় অস্ত্র আইনের একটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় তিনি সাজাপ্রাপ্ত। ২৫ অক্টোবর বাড্ডা এলাকায় হবু স্বামীর সামনে থেকে তুলে নিয়ে এক গারো তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়। ওই ঘটনার পর ২৮ অক্টোবর বাড্ডা থানায় রুবেলকে প্রধান আসামি করে একটি মামলা হয়। ১১ নভেম্বর বিমানবন্দর স্টেশন এলাকা থেকে রুবেলকে গ্রেফতার করে পুলিশের হাতে তুলে দেয় র‍্যাব। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার জন?্য রবিবার রুবেলকে পুরান ঢাকার আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের কক্ষে নেওয়ার আগেই তিনি কৌশলে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় বাড্ডা থানার এসআই এমরানুল হাসান ও কনস্টেবল দীপকচন্দ্র পোদ্দারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

সর্বশেষ খবর