শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর

৩৮৩ চিকিৎসকের নিয়োগ ঝুলে আছে ৩০ মাস ধরে

সাখাওয়াত কাওসার

৩০ মাস ধরে ঝুলে আছে ৩৮৩ জন চিকিৎসকের নিয়োগ। ২০১৪ সালের ৭ মে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মেডিকেল অফিসার পদে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর প্রতিযোগিতামূলক সব ধরনের পরীক্ষায় পাস করার পরও নিয়োগ পাচ্ছেন না তারা। এসব চিকিৎসককে কবে নিয়োগ দেওয়া হবে এ নিয়ে স্পষ্ট করে কেউ কথা বলতে চাইছেন না। অনেকটা রহস্যচাকায় ঘুরছে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া। যদিও এরই মধ্যে শেষ হয়েছে অনেকের চাকরির বয়স। দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছেন তাদের অনেকেই। ৩৮৩ জন হতভাগা চিকিৎসকের একজন ডা. আফরিন সাদিয়া। হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেছিলেন। তবে এরই মধ্যে তার সরকারি চাকরির বয়স পেরিয়ে গেছে। গতকাল কথা হয় এ প্রতিবেদকের সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, ‘ভাই, বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করে কিছু টাকা জমিয়েছিলাম। গত বছর অক্টোবর মাসে চূড়ান্ত ফলাফল বের হওয়ার পর আগের চাকরি ছেড়ে দিই। তবে এর পর এক বছর পেরিয়ে গেছে। শেষ হয়ে গেছে জমানো টাকা। এখন চোখেমুখে অন্ধকার দেখছি।’ বরিশাল মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস শেষ করেই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের চিকিৎসা কর্মকর্তা পদে বিজ্ঞাপন দেখে আবেদন করেন সুলতানা পারভীন। লিখিত, মৌখিকসহ সব পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণও হন তিনি। এরপর এক বছর পেরিয়ে যাওয়ায় তার চোখেও রাজ্যের হতাশা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. জুলফিকার লেলিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি এখন এ বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত হলাম। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খোঁজ নিয়ে দেখব। যদি কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়া ৩৮৩ জনের নিয়োগ আটকে রাখা হয়, তা সত্যি হতাশার।’

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সরকারি কর্মকমিশন সচিবালয় (পিএসসি) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৭ মে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের ৫৩৫টি চিকিৎসা কর্মকর্তার স্থায়ী শূন্যপদ পূরণের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। গত বছর ৫ এপ্রিল লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ৮ জুলাই লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এতে ৪৬৩ জন উত্তীর্ণ হন। ১৬ থেকে ২৪ আগস্ট তাদের মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ১২ অক্টোবর প্রকাশ করা হয় চূড়ান্ত ফল। দেড় বছরের নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষে ২০১৫ সালের ১২ অক্টোবর ৩৮৩ জনকে চাকরিতে চূড়ান্তভাবে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছিল পিএসসি।

চলতি বছর ৩ জানুয়ারি তাদের পুলিশ যাচাই ফরম পূরণ করে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরে জমা দিতে বলা হয়। পরে ১ থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষ হয়। উত্তীর্ণদের জানানো হয়, শিগগিরই নিয়োগ হয়ে যাবে। সর্বশেষ মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে নানা ধরনের অভিযোগ ওঠায় থমকে যায় এই নিয়োগ প্রক্রিয়া। ৩৮৩ জনের মধ্যে ২৩ জন মুক্তিযোদ্ধা কোটার। আর এই ২৩ জনের বিষয়টি স্পষ্ট না হওয়ার কারণেই ঝুলে আছে এই নিয়োগ।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, যে কোনো সময় নিয়োগ হয়ে যাচ্ছে, এমন কথা শুনতে শুনতে এক বছর পেরিয়ে গেছে। এই চাকরির ওপর নির্ভর করে অনেকেই তাদের জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। তাদের অভিযোগ, অধিদফতরের চিকিৎসক নন এমন একটি অংশ চাইছে এই নিয়োগ যাতে না হয়। তাই নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও দীর্ঘায়িত হচ্ছে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব সিরাজুল ইসলামের কাছে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি এতটুকু বলতে চাই যে শিগগিরই তাদের নিয়োগ দেওয়া হবে।’ একই বিষয় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের পরিচালক (লাইন ডিরেক্টর) মঈনউদ্দিনের কাছে। তিনি বলেন, ‘যত দূর জেনেছি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ওই ২৩ জনের বিষয়টি সুরাহা করে ফেলেছে। তাদের প্রতিবেদন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ই এখন সিদ্ধান্ত নেবে।’

সর্বশেষ খবর