শিরোনাম
শুক্রবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

চীনের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ছে বাংলাদেশের

ছাড়িয়ে যাচ্ছে ভারতকেও ♦ আমদানি বাণিজ্যে আরও প্রধান সঙ্গী ভারত ও সিঙ্গাপুর

রুহুল আমিন রাসেল

চীনের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ছে বাংলাদেশের

ভারতকে ছাড়িয়ে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য বাড়ছে। আমদানি বাণিজ্যে বাংলাদেশের প্রধান তিন সঙ্গী চীন, ভারত ও সিঙ্গাপুর। তথ্যানুযায়ী— বাংলাদেশের মোট আমদানি বাণিজ্যের ৩২ শতাংশই চীনের সঙ্গে। এরপর দ্বিতীয়ত ভারত থেকে ১৭ শতাংশ এবং তৃতীয়ত সিঙ্গাপুর থেকে সাড়ে ৮ শতাংশ পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ। এ দেশের মোট প্রায় ৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানির বিপরীতে গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রপ্তানি বাণিজ্যের পরিমাণ ৩৭ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ৭ দশমিক ১১ শতাংশ মোট দেশজ উৎপাদন—জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে অর্থনীতিতে দাপুটে অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য দ্রুত গতিতে বাড়ছে। মধ্যআয়ের দেশ হওয়ার স্বপ্নে বিভোর বাংলাদেশ আগামী ২০২১ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করতে চায়। এ জন্যে বাংলাদেশের যেমন প্রয়োজন মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি, তেমনি প্রয়োজন সব ধরনের অবকাঠামোগত সুবিধা। এই সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সুবিধার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে দুই বন্ধু রাষ্ট্র ভারত ও চীন। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে অন্যরাও বাংলাদেশকে বাণিজ্যিক পার্টনার হিসেবে দেখছে গুরুত্বের সঙ্গে।

ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন— এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদের মতে, বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান ক্রমেই কিছুটা শক্তিশালী হওয়ার পথে। ফলে সময়ের পরিক্রমা ও আমাদের চাহিদা বিবেচনায় আমদানি বাণিজ্যের গতিপথও বদল হচ্ছে। সেখানে কখনো ভারত, কখনো চীনের সামনে এগিয়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক। সবচেয়ে বড় কথা বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আর বাংলাদেশ যেহেতু আঞ্চলিক উন্নয়নে বিশ্বাস করে, তাই এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে সবার কাছ থেকে যখন-যেমন সুবিধা পাব, তাই নেব। যুক্তরাজ্যভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান প্রাইস ওয়াটারহাউস কুপারস— পিডব্লিউসি গবেষণার তথ্যমতে, ২০৫০ সালে বিশ্বের ২৩তম বৃহৎ অর্থনীতির শক্তি হবে বাংলাদেশ। ২০১৪ থেকে ২০৫০ সাল পর্যন্ত বিশ্বে মাত্র তিনটি দেশের জিডিপির গড় প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের বেশি হবে। এই তিন দেশ হলো— বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া ও ভিয়েতনাম। মূলত একটি দেশের অর্থনীতি কতটা বড় ও শক্তিশালী, সেটি নির্ধারণে সর্বস্বীকৃত দুটি উপায় আছে। একটি হলো ক্রয়ক্ষমতার সক্ষমতার (পিপিপি) ভিত্তিতে জিডিপির আকার, অন্যটি হলো বাজার বিনিময় হারের (এমইআর) ভিত্তিতে জিডিপির আকার। দুই হিসাবেই বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নতি উঠে এসেছে। পিপিপির ভিত্তিতে ২০১৪ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ৫৩ হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার যা বিশ্বের ৩১তম বৃহৎ অর্থনীতি। ১ হাজার ২৯১ বিলিয়ন ডলারের জিডিপি নিয়ে ২০৩০ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার হবে বিশ্বে ২৯তম। ২০৫০ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার হবে বিশ্বে ২৩তম। তখন জিডিপির আকার দাঁড়াবে ৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। পিডব্লিউসি বলছে, বিশ্ব অর্থনীতিতে আগামী ৩৫ বছরে সবচেয়ে বড় দেশ হিসেবে চীনের অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে। ২০৩০ সালে এমইআরের হিসাবেও যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাবে চীন। ওই গবেষণায় জিডিপির দিক দিয়ে সবচেয়ে বড় ৩২টি দেশের অর্থনীতিকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। সে হিসাবে এখনই বিশ্বের সবচেয়ে বড় ৩২টি অর্থনীতির একটি হলো বাংলাদেশ। অপরদিকে ভারতের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠন কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ— সিআইআই বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বলছে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ২০১৮ সালে ১ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত হতে পারে। এটা বর্তমানের ৬৬০ কোটি ডলারের বাণিজ্যের দ্বিগুণের কাছাকাছি। তবে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য পুরোপুরিই ভারতের অনুকূলে। আর বড় ধরনের ঘাটতিতে আছে বাংলাদেশ।

সর্বশেষ খবর