শুক্রবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

কোথায় গেলেন মিটফোর্ডের আবাসিক সার্জন

মাহবুব মমতাজী

ঢাকার দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের চিকিৎসার নির্ভরযোগ্য স্থান স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল। প্রায় আট মাস ধরে খোঁজ মিলছে না হাসপাতালটির ক্যাজুয়ালটি ইউনিটের আবাসিক সার্জন ডা. আশরাফুন্নেসার। গত এপ্রিলের আগেই তিনি দুই মাসের জন্য ছুটি নেন। এরপর ছুটি শেষ হলেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাকে কাজে যোগ দিতে এ পর্যন্ত চারবার চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। এমনকি শোকজ করা হলেও জবাব পাওয়া যায়নি। এ পরিস্থিতিতে বেহাল-দুর্দশায় চলছে ক্যাজুয়ালটির চিকিৎসা। দীর্ঘ সারিতেও সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে রোগীরা চলে যাচ্ছেন অন্যত্র। এর সঙ্গে রয়েছে দালালের উৎপাত। যেন দালাল ছাড়া সেখানে চিকিৎসা পাওয়া কঠিন। দীর্ঘ লাইন ও চিকিৎসক রোগীকে ঠিকমতো সময় দেন না— এমন অজুহাত তুলে আগতদের বাগিয়ে নিয়ে যায় দালাল চক্র। পাশে থাকা বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের দালালদের উৎপাত চলছে কর্তৃপক্ষের নাকের ডকায়। দীর্ঘদিন এ সমস্যা থাকার পরও তা নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক রোগী। তবে দালালের উৎপাত ও আবাসিক সার্জন নিখোঁজের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. শায়রা আখতার। হাসপাতাল প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, এখানে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আড়াই থেকে তিন হাজার রোগী আসেন। আর প্রতি ১০০ রোগীর জন্য মাত্র তিনজন চিকিৎসক রয়েছেন। পরিচ্ছন্নতা কর্মী রয়েছেন ১৪১ জন। তার মধ্যে প্রায় ৩০ জন অন্যত্র নিয়োজিত। আরও জানানো হয়, অল্প কিছু চিকিৎসক দিয়ে হাজার হাজার রোগীকে সেবা দিতে বেগ পেতে হচ্ছে। সঙ্গে বাজেট বরাদ্দের দীর্ঘসূত্রতার জন্যও বাথরুম মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে চিকিৎসক-রোগী উভয়কে পোহাতে হয় চরম ভোগান্তি। সরেজমিন দেখা যায়, হাসপাতালের মূল ফটক দিয়ে ভিতরে রোগীদের প্রবেশের পরই শুরু হয় দালালদের তত্পরতা। বার বার সাধারণের মুখোমুখি হতে হয় চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা জানাতে। এভাবে প্রাইভেট ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী বাগিয়ে নেওয়ার কৌশলও কাজ করে থাকে। আর দালালিপনা চলে নিরাপত্তাকর্মীদের কব্জা (কনভিন্স) করেই। নিরাপত্তাকর্মীরা বিভিন্ন ক্লিনিকের কিছু দালাল ও ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির কাছ থেকে সপ্তাহ শেষে উপঢৌকন পান বলেও অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্টরা। বহির্বিভাগের সামনে দালাল চক্রের সদস্য মমতা, মরিয়ম, শেফালী ও নিলুফা আনাগোনা করেন। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থেকে পাঁচ বছরের ছেলে নীরবকে ডাক্তার দেখাতে আসেন তোফাজ্জল। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী ইসমত। বহির্বিভাগের টিকিট কাউন্টারে যাওয়ার পথে সামনে গিয়ে দাঁড়ান শেফালী। তিনি তোফাজ্জলকে বলেন, টিকিট কেটে ডাক্তার দেখাতে পারবেন না। অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। তার চেয়ে ১০০ টাকা দিলে তাড়াতাড়ি ভালো ডাক্তার দেখাতে পারবেন। শেফালীর কথামতো রাজি হয়ে যান তোফাজ্জল। শেফালী তাদের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব দিলেন মরিয়মের ওপর। এরপর মরিয়মের সঙ্গে সেখানকার ফটক থেকে বেরিয়ে মিটফোর্ড রোডের বাবুল ম্যানশনের দ্বিতীয় তলায় বেসরকারি হাসপাতাল বাঁধনে ডা. আমিনুল ইসলামের কাছে সন্তানকে নিয়ে যান তোফাজ্জল। ডা. আমিনুলের ভিজিটিং কার্ডে উল্লেখ আছে তিনি চর্ম, যৌন, অ্যালার্জি, মেডিসিন, শিশু ও ডায়াবেটিসে অভিজ্ঞ। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। ভিজিটিং কার্ডে দেওয়া মোবাইল ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হয় ডা. আমিনুলের সঙ্গে। তিনি ফোন না ধরে শুভ্রদেব মল্লিক নাম-পরিচয় দিয়ে ধরেন আরেক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘এখানে কী হয় না হয় তা আপনি ম্যানেজমেন্টের কাছে এসে কথা বলে দেখে যান।’ অভিযোগ রয়েছে, শুধু বাঁধন হাসপাতালেই নয়, আল আরাফাহ, ডক্টরস ও ইন্টার্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পক্ষ থেকেও মিটফোর্ড হাসপাতালে দালাল রাখা হয়েছে। মিটফোর্ড হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. শায়রা আখতার জানান, এ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটির দশা খুবই বেহাল। সেখানকার আবাসিক সার্জনের কোনো খোঁজ নেই। প্রায় আট মাস ধরে তিনি নিরুদ্দেশ।

 চারবার চিঠি ও শোকজের পরও তার হদিস মিলছে না। দালালের উৎপাতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি অস্বীকার করার উপায় বা অবকাশ নেই। বিধি আছে সরকারি হাসপাতালের ৫০০ গজের মধ্যে বেসরকারি হাসপাতাল থাকতে পারবে না। কিন্তু তাদের এ অনুমতি প্রশাসন কেন দেয়? এই হাসপাতালের ঠিক গেটের সামনেই বেসরকারি হাসপাতালগুলো করা হয়েছে। এখানকার ডাক্তারস্বল্পতার কারণে রোগীদের অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে দেখাতে হয়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে দালালরা তাদের বাগিয়ে নিয়ে যায়।

সর্বশেষ খবর