শিরোনাম
শনিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
উৎসবমুখর লিট ফেস্ট

কেন্দ্রবিন্দুতে নাইপল

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

কেন্দ্রবিন্দুতে নাইপল

সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী ডি এস নাইপল গতকাল সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমির প্রধান মিলনায়তনে বক্তব্য দেন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঢাকা লিট ফেস্টের দ্বিতীয় দিন গতকাল ছুটির দিন লেখক ও পাঠকদের মিলনমেলায় পরিণত হয় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ। প্রিয় লেখকের কথা শোনা, কাছ থেকে দেখা ও সেলফি তুলে স্মৃতির পাতাকে সমৃদ্ধ করা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন অনুষ্ঠানে আগত সাহিত্যানুরাগীরা। বিশ্বসাহিত্যের রস আস্বাদনের এই উৎসবটি বাংলা একাডেমিকে এক টুকরো উল্লাসের আঙ্গিনায় পরিণত করেছে। উৎসব প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখার পাশাপাশি বইয়ের স্টল থেকে বইও কেনেন পাঠক ও লেখকরা।  এবারের উৎসবে ১৮টি দেশের ৬৬জন বিদেশি সাহিত্যিক এসেছেন আর দেশের সাহিত্যিকদের মধ্যে ছিলেন দেড় শতাধিক। তবে ত্রিনিদাদের নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক ভিএস নাইপলই রয়েছেন এবারের ঢাকা লিট ফেস্টের কেন্দ্রবিন্দুতে। এটা প্রতীয়মান হয়েছে বাংলা একাডেমিতে আগত অগণিত সাহিত্যপ্রেমীদের উপস্থিতিতে। গতকাল লিট ফেস্টের দ্বিতীয় দিনেও নোবেল বিজয়ী এই সাহিত্যিকের অধিবেশনটিই ছিল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। আহসান আকবরের সঞ্চালনায় ‘দ্য রাইটার অ্যান্ড দ্য ওয়ার্ল্ড’ শীর্ষক এই অধিবেশনে স্ত্রী লেডি নাদিরা নাইপলকে সঙ্গে নিয়ে যোগ দেন ভিএস নাইপল। এতে ভিএস নাইপল বলেন, ‘আমি লেখক হতে চেয়েছিলাম, কিন্তু কি লিখব, তার কিছুই জানতাম না। আমি বুঝতে পারলাম, এর জন্য আমাকে কাঠখড় পোড়াতে হবে। শুরুতে ব্যাপারটা বিব্রতকর ছিল। ৮৪ বছর বয়সী এ সাহিত্যিক বেশ ধীর গলায় বলেন, ‘লন্ডনের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতাম। নিজের ব্যাপারে নিজেই বিরক্ত হতাম। এক সময় বিবিসির লন্ডন অফিসে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করতে গেলাম। টাইপরাইটারে বসে লিখতে শুরু করলাম। নিজেকে বললাম, আমি ততক্ষণ পর্যন্ত এ ঘর ত্যাগ করব না, যতক্ষণ না পর্যন্ত জানি আমার লেখাটি কি দাঁড়াচ্ছে। এভাবেই নিজের প্রত্যয়ের কথা ব্যক্ত করলেন ভিএস নাইপল। সাহিত্যানুরাগীদের উপচেপড়া ভিড়ে একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে এ সময় তিল ধারণের জায়গা ছিল না।  নাইপল আরও বলেন, আসলে লেখালেখি পাগলামি ছাড়া আর কিছুই না। আবার এটাও বলতে হয়, কোনো কিছুই খুব সহজ না। অনেক চিন্তাভাবনা করে, তারপরেই একটা কিছু দাঁড়ায়। একটা সময় আমি বুকপকেটে নোটবই নিয়ে ঘুরতাম এবং যাদেরকে ভিন্নরকম মনে হতো, তাদের সঙ্গে কথা বলতাম এবং সেগুলো লিখে রাখতাম। আমার অনেক লেখায় আমার বাবার জীবনের কাহিনীর ছাপ রয়েছে। ৩৭টি অধিবেশন দিয়ে সাজানো হয় দ্বিতীয় দিনের আয়োজন। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এ উৎসবের আয়োজন করেছে যাত্রিক। গতকাল দুপুর দুইটায় মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘সাহিত্য যখন সবার’ শীর্ষক অধিবেশন । এই পর্বের আলোচক ছিলেন কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, মঈনুল আহসান সাবের, সঙ্গীতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও ইমতিয়ার শামীম। সঞ্চালনায় ছিলেন আন্দালিব রাশদী। ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে সাহিত্য সবার জন্য নয়। যদি সবার জন্য হতো, যদি সবার কাছে পৌঁছাতে পারত, তবে বদলে যেত পৃথিবী। থাকত না হানাহানি, হিংসা-বিদ্বেষ। আমি মনে করি, সাহিত্যের কাজ হচ্ছে মানুষের মনোজগতকে পরিবর্তন করা।’ অভিনেত্রী বন্যা মির্জার সঞ্চালনায় একই সময়ে ফেস্টের লনে অনুষ্ঠিত হয় ‘মঞ্চ যখন আমার’ শিরোনামের অধিবেশন। এতে আলোচক ছিলেন অভিনেত্রী সারা যাকের, মিতা হক ও সামিনা লুত্ফা।এর আগে সকাল ১০টায় কেকে টি স্টেজে ‘ইন আদার ওয়ার্ডস : লাইব্রেরি অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক অধিবেশনে বক্তৃতা করেন ২০১৬ সালের ম্যান বুকার পুরস্কারজয়ী সাহিত্যিক ডেবোরাহ স্মিথ, অরুনাভ সিনহা, চার্লস টর্নার ও  কায়সার হক। অধিবেশনটি সঞ্চালনা করেন ড্যানিয়েল হার্ন। একই সময় ব্র্যাক মঞ্চে ‘ক্যান ইন্ডিয়া স্পিক’ শিরোনামের অধিবেশনে দ্য ইকোনমিস্ট পত্রিকার দক্ষিণ এশিয়ার ব্যুরো চিফ ম্যাক্স রডেনবেকের সঞ্চালনায় আলোচনা করেন নরেশ ফার্নান্দেজ, মাঞ্জুলা নারায়ণ ও শ্রীরাম কারি। একই সময়ে কসমিক টেন্টে প্রদর্শিত হয় তথ্যচ্ত্রি ‘ব্লকেড’। এছাড়া ওই সময়ে বটতলায় অনুষ্ঠিত ‘হাঁসের পায়ে ঘুড়ি’ শিরোনামের গল্প বলার আসরে গল্প বলেন নাজিয়া জাবিন।

সোয়া ১১টায় মূল মঞ্চে ‘দ্য নিউ ওয়ার্ল্ড ডিজঅর্ডার’ শীর্ষক আলোচনায় আলোচক ছিলেন ম্যাক্স রোডেনবেক, বেন জুদাহ, রোজামান আরউইন ও ঢাকা ট্রিবিউন সম্পাদক জাফর সোবহান। এ পর্বের সঞ্চালক ছিলেন জাস্টিন রোলাট। ৯/১১’র পর সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যুদ্ধ ঘোষণা এবং তাদের শত্রু রাষ্ট্রদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের বিষয়গুলো উঠে আসে এই অধিবেশনের আলোচনায়। একই সময়ে কেকে টি স্টেজে ‘নারী ও নারীত্ব’ বিষয়ক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। সাংবাদিক উদিসা ইসলামের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন নাসিমা আনিস, সঙ্গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পাপড়ি রহমান ও সাদিয়া মাহ্জাবিন ইমাম। একই সময়ে লনে কার্তিকা ভিকের উপস্থাপনায় কথোপকথনে অংশগ্রহণ করেন পুলিত্জারজয়ী সাহিত্যিক বিজয় শেষাদ্রী। এ সময় ব্র্যাক মঞ্চে ‘সুফি সোল’ শীর্ষক আলোচনায় আমিনা ইয়াকিনের সঞ্চালনায় অংশ নেন সাদিয়া দেলভি ও অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। কেকে টি স্টেজে দুপুর সোয়া তিনটায় অনুষ্ঠিত হয় ‘টিকে থাকার আজ কাল পরশু’ শীর্ষক অধিবেশন। পশ্চিমবঙ্গের নিউরো সায়েন্টিস্ট গার্গো চট্টোপাধ্যায়ের সঞ্চালনায় এতে অংশ নেন ফিরোজ আহমেদ, চলচ্চিত্রকার ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরী, সাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কামাল ও মানস চৌধুরী। একই সময়ে লনে ‘জীবনের কবিতা’ শীর্ষক আলোচনায় নিজের জীবন ও সাহিত্যকর্ম নিয়ে কথা বলেন কবি নির্মলেন্দু গুণ।

এদিন বাংলাদেশের শিকড় সন্ধানী নানা সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় মুখরিত ছিল লিট ফেস্টের বিভিন্ন মঞ্চ। সাংস্কৃতিক পর্বে মারফতি গান পরিবেশন করেন আফসারউদ্দিন আলী চিশতি ও তার দল। নৃত্যনাট্য ‘পদ্মাবতীর আখ্যান’ পরিবেশন করে নাচের দল সাধনা। ইংরেজি কবিতা আবৃত্তি করেন শেহজার দোজা, সৈয়দা আহমেদ, ফাতেমা হাসান, জেফরি ইয়াং ও আহমাতজান ওসমান। ‘জলসা’ পরিবেশন করেন বিদ্যা শাহ। পালাগান পরিবেশন করে শাহ আলম বয়াতি ও তার দল। এ বছর সাহিত্যে নোবেলবিজয়ী বব ডিলানের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্যের মধ্য দিয়ে শেষ হয় উৎসবের দ্বিতীয় দিনের আয়োজন। এ সময় সঙ্গীত পরিবেশন করে ব্যান্ডদল স্টোন ফ্রি।

সর্বশেষ খবর