শনিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

পুনর্জন্মের আশায় দেহ সংরক্ষণ

প্রতিদিন ডেস্ক

লন্ডনের বাসিন্দা ১৪ বছরের কিশোরী। গত বছরের আগস্টে তার শরীরে ক্যানসার ধরা পড়ে। পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে সুস্থ করে তোলার জন্যে চেষ্টার কোনো কমতি ছিল না। কিন্তু কোনো চিকিৎসাই কাজে লাগেনি। অবশেষে গত  সেপ্টেম্বরেই তার মৃত্যু হয়। কিন্তু মৃত্যুর আগে বলে যায় সে আবার বেঁচে উঠবে ১০০ বছর পর! তার কথায়       বিশ্বাস পায় তার পরিবার। এ জন্য তার মরদেহকে সংরক্ষণ করার জন্য আদালতের শরণাপন্ন হয় পরিবার। পুনরুজ্জীবনের আশাকে মর্যাদা দিয়ে ১০০ বছর ধরে এক কিশোরীর মৃতদেহ সংরক্ষণ করার অনুমতি দিল লন্ডন হাইকোর্ট। রীতিমতো বিরল এই রায়ের পর তরল নাইট্রোজেনে তার মৃতদেহ সংরক্ষিত থাকবে আমেরিকার মিশিগান ক্রায়োনিকস? ইনস্টিটিউটে। মৃত্যু যে ঘনিয়ে আসছে তা বুঝতেই পারছিল ওই কিশোরী। কিন্তু ভাবতে ভয় করছিল, তাকে মাটির তলায় চাপা দেওয়া হবে। ঠিক তখনই এক ওয়েবসাইটে ক্রায়োপ্রিজারভেশনের কথা জানতে পারে। মাটির তলায় চাপা পড়ার থেকে তরল নাইট্রোজেনে  ভেসে থাকাটা তার কাছে অনেক কম ভয়ের মনে হয়। মনে ইচ্ছা জাগে, আহা, নিজেও যদি ওইভাবে সংরক্ষিত হওয়া যায়! পাশাপাশি আশা, কোনো এককালে তো বিজ্ঞান আরও উন্নত হবে! তখন তার শরীরে বাসা বাঁধা ক্যানসারকে প্রতিহত করে দেবে! হোক না জীবনের অনেকটা বছর পার, আবার বেঁচে উঠব নতুন করে। কিন্তু তা কি আদৌ সম্ভব? নিজের এই ইচ্ছার কথা সে মাকে জানায়। শেষে মায়ের পরামর্শে হাইকোর্টের বিচারপতির কাছে নিজের শেষ ইচ্ছা জানিয়ে চিঠি লিখে ফেলে। চিঠিতে  লেখা ছিল, ‘আমার বয়স মাত্র ১৪ বছর। আমি মরতে চলেছি। কিন্তু আমি মরতে চাই না। মাটির তলায় চাপা পড়তেও চাই না। ১০০ বছর পর হলেও ক্রায়োপ্রিজারভেশন আমাকে এক নতুন জীবন দিতে পারে। আমি অনেক বছর বাঁচতে চাই। এই সুযোগটা আমাকে দেওয়া হোক। এটাই আমার শেষ ইচ্ছা।’ এ সন্তানের এই চিঠি নিয়ে পরিবারের মধ্যেও বিরোধ হয়। শিশুটির বাবা তাকে সমাহিত করার পক্ষে ছিল। কিন্তু মা তার সন্তানের শেষ ইচ্ছাকে মূল্য দিতে চান। এ জন্য শরণাপন্ন হন আদালতের। বিচারপতি পিটার জ্যাকসন মরণোত্তর দেহ সংরক্ষের নির্দেশ দেন। বিচারপতি জ্যাকসন জানান, দ্রুত তার মৃতদেহ সংরক্ষণের ব্যবস্থা শুরু করা  হোক। তার মৃতদেহের ওপর একমাত্র তার মায়েরই অধিকার থাকবে। তিনি যখন মনে করবেন মৃতদেহের সৎকার করতে পারবেন। এই খুশির খবরটা অবশ্য জেনে  যেতে পারেনি ওই কিশোরী। আদালতের এই রায়ের আগেই মারা যায় সে। মায়ের সঙ্গে শেষ মুহূর্তের দেখাটাও হয়নি। কারণ মা তখন আইন-আদালত নিয়েই অনেক বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। আপাতত তরল নাইট্রোজেনে ডুবে আছে তার দেহ। নাইট্রোজেন গ্যাসকে তরল নাইট্রোজেনে নিয়ে যেতে লাগে-১৯৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। অর্থাৎ পানির হিমাঙ্কের থেকে যদি ১৯৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে নিয়ে যায় তাপমাত্রাকে তবেই তরল নাইট্রোজেন পাওয়া যায়। নাইট্রোজেনের হিমাঙ্ক-২১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রায় ১০০ বছর কেন, শতকের পর শতক অবিকৃত  থেকে যেতে পারে জীবদেহ।

সর্বশেষ খবর