শনিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

পুষ্টিসমৃদ্ধ কমলা রঙের মিষ্টি আলু

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

পুষ্টিসমৃদ্ধ কমলা রঙের মিষ্টি আলু

কুড়িগ্রামে উচ্চ পুষ্টিসমৃদ্ধ কমলা রঙের মিষ্টি আলু চাষে ঝুঁকেছেন চরাঞ্চলের কৃষক। এবারই প্রথম সদর উপজেলার পৌরসভাসহ মোগলবাসা ও পাঁচগাছী ইউনিয়নের ৫০ একর চরের বালুজমিতে মিষ্টি আলুর চারা লাগানো হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল বারি আলু-৪ ও ৮ জাতের মিষ্টি আলু ৭৮টি নার্সারির       মাধ্যমে লাগানো হয়েছে। সদর উপজেলার ১ হাজার ২০০ কৃষক প্রশিক্ষণ নিয়ে এ মিষ্টি আলু চাষ শুরু করেছেন। উদ্যোক্তারা জানান, জেলার ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার, ফুলকুমারসহ ১৬টি নদ-নদীর অববাহিকার ২ শতাধিক চরাঞ্চলে পড়ে থাকা হাজার হাজার হেক্টর বালুজমিতে উচ্চ পুষ্টিসমৃদ্ধ মিষ্টি আলুর চাষ ছড়িয়ে দিতে পারলে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবেন চরাঞ্চলের কৃষক। আর এ লক্ষ্যে মিষ্টি আলু উৎপাদন ও বাজারজাত নিশ্চিতকরণে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহযোগিতায় ইউকেআইডির আর্থিক সহায়তায় কাজ করছে আন্তর্জাতিক আলু কেন্দ্র ও বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পলাশবাড়ী গ্রামের মিজানুর রহমান জানান, ‘মিষ্টি আলু চাষের লক্ষ্যে আমরা ১৩ জন কৃষক প্রশিক্ষণ নিয়ে ১৫০ শতক জমিতে নার্সারি করে চারা উৎপাদন করেছি। এখান থেকে নিজের ২ একর জমিতে চারা লাগানোর পর ২ লাখ চারা ৮৫ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করেছি। ফলন ভালো হলে আগামীতে বেশি জমিতে মিষ্টি আলু নার্সারি করাসহ চাষ করব।’ আন্তর্জাতিক আলু কেন্দ্র কুড়িগ্রাম অফিসের মাঠ সমন্বয়কারী মো. মহিদুল হাসান জানান, ভাতের ওপর চাপ কমিয়ে এ অঞ্চলের মানুষের পুষ্টি নিশ্চিত করতে ও স্বল্প খরচে কৃষকের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে মিষ্টি আলু চাষের ওপর কাজ করছে আন্তর্জাতিক আলু কেন্দ্র। কমলা রঙের এ মিষ্টি আলুতে উচ্চ ভিটামিন ‘এ’-সমৃদ্ধ পুষ্টিগুণ থাকায় এ আলু খেলে মানুষের ক্যান্সার প্রতিরোধসহ ডায়াবেটিস ও ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণ হবে। পাশাপাশি পড়ে থাকা জমিতে ফসল ফলিয়ে লাভবান হবে কৃষক। কুড়িগ্রাম সদরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘উচ্চ পুষ্টিমানসমৃদ্ধ মিষ্টি আলু চাষে কৃষককে পরামর্শসহ উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এ মৌসুমে সদর উপজেলায় ১ হাজার ২০০ কৃষক এ আলু চাষ করছেন। ১২০ দিনের মধ্যে এ আলু ঘরে তুলতে পারবেন। প্রতি শতকে ৩-৪ মণ আলু উৎপাদন হবে বলে আশা করছি। বাজারদর ভালো হওয়ায় কৃষক লাভবান হবেন।’ ইন্টিগ্রেটেড এগ্রিকালচারাল প্রডাক্টিভিটি প্রজেক্ট—আইএপিপি কুড়িগ্রাম জেলা সমন্বয়কারী মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, চরাঞ্চলে মিষ্টি আলু চাষ প্রকল্প খাদ্য, পুষ্টি, আয় ও নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে।

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘বারি মিষ্টি আলু ৪ ও ৮-এ উচ্চ ভিটামিন ‘এ’সহ অন্যসব পুষ্টি বিদ্যমান থাকায় কৃষকের নিজ পরিবারের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ অতিরিক্ত উৎপাদিত মিষ্টি আলু অন্যান্য জেলার পুষ্টি চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’ ঢাকাস্থ আন্তর্জাতিক আলু কেন্দ্রের সেক্টর লিডার ড. শফিউর রহমান সোহাগ জানান, দেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে কুড়িগ্রামসহ ১২ জেলায় উচ্চ পুষ্টিমানসমৃদ্ধ কমলা রঙের মিষ্টি আলু চাষে কাজ করা হচ্ছে। এতে কৃষক একদিকে যেমন লাভবান হবেন অন্যদিকে দেশের মানুষের পুষ্টি নিশ্চিত হলে শিশুদের মেধা বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।

সর্বশেষ খবর