রবিবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

সাহিত্যের আলোকিত দিগন্ত প্রসারিত করল লিট ফেস্ট

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

সাহিত্যের আলোকিত দিগন্ত প্রসারিত করল লিট ফেস্ট

বাংলাদেশের সাহিত্যকে আলোকিত দিগন্তে প্রসারিত করে এবং সাহিত্যের সেতুবন্ধ রচনার প্রত্যয়ে গতকাল বাংলা একাডেমিতে শেষ হয়েছে তিন দিনের আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসব ‘ঢাকা লিট ফেস্ট ২০১৬’। একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ব্র্যাকের চেয়ারপারসন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। এতে আরও বক্তৃতা করেন উৎসব পরিচালক সাদাফ সায্, ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান ও অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট সমালোচক চালর্স ক্যাম্পেবেল প্রমুখ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্যার ফজলে হাসান আবেদ বলেন, উন্নয়নের উদ্দেশ্য হলো সংস্কৃতিক পরিবর্তন। উন্নয়ন করতে হলে জীবনযাপনের সংস্কৃতি বদলাতে হবে। তাই আমাদের উন্নয়নের সার্বিক কথাই হচ্ছে, সংস্কৃতির উন্নয়ন। তিনি আরও বলেন, তিন দিনের এ উৎসব ছিল এ শহরের সবচেয়ে বড় উৎসব। সেই সঙ্গে লিট ফেস্টের আগের পাঁচ বছরের আসরের থেকে এবারের আসর সবচেয়ে সেরা বলে আমি মনে করি। সব্যসাচী লেখক বন্ধু সৈয়দ শামসুল হককে স্মরণ করে তিনি বলেন, আমি আমার বন্ধুকে মিস করছি। তার প্রয়াণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ হারিয়েছে তার একজন মেধাবী সন্তানকে। বাংলাদেশসহ ১৮টি দেশের কবি, সাহিত্যিক, গবেষক, সাংবাদিক, প্রকাশকদের অংশগ্রহণে তিন দিনের এই ফেস্টে ৯০টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা, কর্মশালা, সংগীত, গল্প বলা, চলচ্চিত্র, কবিতা পাঠসহ নানা আয়োজনে সাজানো ছিল সাহিত্যের এই উৎসব। সমাপনী আসরে প্রদান করা হয় জেমকন সাহিত্য পুরস্কার ২০১৬। এ বছরের জেমকন সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন মঈনুল আহসান সাবের এবং জেমকন তরুণ কথাসাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন মোস্তাফিজ কারিগর। ‘আবদুল জলিল যে কারণে মারা গেল’ বইয়ের জন্য মঈনুল আহসান সাবের এবং ‘বস্তুবর্গ’ উপন্যাসের পাণ্ডুলিপির জন্য মোস্তাফিজ কারিগর এ পুরস্কার পেয়েছেন।

বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে লেখকদের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট ও সনদপত্র ছাড়াও মঈনুল আহসান সাবেরকে ৮ লাখ এবং মোস্তাফিজ কারিগরকে ২ লাখ টাকা প্রদান করা হয়। তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন জেমকন গ্রুপের পরিচালক কাজী আনিস আহমেদ, কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, কথাসাহিত্যিক ঝর্ণা রহমান, ভারতের কবি জহর সেন মজুমদার ও আকবর আহমেদ। বিকালে শিল্পী মনিরুল ইসলামের শিল্পী জীবন ও তার শিল্প ভাবনা নিয়ে অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় কসমিক টেন্টে। এই শিল্পীর জীবন ও কর্ম নিয়ে প্রামাণ্য চিত্র ও একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেছে এনার্জিস লিমিটেড। তার বিশাল শিল্প সম্ভার এবং অন্যান্য সব বিষয় স্থান দেওয়া হয়েছে এ বইয়ে। ইংরেজি ভাষায় লেখা ‘মনির’ শীর্ষক বইটিতে ১৯৬৬ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মনিরুল ইসলামের নির্বাচিত শিল্পকর্ম নিদর্শন স্থান পেয়েছে। বইটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আলোচনা ও শিল্পীর সঙ্গে কথোপকথনে অংশ নেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও স্প্যানিশ রাষ্ট্রদূত এদুয়ার্দো ডে লা ইগলেসিয়া। স্বাগত বক্তব্য রাখেন এনার্জিস লিমিটেডের পরিচালক জেরিন মাহমুদ খান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ডিপার্ট এর সম্পাদক মুস্তাফা জামান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাট, এনার্জিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাবেদ হোসেন প্রমুখ। দুপুর সাড়ে ১২টায় উৎসবের মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘যুদ্ধ শেষের যুদ্ধ’ শীর্ষক অধিবেশন। এতে আলোচক ছিলেন কথাসাহিত্যিক আকিমুন রহমান, সাংবাদিক মাহবুব আজীজ, সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফ ও উৎসব পরিচালক আহসান আকবর। এর আগে নেদা শাকিবার কণ্ঠে বাহাই গানের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে উৎসবের সূচনা ঘটে। বাংলা, ইংরেজি, ফার্সি, আরবি ও হিন্দি ভাষায় ঈশ্বরের বন্দনা করেন এ শিল্পী। সকাল ১০টায় ব্র্যাক মঞ্চে ‘মসলিনস মিস্টিক’ শিরোনামের অধিবেশনে ফয়সাল আহমেদের সঞ্চালনায় মসলিন নিয়ে আলোচনা করেন সাইফুল ইসলাম, রুবি গজনবি, ফকরুল আলম ও শহীদুল আলম। একই সময় বটতলায় নারীর শক্তি নিয়ে বিশেষ আলোচনা ‘গার্ল পাওয়ার’। এতে আলোচনা করেন এভারেস্টবিজয়ী প্রথম বাংলাদেশি নারী নিশাত মজুমদার, মহিলা জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্য সালমা খাতুন ও রুমানা আহমেদ এবং ফুটবলার শ্যামলী বসাক। একই সময় কসমিক টেন্টে প্রদর্শিত হয় ‘দ্য সেন্টস্্ অব সিন’। এরপর সকাল সোয়া ১১টায় মূল মঞ্চে নারীর পোশাক ও পর্দানসীনতা নিয়ে ‘হোয়াট নট টু ওয়্যার’ শীষর্ক অধিবেশনে আলোচক ছিলেন সামিয়া হক, আমিনা ইয়াকিন, তাসাফি হোসেন ও হানিয়ূম মারিয়া চৌধুরী। এ সময় লনে ‘আরব ফিকশন’ নিয়ে আলোচনা করেন নায়েল এলতোখি ও মার্সিয়া লিনেক্স কোয়েলি। এ সময় বটতলায় ছিল শিশুদের জন্য গল্প শোনার আসর। কিউ পি আলম ‘আশা অ্যান্ড দ্য ম্যাজিক মশারি’ গল্পটি শোনান।

দুপুর সাড়ে ১২টায় কেকে টি স্টেজে ‘দ্য ওয়ার্ল্ড অ্যার্কডিং টু পুতিন’ শিরোনামের অধিবেশনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে নিয়ে আলোচনা করেন ব্রিটিশ সাংবাদিক বেন জুদাহ ও রোজামান্ড আরউইন। একই সময় কসমিক টেন্টে মসলিন নিয়ে শিশু উপযোগী অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র ও নাটক ‘দ্য মসলিন স্টোরি’ প্রদর্শিত হয়।

বেলা পৌনে ২টায় কেকে টি স্টেজে ‘জেনেটিক্স : লাইফ হ্যাকড’ শীর্ষক অধিবেশনে কথা বলেন ভারতীয় মনোবিজ্ঞানী সঞ্জীব জৈন ও বাংলাদেশের জিন বিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরী। সঞ্চালনায় ছিলেন গার্গ চট্টেপাধ্যায়। বিকাল ৩টায় মূল মঞ্চে ‘পোয়েট্রি : স্টিল হেয়ার আফটার অল দিস ইয়েটস্্’ শীর্ষক অধিবেশনে আলোচনা করেন পুলিত্জারজয়ী কবি বিজয় শেষাদ্রী, খাদেমুল ইসলাম ও জেফরি ইয়াং। এ সময় বটতলায় বরিশালের মনসামঙ্গল সম্প্রদায় মঞ্চস্থ করে ‘বেহুলা-লখিন্দর’। লনে ছিল কবিতা পাঠের আসর। কবিতা পাঠ করেন আসাদ চৌধুরী, রুবী রহমান, পিয়াস মজিদ, ফরিদ কবির, জহর সেন মজুমদার, তারিক সুজাত, কবির হুমায়ূন, আলতাফ শাহনেওয়াজ প্রমুখ। বিকাল সাড়ে ৫টায় কেকে টি স্টেজে ‘অনুবাদে পূর্ব পশ্চিম’ শীর্ষক অধিবেশনে সঞ্চালনা করেন মাসরুর আরেফিন। আলোচনা করেন মাসুদ আহমেদ, নাজমুন নেসা পিয়ারি, হামিম কামরুল হক ও শামসাদ মুর্তজা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বটতলায় ছিল প্রয়াত রব ফকিরকে স্মরণে বিশেষ সংগীতানুষ্ঠান। যাতে সংগীত পরিবেশন করে শিকড় বাংলাদেশের শিল্পীরা। এই পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় এবারের ঢাকা লিট ফেস্ট।

সর্বশেষ খবর