রবিবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
মারাকাশ সম্মেলন সমাপ্ত

বৈশ্বিক জলবায়ু কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার

নিজামুল হক বিপুল, মারাকাশ, মরক্কো থেকে

প্যারিস চুক্তির আলোকে বৈশ্বিক জলবায়ু কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে শুক্রবার মধ্য রাতে শেষ হয়েছে মারাকাশ জলবায়ু সম্মেলন। মারাকাশ ঘোষণায় নির্মল প্রযুক্তির সহায়তায় বিলিয়ন ও মিলিয়ন ডলারের বহুমুখী প্যাকেজ এবং দক্ষতা বৃদ্ধিতে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। এবারের ঘোষণায় স্থান পেয়েছে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য পানি ও খাদ্য নিরাপত্তার ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়টিও। সেই সঙ্গে ২০১৮ সালের মধ্যে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে একটি বিধি-পুস্তক প্রণয়নের সময়সীমা নির্ধারণ করেছে সরকারগুলো, যা আগামী দশকগুলোতে জলবায়ু প্রভাব মোকাবিলায় আস্থা, সহযোগিতা ও সফলতা নিশ্চিত করবে।

তবে মারাকাশ ঘোষণা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে পরিবেশবাদীরা। তারা বলছে, দুই সপ্তাহব্যাপী আলোচনার পর অর্থায়ন নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দেয়নি উন্নত দেশগুলো। জলবায়ু অর্থায়নে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ নিয়েও আপত্তি জানিয়েছে পরিবেশবাদীরা। ক্লাইমেট জাস্টিস গ্রুপ বলছে, জলবায়ু অর্থায়নে বেসরকারি খাতের অর্থায়ন সরকারি অর্থায়নের বিকল্প হতে পারে না। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় এবং অভিযোজন কার্যক্রমে সরকারি অর্থায়ন জরুরি। মারাকাশে উন্নত দেশগুলো তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে গেছে।

এবারের সম্মেলনে বাংলাদেশের সাফল্য হলো— পানি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জোরালো দাবি ঠাঁই পেয়েছে মারাকাশ ঘোষণায়। এই প্রথম জলবায়ু সম্মেলনে ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী ও সরকার মিলে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার প্রতিফলিত হয়েছে। মারাকাশ ঘোষণায় বলা হয়েছে, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়নে কাজ করার ব্যাপারে বিশ্বের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, বিনিয়োগকারী এবং নগর ও স্থানীয় সরকারগুলো একযোগে কাজ করার নতুন অঙ্গীকার করেছে।

এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, ১৬৫টি দেশের সাব-ন্যাশনাল সরকারি ক্লাব ‘আন্ডার টু কোয়ালিশন’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, ২০২০ সাল নাগাদ তাদের কার্বন নির্গমন ৮০ ভাগ হ্রাস করবে। উল্লেখ্য, এই ১৬৫টি দেশের সম্মিলিত জিডিপি প্রায় ২৬ ট্রিলিয়ন ডলার, যা বিশ্ব অর্থনীতির এক তৃতীয়াংশ। উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, ল্যাটিন আমেরিকা, আফ্রিকা ও এশিয়ার এই ১৬৫টি দেশের জনসংখ্যা ১০০ কোটিরও বেশি। এ ছাড়া জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ ৪০টিরও বেশি দেশের সংগঠন ‘ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম’ ঘোষণা দিয়েছে, তারা বৈশ্বিক উষ্ণতা এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি রাখার ক্ষেত্রে তাদের আহ্বান আরও জোরালো করবে।

মারাকাশ ভিশন নামে উন্নয়নশীল দেশগুলোর আরও একটি সংগঠন অঙ্গীকার করেছে, ২০২০ ও ২০৫০ সালের মধ্যে তারা কার্বন নির্গমন কমাতে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্য অর্জন করবে। এ ছাড়া কানাডা, জার্মানি, মেক্সিকো এবং যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছে, তাদের দীর্ঘমেয়াদি জলবায়ু কৌশল ২০৫০ সাল নাগাদ বৈশ্বিক কার্বন নির্গমন হ্রাসে প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য অর্জন করবে। শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগে জন্ম নেবে স্বল্প কার্বন নির্গমনের এক নতুন পৃথিবী।

এবারের জলবায়ু সম্মেলনে জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় ছিল, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয় ও ক্ষতি। এ ব্যাপারে মারাকাশ সম্মেলনের ঘোষণায় বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয় ও ক্ষতির ব্যাপারে ওয়ারশো ইন্টারন্যাশনাল মেকানিজম অনুযায়ী পাঁচ বছরের একটি ফ্রেমওয়ার্ক প্রণয়ন করা হবে। এই ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় জলবায়ু বাস্তচ্যুত, অভিবাসন এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের স্থানান্তর ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এ প্রসঙ্গে ইউএনএফসিসি’র নির্বাহী সেক্রেটারি প্যাট্রিসিয়া স্পেপানিশা বলেছেন, মারাকাশ জলবায়ু সম্মেলন প্যারিস চুক্তি কার্যকরে লক্ষ্য অর্জন করেছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও টেকসই উন্নয়নে নতুন যুগের সন্ধান পাবে এ বিশ্ব। তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলো ২০২০ সাল থেকে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলারের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা পূরণে এখন থেকেই কাজ করতে হবে।

জলবায়ু অর্থায়নে মারাকাশ সম্মেলনে সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা না এলেও কিছু দেশ অ্যাডাপটেশন ফান্ড ও গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডে অর্থ প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে। সম্মেলন চলাকালে অ্যাডাপটেশন ফান্ডে ৮১ মিলিয়ন ডলার ও ক্লাইমেট টেকনোলজি ফান্ডে ২৩ মিলিয়ন ডলারের ঘোষণা এসেছে। এ ছাড়া এ পর্যন্ত গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড থেকে ২৫০ কোটি ডলারের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে বলে সম্মেলনে জানানো হয়েছে।

পরবর্তী জলবায়ু সম্মেলন জার্মানিতে : মারাকাশ জলবায়ু সম্মেলনে ঘোষণা করা হয়েছে, আগামী জলবায়ু সম্মেলন আয়োজন করবে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দ্বীপ রাষ্ট্র ফিজি। তবে এত বড় সম্মেলন আয়োজনের অবকাঠামোগত সুবিধা না থাকায় ফিজির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা জার্মানির সহায়তায় দেশটির বন শহরে ২০১৭ সালের জলবায়ু সম্মেলন আয়োজন করবে।

সর্বশেষ খবর