মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

রোহিঙ্গা বসতি গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দিচ্ছে সেনাবাহিনী

হিউম্যান রাইটসের তথ্য

প্রতিদিন ডেস্ক

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের অন্তত পাঁচটি গ্রাম পুড়ে ছাই করে দিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। গত কয়েক দিনের অগ্নিসংযোগে গ্রামগুলোর কমপক্ষে ১ হাজার বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। নতুন স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণের পর গতকাল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এমন তথ্য জানিয়েছে। এ ছাড়া অনেক রোহিঙ্গাকে ধরে এনে এখনো পুড়িয়ে মারছে সেনাবাহিনী। তবে এসব এলাকায় সাংবাদিক ঢুকতে না দেওয়ায় রোহিঙ্গা নির্যাতনের ভয়াবহতা সংবাদমাধ্যমে আসছে না বলে অনেক মানবাধিকার সংগঠন দাবি করেছে। আর ঘটনাগুলোর নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য জাতিসংঘকে আমন্ত্রণ জানাতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গত অক্টোবর থেকে দেশটির সেনাবাহিনী অভিযান চালাচ্ছে। এতে রাখাইনে বসবাসরত রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা, মহিলা ও কিশোরীদের ধর্ষণ, তাদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ব্যাপক অভিযোগও আছে। জাতিসংঘ বলছে, সহিংসতার ঘটনায় এ পর্যন্ত সেখানকার ৩০ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। আরও হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতে এলাকা থেকে পালানোর চেষ্টা করছে। কারণ সেনা সদস্যরা কোনো রোহিঙ্গাকে পেলেই হত্যা করছে। ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের রাখাইন সীমান্ত চৌকিতে এক হামলার জেরে অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। এতে ৭০ জন নিহত হয়েছে এবং ৪০০-এরও বেশি নাগরিককে তারা আটক করেছে বলে রাষ্ট্রীয় মাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে। যদিও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন নিহতের সংখ্যা আরও বেশি। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়াবিষয়ক পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, ‘নতুন এই স্যাটেলাইট ইমেজগুলোর মধ্য দিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে, রোহিঙ্গা গ্রামগুলোর ধ্বংসযজ্ঞ মিয়ানমার সরকারের তথ্যের চেয়ে অনেক বেশি ভয়াবহ এবং তা আরও বেশি জায়গায় বিস্তৃত। পাঁচটি রোহিঙ্গা গ্রামে যে অগ্নিসংযোগ হয়েছে তা খুব উদ্বেগের। এর জন্য মিয়ানমার সরকারকে তদন্ত করতে হবে এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। এ ধরনের তদন্তকে বিশ্বাসযোগ্য করতে হলে এর সঙ্গে জাতিসংঘের অংশগ্রহণ জরুরি।’ হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতিসংঘে নিয়োজিত যুক্তরাষ্ট্রের দূত সামান্থা পাওয়া ১৭ নভেম্বর নিরাপত্তা পরিষদে রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি বর্ণনা করেছেন। তিনিও সে সময় মিয়ানমারে তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের প্রবেশে অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানান।

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা হত্যা বন্ধে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ দাবি : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর পরিচালিত বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে হত্যা-নির্যাতন বন্ধে বিশ্ব সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপের দাবি জানান তারা। গতকাল ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের সামনে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এই দাবি জানানো হয়। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার, স্লোগান ৭১, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কালচারাল সোসাইটি ও মাইম অ্যাকশনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। মানববন্ধন থেকে হত্যা ও নির্যাতন বন্ধ না করা হলে বাংলাদেশে অবস্থিত মিয়ানমারের দূতাবাস ঘেরাও করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেয় অংশগ্রহণকারীরা। মানববন্ধনে ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন বলেন, মিয়ানমারের মুসলিমদের ওপর গণহত্যা চালানো হলেও আন্তর্জাতিক মহল আজ নীরব ভূমিকা পালন করছে। জাতিসংঘ কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো বাংলাদেশকে সীমান্ত খুলে দিতে বলছে। এটা ন্যক্কারজনক।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর