মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

প্রশাসনের ঘোষণায় সাঁওতালরা ক্ষুব্ধ

সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেই

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

 

 

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক ‘আদিবাসীদের দাবি অনুযায়ী চিনিকলের জমি তাদের দেওয়ার বা সেখানে তাদের পুনর্বাসনের সুযোগ নেই’ ঘোষণার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে উচ্ছেদ হওয়া সাঁওতালদের মধ্যে। তাদের ভিতর নতুন করে ছড়িয়ে পড়েছে ক্ষোভ ও হতাশা।

গত রবিবার গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, চিনিকলের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের জমি সাঁওতালদের ফেরত পাওয়ার কোনো কারণ নেই। তিনি দাবি করেন, সে সময় সরকার তাদের ক্ষতিপূরণ দিয়েই জমিগুলো অধিগ্রহণ করেছিল। আদিবাসীদের পক্ষে আদালতের নির্দেশনা পেলেই শুধু এর ব্যত্যয় সম্ভব। তারা রাজি হলে কাটাবাড়ী ইউনিয়নের ১৪.২৬ একর জায়গায় আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন সাঁওতালদের পুনর্বাসন করা যাবে। এ প্রসঙ্গে গতকাল জাতীয় আদিবাসী পরিষদ সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, জেলা প্রশাসক আমাদের দাবির প্রতি অবমাননাকর উক্তি করেছেন। যে বাপ-দাদার জমির জন্য আমরা জীবন দিয়েছি সেই জমিতেই আমাদের পুনর্বাসন করতে হবে। চিনিকল কর্তৃপক্ষ জমি অধিগ্রহণের চুক্তি ভঙ্গ করেছে, তাই জমি আমাদের দিতেই হবে। তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসক বলেছেন, ৩১ জন ভূমিহীন সাঁওতাল রয়েছে—এটিও একটি চরম অসত্য কথা। সবাই দেখেছে কতজন ভূমিহীনকে জমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে, আর কতজন খোলা আকাশের নিচে আছে। সাঁওতাল পল্লী মাদারপুরের গ্রামপ্রধান বার্নাভাস টুডু জেলা প্রশাসকের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে বলেন, জেলা প্রশাসকের করুণা কেন আমরা নিতে যাব? আমরা কোনো পুনর্বাসন কেন্দ্রে নয়, আমাদের বাপ-দাদার জমিতেই ফেরত যাব।

এদিকে রংপুর চিনিকলের মালিকানাধীন গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের জমি থেকে সাঁওতাল উচ্ছেদের ঘটনার ১৬ দিন পার হয়ে গেলেও এ সমস্যার এখনো কোনো সমাধান আসেনি। সাঁওতাল ও মিল কর্তৃপক্ষ তথা সরকার নিজ নিজ অবস্থানে অনড় থাকায় এ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মাদারপুর ও জয়পুর গ্রামে এখনো খোলা আকাশের নিচে উচ্ছেদ হওয়া সাঁওতাল পরিবারগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

ইউএনওর ধান কাটার প্রস্তাব : গতকাল গোবিন্দগঞ্জ ইউএনও মো. আবদুল হান্নান সাঁওতালদের জমি থেকে ধান কেটে আনার প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘দুপুর সোয়া ১২টার দিকে সাহেবগঞ্জ খামারের ধানের জমি পর্যবেক্ষণ শেষে চিনিকল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশসহ আমি মাদারপুর চার্চ এলাকায় গিয়ে আদিবাসীদের ধানকাটা এবং যেসব জমিতে পানি দেওয়ার দরকার—সেখানে পানি দিতে বলি। সেখানে উপস্থিত তাতু টুডু এবং বার্নাভাস টুডু জানান, যেহেতু জমি তারা সম্মিলিতভাবে চাষ করেছেন—তাই কিভাবে ধান তারা কাটবেন সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত কাল জানাবেন।’

গ্রেফতার আরও ৪ : আখকাটা নিয়ে সংঘর্ষ ও সাঁওতালদের ওপর হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এবং গুলি করে সাঁওতাল হত্যা মামলায় আরও চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল সকালে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো—তরফকামাল গ্রামের কাজেম উদ্দিনের ছেলে সাহেদ আলী (৩৫), কফিল উদ্দিনের ছেলে মোখলেছুর রহমান (২৮), সাহেবগঞ্জ গ্রামের মৃত আসমান আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম (৩৫) ও মাদারপুর গ্রামের দারাজ উদ্দিনের ছেলে আবদুল মান্নান (৫৪)। এর আগে আরও ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এ নিয়ে গ্রেফতারের সংখ্যা হলো ১৭ জন। 

বিনোদন কেন্দ্র : সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার এলাকার মাদারপুর ও জয়পুরপাড়ায় চালু করা হয়েছে শিশু বিনোদন কেন্দ্র। ব্র্যাকের সহযোগিতায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণউন্নয়ন কেন্দ্র শিশু বিনোদন কেন্দ্র দুটি চালু করেছে। এই শিশু বিনোদন কেন্দ্রে সাঁওতাল পল্লীর শিশুরা পড়াশোনাসহ খেলাধুলা ও আনন্দ করার সুযোগ পেয়েছে। কেন্দ্রগুলোতে সাজানো হয়েছে নানা ধরনের উপকরণে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত শিশুরা এখানে থাকতে পারছে।

বিচারবিভাগীয় কমিশন গঠনের নির্দেশনা চেয়ে রিট : গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাঁওতালদের ওপর হামলার ঘটনা তদন্তে বিচারবিভাগীয় কমিশন গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়েছে। ওই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত দুই সাঁওতালের পক্ষে গতকাল হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট করেন আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।

রিটে বিচারবিভাগীয় কমিশন গঠন করে তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলে আইন সচিব ও স্বরাষ্ট্র সচিবের প্রতি নির্দেশনার আবেদন জানানো হয়েছে। পরে আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, উচ্ছেদের নামে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, গুলি ও হত্যা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না—রিটে এই মর্মে রুল চাওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না—সে বিষয়েও রুল চাওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, এর আগে ১৬ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালদের জানমাল রক্ষা, নিরাপত্তা, ক্ষতিপূরণ ও স্বাধীনভাবে চলাফেরার সুযোগ দিতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করে আইন ও সালিস কেন্দ্র (আসক)সহ তিনটি সংগঠন।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর