বুধবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

যেমন চলছে বগুড়ার রাজনীতি

আওয়ামী লীগে চাঙ্গাভাব, সংগঠিত হচ্ছে বিএনপি-জাতীয় পার্টি

আব্দুর রহমান টুলু, বগুড়া

যেমন চলছে বগুড়ার রাজনীতি

পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচনে নৌকার পালে হাওয়া লাগায় বগুড়ায় আওয়ামী লীগে চাঙ্গাভাব আর মামলায় জর্জরিত বিএনপি সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। জাতীয় পার্টি ২টি উপজেলায় ঘর গোছানোর কাজ করলেও জামায়াত গোপনে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলন ও জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার আগে বগুড়ায় জেলা আওয়ামী লীগ ছিল ভিন্ন রকম। সম্মেলনের পর জেলা আওয়ামী লীগের পালে হাওয়া লেগেছে। কেন্দ্রে সদস্য হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি স্থান পাওয়ায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। আর নতুন কিছু মুখ নিয়ে গঠিত হয়েছে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ। সাবেক ছাত্রলীগের একাধিক নেতা এখন জেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে স্থান পেয়েছেন। আওয়ামী লীগে যারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন পদ আঁকড়ে ধরে পড়ে ছিলেন তাদের কেউ কেউ মনঃক্ষুণ্ন হলেও তারুণ্য নির্ভর দল নিয়ে চাঙ্গাভাবে সময় পার করছে জেলা আওয়ামী লীগ। জেলার সভাপতি আলহাজ মমতাজ উদ্দিন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদ অর্জন করায় দলে বয়ে যাচ্ছে আনন্দ বার্তা। সংবর্ধনা আর জাতীয় কর্মসূচি পালনেই তারা ব্যস্ত। পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচনে জেলায় এবার বিস্ময়কর সাফল্য পেয়েছে নৌকা মার্কার প্রার্থীরা। তবে তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনের শক্তি বৃদ্ধি বা সরকারের সফলতা তুলে ধরতে নেতা-কর্মীদের দেখা যায় না। জেলা নেতৃবৃন্দের নিয়ন্ত্রণ নেই অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের ওপর। বিভিন্ন কায়দা কৌশলে কিছু নেতা রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হয়ে গেছেন। তবে তৃণমূলে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নেই এ কথা মানতে নারাজ দলীয় নেতৃবৃন্দ। জেলা আওয়ামী লীগের নবগঠিত কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা সুলতান মাহমুদ খান রনি জানান, প্রবীণ নেতা আলহাজ মমতাজ উদ্দিনের নেতৃত্বে বগুড়ায় আওয়ামী লীগ অনেক আগে থেকেই শক্তিশালী। উপজেলা ও পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের বিজয় তার প্রমাণ। আগামী নির্বাচনে ৭টি আসনেই নৌকা মার্কার প্রার্থীদের বিজয়ী করতে নেতা-কর্মীরা তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করছেন।

বিএনপি : জাতীয় নির্বাচনে না আসা, ভাঙচুর নাশকতা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মামলা- হামলায় একরকম নুয়ে পড়া জেলা বিএনপির পালেও হাওয়া লেগেছে। মামলায় গ্রেফতার আতঙ্কে পালিয়ে থাকা বিএনপির কিছু কিছু নেতা-কর্মী জামিন পেয়ে সামনে আসতে শুরু করেছেন। অনেকেই আবারো মিছিল-মিটিং এবং দলীয় কর্মসূচিতে সক্রিয় হয়ে উঠছেন। দলে নেতা-কর্মী বাড়ার কারণে আবারো চাঙ্গা হয়ে উঠতে শুরু করেছে বগুড়ায় বিএনপি। সম্প্রতি জামিনে মুক্ত ছাত্রদল, যুবদলের কয়েকজন নেতাকে সংবর্ধনা প্রদান করেছে জেলা বিএনপি, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল। ঘরোয়া কর্মসূচির মধ্য দিয়েই তারা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। উপজেলা পর্যায়ে সংগঠনের কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে, তবে সারিয়াকান্দি সোনাতলার নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করতে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও জেলা বিএনপির উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা শোকরানা। জেলা মহিলা দলের সভাপতি লাভলী রহমান দলীয় কর্মসূচিতে থাকলেও সাধারণ সম্পাদক নিহার সুলতানা তিথি দীর্ঘদিন ধরে জেলায় অনুপস্থিত। জেলা বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল সংবর্ধনা, দোয়া মাহফিলসহ দলীয় কর্মসূচি পালন করলেও মাঠে নেই ছাত্রদল। শুধু জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে দল সংগঠিত হচ্ছে। আর এক সময় দলের সুযোগ সুবিধাভোগীরা দুঃসময়ে দলের সাংগঠনিক কাজ বাদ দিয়ে নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত। এক যুগ আগে ছাত্রত্ব শেষ হওয়া অথবা বিবাহিতরা এ দলের কমিটিতে রয়েছেন। তবে তাদের কোনো কর্মসূচিতে দেখা যায় না। এদিকে জেলা ছাত্রদল সভাপতি সাধারণ সম্পাদক দীর্ঘদিন ধরে জেলার বাইরে অবস্থান করছেন। জেলা ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণার দাবি করেছে তৃণমূল ও তরুণ কর্মীরা। জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম জানান, মামলার কারণে অনেক নেতা-কর্মী কারাগারে এবং কেউ পালিয়ে রয়েছেন। তবে সাংগঠনিকভাবে বিএনপি আগের চেয়ে আরও বেশি শক্তিশালী। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জেলার ৭ আসনেই ধানের শীষের বিজয় হবে বলে তিনি দাবি করেন।

এদিকে জেলার ৪টি আসনে জাপার এমপি থাকলেও বগুড়া সদর ও শিবগঞ্জ ছাড়া অন্য কোনো উপজেলায় জাতীয় পার্টির কার্যক্রম চোখে পড়ে না। বগুড়া সদর উপজেলায় কাজ করে যাচ্ছে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও সদর আসনের এমপি নুরুল ইসলাম ওমর। তার নেতৃত্বে দলীয় নেতা-কর্মীরা তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠন শক্তিশালী করতে কাজ করছেন। এ ছাড়া বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) এলাকায় ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে সংগঠন শক্তিশালী করতে মাঠে কাজ করছেন জেলা জাপার সভাপতি শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ এমপি। বিভিন্ন ইউনিয়নে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় ও কর্মিসভা অব্যাহত রেখেছেন। জাপার অপর দুই সংসদ সদস্য বগুড়া-৩ আসনে অ্যাড. নুরুল ইসলাম তালুকদার ও বগুড়া-৭ আসনে অ্যাড. আলতাফ আলীর সঙ্গে নেতা-কর্মীদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। পরিবারের সদস্য আর ঘনিষ্ঠ কিছু লোকজন নিয়েই তাদের রাজনীতি। এ কারণে ওই দুই এলাকায় জাপা অস্তিত্ব সংকটে। জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম ওমর এমপি জানান, জেলায় জাপার সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

গোপনে জামায়াত তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এখনো বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকছে জাসদ, জেএসডি, বাসদ, কমিউনিস্ট পার্টিসহ অন্যান্য বামদলগুলো।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর