বুধবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন

আট উন্নয়নশীল দেশের শীর্ষে বাংলাদেশ

মানিক মুনতাসির

গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়নে এশিয়া ও আফ্রিকার ৮টি উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে শীর্ষ স্থানে উঠেছে বাংলাদেশের নাম। বিশ্বব্যাংকের গবেষণায় বলা হয়েছে, জুলাই-২০১৬ পর্যন্ত বাংলাদেশের গ্রামীণ সড়কের প্রায় ৮৮ শতাংশই পাকা করা হয়েছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত ‘রুর‌্যাল এক্সেস ইনডেক্স’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়। এতে এশিয়া ও আফ্রিকার আটটি উন্নয়নশীল দেশের গ্রামীণ যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি ধারণাসূচক প্রকাশ করা হয়েছে। দেশগুলো হলো— দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ, নেপাল এবং আফ্রিকার ইথিওপিয়া, কেনিয়া, মোজাম্বিক, তানজানিয়া, উগান্ডা ও জাম্বিয়া। এসব দেশের গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন ধারায় বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ গত কয়েক বছরে গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এসব দেশের টেকসই উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচনের বিষয়গুলোও স্থান পেয়েছে বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার এই ধারণাসূচকের টার্গেটে পরিমাপের সূচক নির্ধারণ করা হয়েছে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য দুই কিলোমিটারের মধ্যে উন্নতমানের পাকা সড়কের সঙ্গে যোগাযোগ। এতে দেখা গেছে, বাংলাদেশ এশিয়া ও আফ্রিকার উন্নয়নশীল দেশগুলোর চেয়ে অনেক অগ্রসর। বিশ্বব্যাংক পরিচালিত ওই জরিপে উঠে এসেছে বাংলাদেশের ৮৬ দশমিক ৭ শতাংশ গ্রামীণ রাস্তা পাকা। সেখানে প্রতিবেশী দেশ নেপালের ৫৪ দশমিক ২ গ্রামীণ সড়ক পিচঢালা। ইথিওপিয়ায় ২১ দশমিক ৬ শতাংশ, কেনিয়ায় ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশ, মোজাম্বিকে ২০ দশমিক ৪ শতাংশ, তানজানিয়া ২৪ দশমিক ৬ শতাংশ, উগান্ডার ৫৩ দশমিক ১ শতাংশ এবং জাম্বিয়ার ৬৪ দশমিক ১ শতাংশ সড়ক পিচঢালা। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, গ্রামীণ পর্যায়ে জিআইএস ডাটা না থাকায় ভারতসহ অনেক দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়নি। এলজিআরডির তথ্যমতে, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় ৩ লাখ ২১ হাজার ১০০ কি.মি. গ্রামীণ সড়ক রয়েছে। ১৯৮০’র দশক থেকে এলজিইডি গ্রামীণ সড়ক শ্রেণিবিন্যাস এবং অগ্রাধিকার নির্ণয়ের মাধ্যমে উন্নয়ন করে আসছে। এলজিইডির সড়কগুলো উপজেলা সড়ক, ইউনিয়ন সড়ক এবং গ্রাম সড়ক এই তিন শ্রেণিতে বিভক্ত। উপজেলা এবং ইউনিয়ন সড়কগুলোর মাধ্যমে গ্রামীণ প্রশাসন, স্বাস্থ্যসেবা, হাটবাজার, স্কুল-কলেজ এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক কেন্দ্রগুলোকে সংযুক্ত করা হয়েছে। জুলাই-২০১৬ পর্যন্ত গ্রামীণ অঞ্চলের প্রায় ৮৮ শতাংশ উপজেলা সড়ক এবং ৬৬ শতাংশ ইউনিয়ন সড়ক পাকা করা হয়েছে। এতে দেশের প্রত্যন্ত কিছু অঞ্চল ছাড়া সারাদেশে পল্লী অর্থনীতি, প্রশাসন, স্বাস্থ্যসেবা, বিদ্যালয় সংযোগকারী একটি ভালো নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। যা গ্রামীণ অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের ৮৬ দশমিক ৭ শতাংশ গ্রামেই দুই কিলোমিটারের মধ্যে ভালো সড়ক যোগাযোগ রয়েছে। মধ্যম আয়ের অর্থনীতিতে উত্তরণের পথে এই গ্রামীণ সড়ক নেটওয়ার্ক একটি ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। পল্লী সড়ক শুধু সড়ক নয়, কর্মসংস্থান, জীবিকা এবং উন্নততর জীবনেরও অবলম্বন। দেশজুড়ে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক দারিদ্য হ্রাসেও সহায়তা করছে। যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে সহযোগিতা করছে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক।

 

সর্বশেষ খবর