বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

চিড়িয়াখানায় টার্কি

মোস্তফা কাজল

চিড়িয়াখানায় টার্কি

ঢাকার জাতীয় চিড়িয়াখানায় আরাম আয়েশে দিন কাটছে টার্কি পাখিদের। ধারণা করা হয় যুক্তরাষ্ট্রে শুধু থ্যাঙ্কসগিভিং ডেতেই ৪৫ মিলিয়ন টার্কি নিজের প্রাণ উৎসর্গ করে। বাংলাদেশে টার্কি পালন বা খাওয়ার খুব একটা প্রচলন না থাকলেও রাজধানীর একমাত্র চিড়িয়াখানায় দর্শকদের বিনোদনের জন্য রাখা হয়েছে টার্কি। এখানে এলেই দর্শকরা দেখতে  পারবেন টার্কি পাখিদের। চিড়িয়াখানার পাখি শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম এ জলিল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ২০০২ সালেই চিড়িয়াখানায় টার্কি আনা হয়। বর্তমানে এখানে ছয়টি টার্কি রয়েছে। টার্কিদের আমরা পোলট্রি ফিড, কাঁচা বাদাম, সিদ্ধ ডিম, পাকা পেঁপে, লালশাক-ডাঁটাশাক খেতে দেই। বিশেষ যত্নের অংশ হিসেবে মুরগির মতোই রানীক্ষেত, কলেরা ও বসন্তের টিকা দেওয়া হয় তাদের। এ ছাড়া খাবারের সঙ্গে ভিটামিন ও ক্যালসিয়ামও দেওয়া হয় টার্কিদের। তিনি আরও জানান, পুরোপুরি মুরগির মতো গৃহপালিত প্রকৃতির হওয়ায় এই পাখিটি উৎপাদনের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া পরিবারের খাদ্য তালিকার মাংসের চাহিদা মেটাতে ভূমিকা রাখতে পারে এই পাখি। পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, যখন ইউরোপীয়রা প্রথমবারের মতো টার্কিকে আমেরিকায় দেখতে পেল, তখন তারা ভুলবশত ভাবল যে পাখিটি এক ধরনের গিনিয়া মুরগি। পরবর্তীকালে তারা তুরস্ক থেকে পাখিটিকে মধ্য ইউরোপে নিয়ে আসে। এ কারণে গিনিয়া মুরগি বা গিনিয়া ফাউলকে টার্কি ফাউল নামেও ডাকা হয়। একই কারণে তুরস্কের নামানুসারে উত্তর আমেরিকায় পাখিটির নামকরণ করা হয় টার্কি। ১৫৫০ সালে উইলিয়াম স্ট্রিকল্যান্ড নামের এক ইংরেজ নাবিক টার্কি পাখিকে ইংল্যান্ডে নিয়ে আসেন। মেলিয়াগ্রিস গ্যালোপাভো জাতের টার্কি উত্তর আমেরিকায় খেলাধুলার বিনোদনে ব্যবহার করা হয়। মূলত টার্কি উৎপাদন মৌসুম ভিত্তিক হলেও সারা বছরই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খাবারের উল্লেখযোগ্য অংশ দখল করে আছে এই টার্কি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধিবাসীরা বহু বছর আগ থেকেই থ্যাঙ্কসগিভিং ডের ছুটির দিনে টার্কি ভোজন করে থাকে। এ ছাড়া ইউরোপীয় দেশগুলোতেও বিশেষ বিশেষ দিবসে টার্কি খাওয়া হয়। পুরুষ টার্কি, স্ত্রী টার্কির তুলনায় অধিকতর বড় এবং অনেক বেশি আকর্ষণীয় রঙের হয়ে থাকে। বাস্টার্ড (অস্ট্রেলেশিয়ান টার্কি), মেগাপোড (ব্রাশ টার্কি), স্ন্যাকবার্ড (ওয়াটার টার্কি) সমজাতীয় পাখি হলেও টার্কি জাতীয় পাখি নয়। পূর্ণাঙ্গ পুরুষ জাতীয় টার্কির মাথা ন্যাড়া থাকে। সাধারণত এর মাথা উজ্জ্বল লাল রঙের হয়। কখনো কখনো সাদা কিংবা উজ্জ্বল নীলাভ রঙেরও হয়ে থাকে। পুরুষ জাতীয় টার্কি গবলার বা টম নামেও পরিচিত। এগুলো গড়ে লম্বায় ১৩০ সেন্টিমিটার বা ৫০ ইঞ্চি হয় এবং ওজনে ১০ কেজি বা ২২ পাউন্ড হতে পারে। কিন্তু স্ত্রী প্রজাতির টার্কি পুরুষের তুলনায় ওজনে অর্ধেক হয়। প্রতিটি স্ত্রী টার্কি ৮ থেকে ১৫টি ছোট ছোট দাগের বাদামি বর্ণাকৃতির ডিম পাড়ে। ২৮ দিন অন্তর ডিম ফুটে বাচ্চা টার্কি জন্মায়। বন্য টার্কি সাধারণত বনভূমির পানির কাছাকাছি এলাকায় থাকতেই পছন্দ করে বেশি। ফসলের বীজ, পোকামাকড় এবং মাঝে মাঝে ব্যাঙ কিংবা টিকটিকি খেয়ে জীবনধারণ করে। আত্মরক্ষার্থে দ্রুত দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু এটি কেবলমাত্র স্বল্প দূরত্বে উড়তে পারে। এ সময় টার্কি প্রায় শূন্য দশমিক ৪ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর