বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
গ্যাস লাইট কারখানায় আগুন

শিশুর মৃত্যু দগ্ধদের আর্তনাদ হাসপাতালে

নিজস্ব প্রতিবেদক ও সাভার প্রতিনিধি

‘আমি মরে যাব। যন্ত্রণা সহ্য হচ্ছে না। আল্লাহ বাঁচাও’— এভাবেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে আহাজারি করছিলেন আশুলিয়ায় গ্যাসলাইট তৈরির কারখানায় দগ্ধ খাদিজা। তার মতো যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন আগুনে দগ্ধ আরও ১৯ নারী শ্রমিক। এরই মধ্যে মঙ্গলবার রাত আড়াইটার দিকে না ফেরার দেশে চলে যান দগ্ধ শ্রমিক আসমাউল হুসনা আঁখি (১৪)। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আঁখির শ্বাসনালিসহ শরীরের ৩৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। বার্ন ইউনিটের আবাসিক চিকিৎসক পার্থ শংকর পাল জানান, বার্ন ইউনিটে ভর্তি ২০ জনের শরীরের ১২ থেকে ৭০ শতাংশ পুড়ে গেছে। সবারই শ্বাসনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এদের মধ্যে আইসিইউতে ভর্তি সখিনা, ফাতেমা, রোকসানা রকি, নাজমা ও মাহিরা এবং এইচডিইউতে ভর্তি মুক্তি, মাহমুদা, জান্নাতি, লাভলি এবং জাকিয়ার অবস্থা আশঙ্কাজনক। এদিকে, কালার ম্যাক্স বিডিতে আগুনের ঘটনায় আহত শ্রমিকদের পরিবারগুলোর মাঝে এক লাখ টাকা সহায়তা দিয়েছেন এমপি ডা. এনামুর রহমান। গতকাল সকালে অগ্নিদগ্ধদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা এবং মৃত আঁখির পরিবারকে দাফনের জন্য ২০ হাজার টাকা সহায়তা দেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. হেলালুদ্দিন আহমেদ ও ঢাকার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ডা. মো. সারোয়ার বারী। আঁখির পরিবার জানিয়েছে, কারখানাসংলগ্ন একটি ভাড়াটিয়া কলোনির ৮ নম্বর কক্ষে বাবা আশরাফুল আলম ও মা রাজেকা বেগমের সঙ্গে থাকত আঁখি। তাদের বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুর থানার কাশিমপুরে। দুই মাস আগে কারখানায় চাকরি নেয় আঁখি। বেতন ছিল মাত্র ৩ হাজার ৫০০ টাকা। আঁখির বান্ধবী লিজা মনি ও মাহমুদা জানান, মঙ্গলবার বিকালে বিকট আওয়াজ পেয়ে তারা বাথরুমের পাশ দিয়ে বাইরে বেরিয়ে যান। আঁখি কারখানার হুইলি গেটে কাজ করতেন। যেখানে গ্যাস লাইটটি মাথা লাগানো হয় অর্থাৎ ওকে করা হয়। গতকাল কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, আগুনের ঘটনায় সকাল থেকে আশুলিয়া থানা পুলিশ পুড়ে যাওয়া বিভিন্ন মালামাল জব্দ এবং অফিস কক্ষের বিভিন্ন ফাইল থেকে শ্রমিকদের ছবিসহ বায়োডাটা সংগ্রহ করেছেন। সাধারণ লোকদের ভস্মীভূত স্থাপনার দিকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। এ ছাড়া সকালে শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ফায়ার সার্ভিসের ডিইপিজেড স্টেশন অফিসার আবদুল হামিদ বলেন, ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপণ তদন্ত সাপেক্ষে জানাবেন। দগ্ধ শ্রমিক কুলসুম আক্তারকে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে। তিনি জিরাবো এলাকার কারখানাসংলগ্ন আলী রাজের বাড়িতে ভাড়া থাকেন। কুলসুম বগুড়ার গাবতলী থানার কৃষ্ণপুর গ্রামের আলী আকবরের স্ত্রী। হাসপাতালের আইসিইউতে আগুনে দগ্ধ পাঁচ শ্রমিক রয়েছেন। এদের মধ্যে মিজান ও লালনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। স্বজনরা জানান, এখন পর্যন্ত সরকারি বা কোনো প্রতিষ্ঠান আহতদের দেখভাল ও সহায়তা কিংবা আর্থিক সাহায্যে এগিয়ে আসেনি এবং সাহায্যও পাননি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসায় ব্যয়ভারের টাকার জন্য স্বজনদের চাপ দিচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর