মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

দলের মনোনয়ন পেলেও প্রার্থী হতে পারবেন না তারা

জেলা পরিষদ নির্বাচন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোটার স্থানান্তর জাটিলতায় অনেকেই জেলা পরিষদের প্রার্থী হতে পারছেন না। ঢাকার অনেক ভোটার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে ইসিতে যোগাযোগ করছেন। ঢাকার ভোটারকে মনোনয়নও দিয়েছে অনেক রাজনৈতিক দল। আইন অনুযায়ী জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে সংশ্লিষ্ট জেলার ভোটার হওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাই দলীয় মনোনয়ন পেলেও অনেকে এ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারছেন না। বিএনপি অংশগ্রহণ না করলেও তাদের অনেক নেতা প্রার্থী হতে যোগাযোগ করছেন। কিন্তু তারা ঢাকার ভোটার হওয়ায় নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন না। তফসিল ঘোষণার পর অনেকেই নির্বাচন কমিশনে (ইসি) ভোটার এলাকা স্থানান্তরের আবেদনও করেছেন। কিন্তু ইসি বৃহস্পতিবার তা নাকচ করে দিয়েছে। এদিকে জেলা পরিষদ নির্বাচনে সব নাগরিক ভোটার না হলেও প্রার্থীদের পুরো জেলার ভোটার তালিকাই কিনতে হচ্ছে, যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। ইসি সূত্র জানিয়েছে, দলীয় মনোনয়ন পেয়েও নির্দলীয় জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারছেন না সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের নেতা মুক্তিযোদ্ধা এম আবু ওসমান চৌধুরী। নিজের নির্বাচনী এলাকার ভোটার না হওয়ায় চাঁদপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে তার প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগ এ জেলায় নতুন প্রার্থী দেবে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপসচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান বলেন, এম আবু ওসমান চৌধুরীসহ অন্তত তিনজন ভোটার স্থানান্তরের জন্য আবেদন করেছেন। ভোট সামনে রেখে তফসিল ঘোষণার পর এ ধরনের আবেদন আমলে নিচ্ছে না কমিশন। তাই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা নিজ এলাকার ভোটার না হওয়ায় প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পাবেন না। তিন পার্বত্য জেলা বাদ দিয়ে বাকি ৬১ জেলায় প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য পদে ভোট হচ্ছে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে। বাছাই ৩ ও ৪ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১১ ডিসেম্বর। ভোট হবে ২৮ ডিসেম্বর সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত। নির্দলীয় এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ৬১ জেলায় একক প্রার্থী মনোনয়ন দিয়ে শুক্রবার তালিকা প্রকাশ করেছে। বিএনপি ও জাতীয় পার্টি এ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ২৫ বছর বয়সী বাংলাদেশের যে কোনো ভোটার জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারলেও ভোট দিতে পারবেন না। আর জনপ্রতিনিধিরা ভোটার হলেও প্রার্থী হতে পারবেন না। সংসদ, সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচন হলেও জেলা পরিষদ আইনে প্রত্যক্ষ ভোটের বিধান নেই। প্রত্যেক জেলার অন্তর্ভুক্ত সিটি করপোরেশনের (যদি থাকে) মেয়র ও কাউন্সিলর, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর এবং ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যের ভোটেই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য নির্বাচিত হবেন। এ হিসেবে স্থানীয় সরকারের চার ধরনের প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬৭ হাজার নির্বাচিত প্রতিনিধি এ নির্বাচনে ভোট দেবেন। বর্তমানে ৬১ জেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত পরিষদের প্রশাসকও রয়েছেন। নির্বাচনে অংশ নিতে তাদেরও পদ ছাড়তে হবে। ইসির উপসচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান জানান, স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে সংশ্লিষ্ট জেলা পরিষদের ভোটার হতে হবে। ২০ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার পর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভোটার স্থানান্তর বন্ধ রয়েছে।

ভোটার তালিকা কেনা নিয়ে ক্ষোভ : জেলা পরিষদ নির্বাচনে সব নাগরিক ভোটার না হলেও প্রার্থীদের পুরো জেলার ভোটার তালিকাই কিনতে হচ্ছে, যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। গাইবান্ধার জেলা পরিষদে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক জাসদের খাদিমুল ইসলাম খুদি বলেন, ‘জেলা নির্বাচন অফিসে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় কর্মকর্তারা তাকে বলেছেন, ভোটার তালিকার সিডি কিনতে ৫৪ হাজার ৫০০ টাকা দিতে হবে। সেই সঙ্গে জামানত ২০ হাজার টাকা। নির্বাচনে সাধারণ ভোটাররা ভোট দিতে পারছেন না। ভোট দেবেন প্রতি জেলার সহস্রাধিক জনপ্রতিনিধি। তাহলে কেন আমাকে পুরো জেলার ভোটার তালিকা অর্ধলাখ টাকা দিয়ে কিনতে হবে?’

মন্ত্রী কন্যা হলেন বিদ্রোহী প্রার্থী : পাবনায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির মেয়ে জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এতে দলের মধ্যে চরম অসন্তোষ ক্ষোভ বিরাজ করছে। দলীয় সূত্র জানায়, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরিফ ডিলুর মেয়ে মাহজাবিন শিরিন পিয়া গতকাল সকালে পাবনা জেলা প্রশাসক রেখা রানী বালোর কাছে তার মনোনয়নপত্র জমা দেন। এর আগে জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য পিয়া ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। বিষয়টি নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। 

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্ত রেজাউল রহিম লাল বলেন, দেশের সব নাগরিকের নির্বাচন করার অধিকার রয়েছে। কে নির্বাচনে অংশ নিবেন কিনা সেটা একান্তই তার ব্যক্তিগত বিষয়। তবে জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশকে অমান্য করে আওয়ামী লীগের কেউ এ ধরনের কাজে অংশ নিলে দল তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।  নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, এটা তো আর পৈতৃক সম্পত্তি নয়, যে খুশি মতো সবকিছু করবেন। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গেলে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বাবা মন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি, স্বামী আবুল কালাম আজাদ মিন্টু ঈশ্বরদী পৌরসভার মেয়র, তিনি ঈশ্বরদী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন, ভাই সিহান শরিফ তমাল উপজেলা যুবলীগের সভাপতি, চাচা আনিস শরিফ লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। একই পরিবার থেকে আর কত চান? এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক সরদার মিঠু আহমেদ বলেন, দলীয় শৃঙ্খলার বাইরে কেউ নয়। যদি জননেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ কাজ করে সেই দায়ভারও তাকেই নিতে হবে। মন্ত্রী কন্যা ও পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহজাবিন শিরিন পিয়া বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার জন্যেই আমার জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি আরও বলেন, আমি শিক্ষা জীবন থেকে রাজনীতি করছি। ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে আজকের এ অবস্থান সৃষ্টি করেছি। বাবা-চাচা বা কারও দানে আমি এ অবস্থানে আসিনি, নিজ যোগ্যতায় এ অবস্থান সৃষ্টি করার কথাও বলেন তিনি। এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স বলেন, আমরা সর্বশেষ সময় পর্যন্ত চেষ্টা করব যেন বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকে। তারপরেও যদি কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে সেই দায় দায়িত্ব তাকেই বহন করতে হবে এবং দল তার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

 

 

সর্বশেষ খবর