মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
রাতে দলে দলে অনুপ্রবেশ

টেকনাফে ১৩৩৮ রোহিঙ্গার আশ্রয়

কক্সবাজার প্রতিনিধি

রাতের অন্ধকারে মিয়ানমার থেকে দলে দলে রোহিঙ্গা ঢুকছেন বাংলাদেশে। বিজিবির চোখ এড়িয়ে তারা আশ্রয় নিচ্ছেন টেকনাফের লেদা, শামলাপুর, উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পসহ বিভিন্ন এলাকায়। গতকাল দেখা গেছে, শুধু লেদা ক্যাম্পেই আশ্রয় নিয়েছেন ১ হাজার ৩৩৮ রোহিঙ্গা। এদিকে বিজিবি গতকালও নাফ নদের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টারত আটটি নৌকায় থাকা শতাধিক রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠিয়েছে। জানা গেছে, টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে (স্থানীয় ভাষায় টাল) অনুপ্রবেশকারী ১ হাজার ৩৩৮ জনের মধ্যে ধর্ষিতা, গুলিবিদ্ধ ও নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গারাও রয়েছেন। এ ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা ডা. দুদু মিয়া জানান, লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৬টি ব্লক রয়েছে। ২৮ নভেম্বর সকাল পর্যন্ত ক্যাম্পে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গার তালিকা করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, এ সংখ্যা ১ হাজার ৩৩৮। এরা বর্তমানে আত্মীয়স্বজনের আশ্রয়ে রয়েছেন। উখিয়ার কুতুপালং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প, টেকনাফের শামলাপুর অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা এখনো নিরূপণ করা হয়নি। তা ছাড়া সমুদ্র উপকূলবর্তী ঝাউবাগান, সংরক্ষিত বনাঞ্চল, কক্সবাজার, মহেশখালী, উখিয়া, নাইক্ষ্যংছড়িসহ বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়া অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা এ পর্যন্ত ৩০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। মিয়ানমার বাহিনীর লোমহর্ষক অত্যাচারের বর্ণনা দিয়েছেন অনুপ্রবেশকারীরা। তারা জানান, আরাকান রাজ্যে মুসলমানদের গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেককে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মহিলাদের ধর্ষণসহ বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। মিয়ানমার বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে প্রাণ বাঁচাতে অর্ধাহারে-অনাহারে বনে-জঙ্গলে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে টেকনাফের বিভিন্ন ঘাট দিয়ে গভীর রাতে তারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছেন। বাংলাদেশে ঢুকে অন্য রোহিঙ্গাদের সঙ্গে লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। এই ক্যাম্পের (অনিবন্ধিত) চেয়ারম্যান হাফেজ আয়ুব জানান, রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিলেও খাবার ও শীতবস্ত্রের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। এরা সবাই আরাকান রাজ্যের চালিপ্রাং, জামবইন্যা, রাইঙ্গাদং, রাইম্যারবিল, কিয়ারীপ্রাং, বড় গউজবিল, ছোট গউজবিল, মগনামা, হাতিপাড়া, প’খালীসহ বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, মিয়ানমারের মংডু রাখাইন প্রদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের ওপর দমন-পীড়ন অব্যাহত রয়েছে। আশ্রয়হীন হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশু এপারে চলে আসার জন্য সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে অপেক্ষা করছে। এপারে বিজিবির কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী থাকার পরও থেমে নেই অনুপ্রবেশ।

রোহিঙ্গাদের নিয়ে হাইকোর্টে রিট : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলিমদের বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে দেশে অনুপ্রবেশে বাধা দেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন দায়ের করা হয়েছে। রিটে সাময়িক সময়ের জন্য সীমান্ত খুলে দেওয়ার নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট করা হয়েছে বলে গতকাল সাংবাদিকদের জানান সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী আবু ইয়াহিয়া দুলাল।

সর্বশেষ খবর