বুধবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

নিরাপত্তা ঝুঁকিতে বাণিজ্যিক ব্যাংক

নেই সশস্ত্র প্রহরী স্বরাষ্ট্রে চিঠি দিয়েও কাজ হয়নি

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

নিরাপত্তা ঝুঁকিতে বাণিজ্যিক ব্যাংক

দেশে ব্যবসারত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের শাখার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সশস্ত্র নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগের নির্দেশনা দেওয়া হলেও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাকর্মী পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ঝুঁকি নিয়েই কার্যক্রম চালাচ্ছে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। বিষয়টি সমাধানে নিয়ন্ত্রক সংস্থা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিলেও সেখান থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এটি তাদের দেখার বিষয় নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের মতামত নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। শেষে উপায়ান্তর না দেখে ব্যাংকিং বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআরপিডি শাখা থেকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে চিঠি পাঠিয়ে এ বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআরপিডি শাখার উপমহাব্যবস্থাপক রূপ রতন পাইন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নিরাপত্তা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার বাস্তবায়নে কিছুটা সমস্যায় পড়েছে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। কারণ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর শাখায় সশস্ত্র প্রহরী নিয়োগের বিষয়ে নীতিমালা থাকলেও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো নীতিমালা নেই। এ ছাড়া প্রয়োজনমতো সশস্ত্র প্রহরী পাওয়া যাচ্ছে না বলেও জানিয়েছে ব্যাংকগুলো। আমরা এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর কাছে মতামত চেয়েছি।’ অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে অর্থ লুট ও ডাকাতির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এ নিয়ে তাদের উদ্বেগ জানায় বাংলাদেশ ব্যাংকে। ২০১৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ব্র্যাক ব্যাংকের জয়পুরহাট শাখার দেয়াল কেটে এক কোটি ৯৫ লাখ টাকা চুরি করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ওই বছরের ১৪ ডিসেম্বর গাজীপুরে জনতা ব্যাংকের জয়দেবপুর শাখা থেকে ৬০ লাখ টাকা চুরি হয়। একই বছরের ২৬ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জে সোনালী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসের স্ট্রংরুম ভেঙে টাকা নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। গত বছর মার্চে চট্টগ্রামের কমার্স ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে কয়েক কোটি টাকা লুট হয়। একই বছরের এপ্রিলে কমার্স ব্যাংকের আশুলিয়া শাখায় দিনের বেলায় ডাকাতির সময় ব্যাংকের ম্যানেজারসহ আটজন নিহত ও ১২ জন আহত হন। এ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সুপারিশে পরিস্থিতি মোকাবিলায় গত বছর ১২ মে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠক করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে বাংলাদেশ ব্যাংক একই বছর ৫ জুলাই একটি সার্কুলার জারি করে। ওই সার্কুলারে দেশি-বিদেশি সরকারি ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে তাদের শাখার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে অধিকসংখ্যক সশস্ত্র প্রহরী নিয়োগের নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে আনসার সদস্যের অপ্রতুলতার কারণে ওই নির্দেশনা পালন করতে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সমস্যায় পড়ছে বলে জানিয়ে দেওয়া হয় বাংলাদেশ ব্যাংককে। সূত্রগুলো জানায়, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর সশস্ত্র প্রহরী নিয়োগে ব্যাংকগুলোর করণীয় সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চেয়ে সম্প্রতি চিঠি দেওয়া হয়। ১০ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই চিঠির জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানায়, ব্যাংক শাখায় সশস্ত্র প্রহরী নিয়োগের বিষয়টি বাস্তবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে জড়িত। এ বিষয়ে ওই বিভাগের মতামত নেওয়াই বাস্তবসম্মত হবে বলে স্বরাষ্ট্রের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। শেষে গত সপ্তাহে এ বিষয়ে মতামত জানতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে চিঠি পাঠায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এদিকে ওই চিঠি পাওয়ার পর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগেরও এ বিষয়ে কিছু করার নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, বেসরকারি ব্যাংকের কোনো ইস্যুতে সরকার কোনো সিদ্ধান্ত বা মতামত দিতে পারে না। এ বিষয়টির সমাধানে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদকেই উদ্যোগ নিতে হবে।    

সর্বশেষ খবর