শুক্রবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বরিশালের রাজনীতিতে তরুণের জয়জয়কার

রাহাত খান, বরিশাল

বরিশালের রাজনীতিতে তরুণের জয়জয়কার

বরিশাল নগরীর প্রাণকেন্দ্র সদর রোড ও নদীবন্দরের সামনে দুটি বিশাল বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের আগে অনুমোদিত মহানগর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির নেতাদের ছবিসহ পরিচিতি দেওয়া হয়েছে ওই দুই বিলবোর্ডে। এতে দেখা যায়, কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, নয়জন সহ-সভাপতি, আইন সম্পাদক, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক ও ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ছাড়া বলতে গেলে সবই বয়সে তরুণ। অনেকে ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে সরাসরি স্থান পেয়েছেন মূল দল আওয়ামী লীগে। আবার পদ-পদবিসহ  কোনো সহযোগী সংগঠনের রাজনীতি না করেও অনেকে স্থান পেয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিতে। নতুন কমিটির সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাদিক আবদুল্লাহ যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নবাগত, বয়সেও তরুণ সাদিক বাবা সাবেক চিফ হুইপ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপির প্রভাবে পেয়েছেন দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ। এই কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক গাজী নঈমুর রহমান লিটু, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক হাসান মাহমুদ বাবু, দফতর সম্পাদক হুমায়ুন কবির, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক গোলাম সরোয়ার রাজীব, বন ও পরিবেশ সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন কাইজার, মহিলা সম্পাদক মিনু রহমান, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন, শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক ফরহাদ বিন আলম

জাকির, শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক নীরব হোসেন টুটুল, শ্রম সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মিজানুর রহমান, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা সম্পাদক ডা. হিমাংশু শংকর বিশ্বাস, দুই সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ নুরুদ্দিন শাহিন ও জাহিদুর রহমান মনির, উপ-দফতর সম্পাদক কাজী মুনির উদ্দিন তারিক, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শুভাশীষ ঘোষ বাপ্পী এবং কোষাধ্যক্ষ মেহেদী হাসান চৌধুরী সবাই এ প্রজন্মের। এ ছাড়া কমিটির ১ নম্বর সদস্য সদর আসনের এমপি জেবুন্নেছা আফরোজসহ অনেকেই বয়সে তরুণ। এক কথায় মহানগর আওয়ামী লীগে তারুণ্যের জয়জয়কার। ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর কাউন্সিল অনুষ্ঠানের চার বছর পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন হওয়া জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছে তরুণ নেতৃত্ব। কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বরিশাল বিভাগের কোনো তরুণ নেতা স্থান না পেলেও প্রক্রিয়াধীন উপকমিটিতে স্থান পেতে যাচ্ছেন ছাত্রলীগের একাধিক সাবেক নেতা।

২০১৪ সালের ২২ নভেম্বর সাধারণ সম্পাদক কামরুল আহসান শাহীনের অকালমৃত্যুতে বরিশাল মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউদ্দিন শিকদার জিয়া। ২০১১ সালে কমিটি গঠনের পর ২০১৩ সালে কেন্দ্র থেকে অনুমোদন পাওয়া ১৭১ সদস্যের মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটির সহ-সভাপতি কে এম শহীদুল্লাহ সহিদ ও সাবেক ছাত্রদল নেতা আক্তার হোসেন মেবুল, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ আকবর হোসেন ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর মীর জাহিদুল কবির, সহ-সম্পাদক আনোয়ারুল হক তারিন ও সৈয়দ জামাল হোসেন নোমান, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক খন্দকার আবুল হাসান লিমন, শিক্ষা সম্পাদক পারভেজ আকন বিপ্লব, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক শাহ আমিনুল ইসলাম আমীন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আলাউদ্দিন আহম্মেদ, স্বাস্থ্য সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, স্বেচ্ছাবিষয়ক মাহবুবুর রহমান পিন্টু, সহ-যুববিষয়ক সম্পাদক কামরুল হাসান রতন, আইন সম্পাদক অ্যাডভোটেক আবুল কালাম আজাদ ইমন, সহ-আইনবিষয়ক সম্পাদক তছলিম উদ্দিন এবং দফতর শাহেদ আকন সম্রাট বয়সে অনেকটাই তরুণ। ২০১০ সালের ৩০ ডিসেম্বর গঠিত বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আ ক ন কুদ্দুসুর রহমানও বয়সে তরুণ। বিএনপির সব শেষ কাউন্সিলে দলের বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পেয়েছেন তিনি। এ ছাড়া তরুণ আইনজীবী নুরুল আলম রাজু উত্তর জেলা বিএনপির দফতর সম্পাদক এবং উত্তর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান মিন্টু পেয়েছেন প্রচার সম্পাদক পদ। ২০১৩ সালে গঠিত বিএনপির বরিশাল দক্ষিণ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম শাহীনও বয়সে তরুণ। এ ছাড়া উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন তরুণ নেতারা। বিএনপির সব শেষ কাউন্সিলে বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন বিএম কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক এজিএস বিলকিস জাহান শিরিন এবং সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন সাবেক ভিপি মাহবুবুল হক নান্নু। ভোলার ফুটবলার আমিনুল ইসলামও পেয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রীড়া সম্পাদক পদ। এ ছাড়া বিএনপির নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য হয়েছেন ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক দুই সহ-সভাপতি ভোলার নুরুল ইসলাম নয়ন ও হায়দার আলী লেলিন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি পটুয়াখালীর হাসান মামুন। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হয়েছেন তরুণ নেতা এ কে এম মোস্তফা।

 এ ছাড়া মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোর্শেদ চুন্নু এবং জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য ও মুলাদী উপজেলার সাধারণ সম্পাদক মীর মোকসেদও বয়সে তরুণ। বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সাবেক সভাপতি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী শিক্ষাবিদ প্রফেসর এম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতাযুদ্ধ ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তরুণরাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ছাত্রনেতাদের অনুরোধেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ভাষা আন্দোলনের সময় তৎকালীন পাকিস্তানের অদ্বিতীয় নেতৃত্ব মোহাম্মাদ আলী জিন্নাহ যখন রাষ্ট্রভাষা উর্দু ঘোষণা দিলেন, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতারা আঙ্গুল উঁচিয়ে প্রতিবাদ করে বলেলেন, না, বাংলা হবে রাষ্ট্রভাষা। তিনি বলেন, তরুণরা কর্মচঞ্চল ও কর্মোদ্দীপক। তরুণদের হাতে নেতৃত্ব দিলেই হবে না, তাদের সৎ পরামর্শ এবং সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে হবে। তরুণরা সেগুলো বাস্তবায়ন করবে। তাহলেই দল উপকৃত হবে। আর তাদের যদি ভালোভাবে পরিচালিত করা না যায়, তারা যদি বিপথগামী হয়, তাহলে দলের সর্বনাশ হবে। এগুলো নীতিনির্ধারকদের ভাবতে হবে।

সর্বশেষ খবর