শুক্রবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

নগরীর শৃঙ্খলা ফেরাতে অভিযানে নেমেছে পুলিশ

আলী আজম

ঢাকা মহানগরীর রাস্তায় শৃঙ্খলা ফেরাতে অভিযানে নেমেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজট নিরসনে অপ্রাপ্তবয়স্ক, লাইসেন্সবিহীন বা অবৈধ লাইসেন্সধারী চালকদের ধরতে অভিযান চলছে। পুলিশ বলছে, নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এ অভিযানে পাঁচ শতাধিক চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। চালকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্যই মূলত এ অভিযান।

ট্রাফিক পুলিশ বলছে, মোটরযান আইনে ২০ বছরের নিচে কোনো ব্যক্তি পেশাদার চালকের আসনে বসতে পারবে না। কোনো ব্যক্তি লাইসেন্স ছাড়া মোটরযান অথবা যাত্রীবাহী মোটরযান চালালে বা অন্যকে চালাতে দিলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ। এসব অপরাধে কোনো চালক ধরা পড়লে তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করা হচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অপ্রাপ্তবয়স্ক ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের বিরুদ্ধে অভিযানে এ পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক চালককে ধরা হয়েছে। কিন্তু অপ্রাপ্তবয়স্ক বা শিশু চালকদের ধরা হলেও মুচলেকায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এ অভিযানের ফলে সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজট অনেকাংশে কমে যাবে এবং রাস্তার শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলছেন, সড়কে গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ, চালক ও মালিকের দায়বদ্ধতা সৃষ্টিসহ বিভিন্ন বিষয়ে মোটরযান আইনের বিভিন্ন বিধান রয়েছে। কিন্তু ট্রাফিক আইন সম্পর্কে চালকদের বেশির ভাগেরই তেমন কোনো ধারণা থাকে না। ফলে সড়ক দুর্ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। দুর্ঘটনা কমাতে অবৈধ চালকদের ধরতে অভিযান শুরু হয়েছে। চালকের পাশাপাশি সহকারী চালকের জন্যও লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক। আইন অনুসারে এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়াই অভিযুক্ত চালককে গ্রেফতার করতে পারবেন।

ডিএমপি সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে ডিএমপির চার বিভাগের অভিযানে হাইড্রোলিক হর্ন ও হুটার বেকন লাইট ব্যবহার, উল্টোপথে চলাচল, কালো প্লাস ব্যবহার, লাইসেন্স না থাকা ও সিগন্যাল অমান্য করায় ৮ লাখ ২৩ হাজার ২১১টি মামলা এবং ২৯ কোটি ৩১ লাখ ৩১ হাজার ২৯০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। বুধবার ট্রাফিকের চার বিভাগের অভিযানে ৫ হাজার ২৩টি মামলা ও ১৫ লাখ ১১ হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এ সময় ৫১টি গাড়ি ডাম্পিং ও ৪৩৬টি গাড়ি রেকারও করা হয়। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় সাড়ে ৩ হাজার লোক মারা যাচ্ছে। বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা ১০ হাজার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপ্রাপ্তবয়স্ক বা অবৈধ লাইসেন্সধারীদের দিয়ে গাড়ি চালানো, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন চলাচল, গাড়ি চালানোর সময় চালকের মোবাইল ফোন ব্যবহার, অতিরিক্ত যাত্রী ও পণ্য পরিবহন, ট্রাফিক আইন না মানা, নিয়োজিতদের দায়িত্বে অবহেলা, চালকদের বেপরোয়া মনোভাব, অদক্ষতা ও অসতর্কতা এবং অরক্ষিত রেললাইন দুর্ঘটনা এর অন্যতম কারণ। ডিএমপির যুগ্ম-কমিশনার (ট্রাফিক-দক্ষিণ) মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দুর্ঘটনা ও যানজট এড়াতে অপ্রাপ্তবয়স্ক ও অবৈধ লাইসেন্সধারীদের বিরুদ্ধে মোটরযান আইনে গ্রেফতার অভিযান শুরু হয়েছে। সম্প্রতি ট্রাফিক পুলিশের কাজের মান বাড়াতে ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশে কনস্টেবল থেকে শুরু করে ডিসি পর্যন্ত প্রত্যেকের সঙ্গে সমন্বয় সভা করা হয়েছে। সেখানে ৪৫টি টকিং পয়েন্ট ছিল। এর মধ্যে দুর্ঘটনা এড়াতে করণীয়, যানজট নিরসন, আচরণ, ক্রসিং ব্যবস্থাপনা, মামলা উল্লেখযোগ্য। অপ্রাপ্তবয়স্ক ও অবৈধ লাইসেন্সধারীদের থামাতে এ অভিযান চলবে।

সর্বশেষ খবর