চলনবিলের চির চেনা ঘুঘু পাখি এখন বিলুপ্তির পথে। নিরাপদ আবাস ও খাদ্যের অভাব, নির্বিচারে পাখি নিধন, ফসলের জমিতে অধিকমাত্রায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগের কারণে গ্রাম বাংলার অতি পরিচিত ঘুঘু পাখি দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। চলনবিলের পথে-প্রান্তরে এখন আর সকাল-দুপুর ক্রউ-উ-উ-উ-উ বা গুউ-গুউ-গুউ-গুউ স্বরে ঘুঘু পাখির মধুর ডাক শোনা যায় না। সচরাচর কৃষি জমি, খামার, ঝোপ-ঝাড়, বন-জঙ্গল ও গ্রামের গাছে গাছে ঘুঘু পাখির দেখা মিলত। অনেক শৌখিন মানুষ খাঁচায় আটকে ঘুঘু পাখি পুষতো। মূলত ধানই ঘুঘুর প্রধান খাদ্য। তাছাড়া ঘাস ও আগাছার বিচি, শস্যদানা, গাছের কুঁড়ি ও কচি পাতাও খায় এরা। গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন প্রজাতির ঘুঘু দেখা যায়। তার মধ্যে রাম ঘুঘু, মেঠে ঘুঘু, লাল ঘুঘু ও তিলি ঘুঘুই বেশি দেখা যায়। স্ত্রী ঘুঘু সাধারণত বছরে একবার এক জোড়া ডিম পাড়ে। মাত্র ১২ দিনে সেই ডিম থেকে বাচ্চা ফোটে। এক সময়ে গ্রামের মাঠে মাঠে, গাছের ডালে ডালে ঘুঘু পাখির দেখা মিললেও এখন এ পাখির দেখা পাওয়াই দুরূহ হয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়িত শিকারিদের হাতে ধরা পড়া ও প্রতিকূল পরিবেশের কারণে অত্যন্ত ভীতু ও লাজুক প্রকৃতির ঘুঘু পাখি প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম বলেন, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক মিশ্রিত খাবার খেয়ে পাখির সংখ্যা ও ডিম পাড়ার পরিমাণ কমে যাওয়া, ঝোপ-ঝাড় ও গাছপালা কেটে ফেলায় নিরাপদ আবাসস্থলের অভাব, নির্বিচারে শিকার করাসহ বিভিন্ন কারণে ঘুঘু পাখি বর্তমানে বিলুপ্ত হতে চলেছে। উপজেলা বন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ জানান, ১৯৭৪ সালের বন্যপ্রাণী আইন অনুযায়ী পাখি শিকার দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু আইন থাকলেও তার সঠিক প্রয়োগ না থাকায় দিন দিন ঘুঘুসহ বিভিন্ন পাখি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের সহযোগিতার অভাবে এসব পাখি শিকারির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
