শনিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

সবচেয়ে দুর্বল বাংলাদেশের ইউজিসি

মঞ্জুরি কমিশনের প্রতিবেদনে তথ্য

আকতারুজ্জামান

সবচেয়ে দুর্বল বাংলাদেশের ইউজিসি

উচ্চশিক্ষা মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৩ সালে। সে সময় দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল মাত্র ছয়টি। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চিন্তাধারাই ছিল না তখন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তদারকির জন্য প্রণয়ন করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন আইন-১৯৭৩। এরপর ১৯৯২ সালে দেশে প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। একই বছরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৯২ প্রণয়ন করা হলেও ২০১০ সালে ’৯২ সালের আইন রহিত করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু এ আইনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রমাণ পেলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কার্যত কোনো ক্ষমতা অর্পণ করা হয়নি ইউজিসিকে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চালুর মাত্র ২৪ বছরের ব্যবধানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা পৌঁছায় ৯৬টিতে। ফলে প্রতিষ্ঠার ৪২ বছর পরেও ইউজিসি ঠুঁটো জগন্নাথই রয়ে গেছে।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের প্রতিবেদন-২০১৫ বলছে- দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সব থেকে দুর্বল প্রতিষ্ঠান হচ্ছে এদেশের ইউজিসি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি, অনিয়ম, অস্বচ্ছতা, জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নিতে পারে না এই প্রতিষ্ঠানটি। দীর্ঘ সময় ধরে ইউজিসিকে উচ্চশিক্ষা কমিশনে রূপ দেওয়ার দাবিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দফায় দফায় প্রস্তাবনা-আবেদন জানিয়ে আসলেও এ ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি দৃশ্যমান নয়। ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী ইউজিসিকে কমিশনে রূপ দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠান। বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নানও ইউজিসিকে কমিশনে রূপ দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন জমা দিয়েছেন। গতকাল তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ১৯৭৩ সালের আইন দিয়েই এখনও চলছে মঞ্জুরি কমিশন। তখন বিশ্ববিদ্যালয় ছিল মাত্র ৬টি। ছাত্র ছিল প্রায় ৩০ হাজার। এখন সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ১৪০টি। ছাত্রছাত্রী রয়েছে প্রায় ৩২ লাখ। ইউজিসির নির্বাহী কোনো ক্ষমতা নেই বললেই চলে। আইন ভঙ্গ করলে তাত্ক্ষণিকভাবে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি না আমরা। অথচ ভারত, পাকিস্তান এমনকি আফগানিস্তানের ইউজিসিরও এ ক্ষমতা রয়েছে। ফিজিতে মাত্র তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও সেখানে উচ্চশিক্ষা কমিশন রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষা কমিশন এখনো গঠিত হয়নি। আমরা একটি কার্যকর উচ্চশিক্ষা কমিশন চাই। যেটি অভিজ্ঞ শিক্ষকদের দিয়ে গঠিত হবে। কমিশনের সেক্রেটারিয়েট থাকবে। এতে মঞ্জুরি কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তদারকির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন দায়িত্বে থাকলেও তাদের বিভিন্ন অনিয়মের প্রমাণ পেয়েও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ বা আবেদন ছাড়া মূলত কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেন না তারা। যে কোনো সিদ্ধান্তের জন্য এ প্রতিষ্ঠানটি অসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দিকে। শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১৯৭৩ সাল ও ২০১৬ সালের প্রেক্ষাপট এক নয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সার্বিক তদারকির জন্য ইউজিসির প্রচলিত কর্মপরিধির বিস্তৃতি ও ক্ষমতায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। দেশের উচ্চশিক্ষার প্রসার ও উন্নয়নের স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে উচ্চশিক্ষা কমিশন হিসেবে গড়ে তোলা সময়ের দাবি। সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে পদক্ষেপ নেয়, আইনগত জটিলতায় সেখানেও সমস্যা দেখা দেয়। ইউজিসিকে উচ্চশিক্ষা কমিশনে রুপ দেওয়ার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) মো. হেলাল উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, উচ্চশিক্ষা কমিশন আইনের খসড়া তৃতীয় বারের মতো মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে পর্যালোচনার জন্য রয়েছে। সচিব কমিটির ফাইন্ডিংস পেলে এ ব্যাপারে কর্মপ্রক্রিয়া শুরু হবে। সচিব কমিটি আইনটি অনুমোদন দিলে তা মন্ত্রিসভায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর