শনিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
অগ্নিনির্বাপণ

ফায়ার সার্ভিসের সুপারিশ ৭ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি

নিজস্ব প্রতিবেদক

অগ্নিনির্বাপণে ফায়ার সার্ভিসের সুপারিশ সাত বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা ও অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে ফায়ার সার্ভিসের একটি তদন্ত কমিটি ২৭টি সুপারিশ সংবলিত একটি প্রতিবেদন জমা দেয়। সুপারিশগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়ায় অগ্নিদুর্ঘটনার ক্ষতি কমিয়ে আনা যাচ্ছে না। অবশ্য ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তারা বলছেন, সুপারিশের অনেক কিছুই পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আরও কিছু বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।  ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের ১৩ মার্চ রাজধানীর একটি বহুতল ভবনে আগুন লাগে। সে ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস সদর দফতর থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে সেই কমিটি একই বছরের ৭ মে ২৭টি সুপারিশসহ একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। সুপারিশে বলা হয়, ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড অনুযায়ী বহুতল ও বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ, ভবন নির্মাণ শেষে ফায়ার সার্ভিসের অকুপেন্সি সার্টিফিকেট গ্রহণে বাধ্যতামূলক করা, স্থায়ী অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়মিত পরীক্ষা করা, প্রতিটি ভবনের নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার কনটিনজেন্সি প্ল্যান রাখা, ১৫তলা ভবনের ছাদে হেলিপ্যাড স্থাপন করা, জনসচেতনায় নিয়মিত ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় অনুষ্ঠান প্রচার করা, বড় দুর্ঘটনা মোকাবিলায় সরকারি উদ্যোগে স্থায়ীভাবে কেন্দ্রীয় কমান্ড সেন্টার স্থাপন করা। এ ছাড়াও ফায়ার সার্ভিসকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে টিটিএল ও স্নোরকেল গাড়িসহ অন্যান্য গাড়ির পরিমাণ বাড়ানো, বিশেষ টিম সংরক্ষণ, লোকবল বৃদ্ধি ও রাজধানীর মিরপুরের ট্রেনিং কমপ্লেক্সকে ঢাকার বাইরে স্থানান্তর করে একাডেমিতে রূপান্তর করার সুপারিশ ছিল। নগরীতে বহুতল ভবন নির্মাণের নকশা অনুমোদন করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। কিন্তু নকশা অনুমোদন ছাড়াই পুরান ঢাকার চকবাজার, কোতোয়ালি, যাত্রাবাড়ী, সবুজবাগ, বাসাবো, সূত্রাপুর ও গেণ্ডারিয়াসহ সারা ঢাকায় গড়ে তোলা হচ্ছে অসংখ্য ভবন। একই সঙ্গে কিছু কিছু ভবন অনুমোদন ছাড়াই উঁচু করা হচ্ছে। পুরান ঢাকায় ভবনের ছড়াছড়ি। বেশিরভাগ ভবন প্রধান সড়কের পাশেই অবস্থিত। যেগুলোর নিচতলায় রয়েছে দোকান আর ওপর তলাগুলো আবাসিকের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, এসব ভবনের জায়গার পরিমাণ দুই থেকে আড়াই শতাংশের মধ্যে। কিন্তু প্রতিটি ভবনই নির্মাণ করা হয়েছে পাঁচ তলার ওপরে। আগে এসব ভবন চার তলা পর্যন্ত নির্মাণ করা হলেও পরবর্তীতে অনুমোদন ছাড়াই তা পাঁচ এবং ছয় তলায় উন্নীত করা হয়েছে। এসব এলাকায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা মোকাবিলা করতে বেশ বেগ পেতে হবে সংশ্লিষ্টদের। আশপাশে সরু গলি ও পানি সরবরাহের সুনির্দিষ্ট স্থান না থাকায় অগ্নিদুর্ঘটনায় দুর্ভোগ পোহাতে হয় ফায়ার সার্ভিস কর্মীদেরও। ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর তাজরিন ফ্যাশনসের কারখানায় আগুনে ১১২ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। আহত হয় দেড় শতাধিক শ্রমিক। আগুন লাগার পর শ্রমিকরা বের হতে পারেনি বলে তাদের মৃত্যু হয়েছিল এমন অভিযোগ ওঠে। গত ২২ নভেম্বর সাভারের আশুলিয়ায় একটি গ্যাস লাইটার কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে দুজনের মৃত্যু হয়। দগ্ধ ২৫ জনকে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ভবন নির্মাণে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সুবিধা নিশ্চিত না করায় অগ্নিদুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমানো যাচ্ছে না। এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমদ খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের অনেক সুপারিশই বাস্তবায়ন হয়েছে। আরও কিছু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। একাডেমি করার জন্য আমরা জমি দেখছি। জমি পেলেই তার বাস্তবায়ন হবে।

 

সর্বশেষ খবর