মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার চিতলা ভিত্তি পাটবীজ খামারে একের ভিতর দুই চাষ করে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছে। ১৯৫৫ সালে ৪০১ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় এই খামারটি। প্রথম দিকে পাটবীজ গবেষণা ও উৎপাদনের কাজ চলত এখানে। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) উপর খামারটি ন্যস্ত হয়। বিএডিসি পাটবীজের পাশাপাশি ধান, গম ও আলুর ভিত্তিবীজ উৎপাদন শুরু করে। এতে খামারটিতে লোকসান হতে থাকে। এই লোকসান নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে চলে ২০১৫ সাল পর্যন্ত। ২০১৫ সালের শেষের দিকে এই খামারে যোগ দেন যুগ্ম পরিচালক কৃষিবিদ আবির হোসেন। প্রথমে জানতে পারেন এ জমিগুলো ভিত্তিবীজ উৎপাদনের অনুপযোগী। এ নিয়ে অপর ৩ কৃষিবিদ সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে জমিগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে চাষ উপযোগী করে তোলেন। এ বছরের প্রথম দিকে এ পতিত জমিগুলোতে বিভিন্ন সবজি, কলা ও বিভিন্ন জাতের পেঁপে চাষ করা হয়। এতে সফলতা পায় খামারটি। ইতিমধ্যে খামারের কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে লক্ষাধিক টাকা। ফার্ম এলাকার অধিবাসী ও গাংনী টেকনিক্যাল কলেজ এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্টের অধ্যক্ষ মো. আবুল কালাম আজাদ স্বপন বলেন, এ ধরনের চাষ চিতলা বীজ খামারে আগে কখনো দেখা যায়নি। এ খামারকে এখন সবুজের স্বর্গ ভূমি বলা যায়। শ্রমিক আবু হোসেন জানান, এর আগে আমরা ৭০ জন শ্রমিক খামারে শুধু আগাছা কেটে আর পাহারা দিয়ে হাজিরা নিতাম। তেমন কোনো কাজ ছিল না। এখন আমরা ব্যস্ত সময় পার করছি। জেলার আশপাশ থেকে এ খামার দেখতে লোকজন আসছে। ধানখোলা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আ. রাজ্জাক বলেন, একের ভিতর দুই চাষ করে এলাকায় চাষিদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এ গ্রামের আনেক চাষি এখন এ প্রযুক্তিতে নিজের জমিতেও চাষের দিকে ঝুঁকছে। খামারের উপ পরিচালক মো. আব্দুল বাতেন বলেন, এখানে আমরা মূলত মেহেরপুরে প্রসিদ্ধ মেহের সাগর কলার ভিত্তি(মূল) জাতকে পুনরুদ্ধার করে তা সংরক্ষণসহ চাষ করছি। ভবিষ্যতে এ উন্নত জাতের কলা বিএডিসির মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ারও পরিকল্পনা আছে। এখানে উন্নত জাতের রেড লেডি, সেনথিয়া, দেশি কাসেমপুরির পেঁপে চাষে ব্যাপক সাফল্য পাওয়া গেছে। এ সকল জাতের একেকটি পেঁপের ওজন ৪-৫ কেজি আকার ধারণ করছে। এ তিন জাতের সমন্বয় ঘটিয়ে আরও একটি উন্নত জাতের পেঁপের জাত উদ্ভাবনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যুগ্ম পরিচালক আবির হোসেন জানান, এই অনাবাদি বা পতিত জমিতে বিভিন্ন সবজি চাষ করে খামারের অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করা সম্ভব হচ্ছে। খামারের আগে ৭০ জন নিত্য শ্রমিক শুধু মাত্র পাটবীজ উৎপাদনের সময় তিন মাস কাজ করত। বাকি সময় তারা বসে বসে টাকা নিত। এখন এ শ্রমিকদের কাজে লাগানো হচ্ছে। এছাড়া এখানকার উৎপাদিত সবজি থেকেই উন্নত জাতের বীজ উৎপাদন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আশা করছি চিতলাবীজ খামার বিএডিসির মডেল খামারে স্বীকৃতি পাবে।