সোমবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

রহস্যের জট খোলেনি ২৭ মাসেও

মাওলানা ফারুকী হত্যা

আলী আজম

রহস্যের জট খোলেনি ২৭ মাসেও

ইসলামী মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী খুনের রহস্য ২৭ মাসেও উন্মোচিত হয়নি। থানা ও গোয়েন্দা পুলিশের হাত হয়ে মামলাটি এখন তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তবে তারাও কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি। বিভিন্ন সময় এ মামলায় সাত সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিলেও তাদের কাছ থেকে কোনো তথ্য পায়নি সিআইডি।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হত্যাকারীরা তথ্য-প্রযুক্তি এক্সপার্ট ছিল। ফলে তাদের শনাক্তে বিভিন্ন প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে সময়ের প্রয়োজন। ধারণা করা হচ্ছে, ফারুকীর মতাদর্শের বিরোধী জেএমবি সদস্যরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তাদের মধ্যে সন্দেহভাজন কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হত্যায় সম্পৃক্ত ছিল কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চলছে।

২০১৪ সালের ২৭ আগস্ট ১৭৪ নম্বর পূর্ব রাজাবাজারে ফারুকীর বাসায় এশার নামাজের পর ৬-৭ জন যুবক প্রবেশ করে। কিছু সময় পর ওই দুর্বৃত্তরা ফারুকীর স্ত্রী ও এক ছেলেসহ তিন স্বজনের হাত-পা বেঁধে ফেলে। এরপর পৃথক কক্ষে ফারুকীকে গলা কেটে হত্যা করে। এ ঘটনায় টিভি চ্যানেলে ইসলামী অনুষ্ঠান  উপস্থাপক ছয় জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছিলেন ওই সময়ের ইসলামী ছাত্র সেনার ঢাকা মহানগর সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার। এছাড়া নিহতের ছেলে ফয়সাল ফারুকী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৮-১০ জনকে আসামি করে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা করেন। কয়েকদিন পরই মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়। দীর্ঘ এক বছরের তদন্তে তেমন সাফল্য না পেয়ে মামলাটি সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর কেটে গেছে এক বছর তিন মাস। নিহত ফারুকীর মেঝো ছেলে আহমদ রেজা ফারুকী বলেন, পারিবারিক, ব্যবসায়িক কিংবা ডাকাতির ঘটনায় তার বাবা খুন হননি। তার বাবা সুন্নি মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। হত্যার আগে তাকে তার মতাদর্শের বিরোধীরা মোবাইল ফোন ও ফেসবুকে হত্যার হুমকি দেয়। উগ্রপন্থিরা পরিকল্পিতভাবে তার বাবা মাওলানা ফারুকীকে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, সিআইডি আমাকে ডেকে নিয়ে নতুন করে তথ্য নিলেও গতকাল পর্যন্ত কোনো ধরনের আশ্বাস দিতে পারেনি। মামলার তদন্ত নিয়ে আমাদের পরিবার হতাশ।

তদন্তের এক পর্যায়ে গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছিল, ধর্মীয় আদর্শগত বিরোধের জের ধরেই হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়ে থাকতে পারেন ফারুকী। ২০১৪ সালের ৮ নভেম্বর রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে মোজাফফর বিন মহসীন নামে একজনকে গ্রেফতারের পর গোয়েন্দা পুলিশ দাবি করেছিল, মোজাফফর আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের অন্যতম নেতা। মাওলানা ফারুকী খুনের কয়েকদিন আগে সে ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রচার করেছিল। হত্যাকাণ্ডে প্ররোচনাদানকারী হিসেবে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বিভিন্ন সময় ফারুকীর বক্তব্যের বিরুদ্ধাচরণ করে হুমকি দিয়েছেন। ওই ভিডিওতে মাওলানা ফারুকী শিরক করছেন বলে অভিযোগ করেছিলেন মোজাফফর। তিনি পিস টিভির একজন বক্তা এবং আহলে হাদিসের সাবেক সভাপতি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক আরশেদ আলী মণ্ডল জানান, ফারুকী হত্যা মামলায় তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। ফারুকী হত্যা মামলায় বিভিন্ন সময়ে সাতজনকে গ্রেফতার করা হলেও তাদের কাছে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। মাওলানা ফারুকী সুপ্রিম কোর্ট জামে মসজিদের খতিব, রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের প্রেসিডিয়াম সদস্য, একই সঙ্গে আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’আতের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারক, ইসলামিক মিডিয়া নামে একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ছিলেন। মূলত বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের উপস্থাপক হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন ফারুকী। বিশেষ করে বেসরকারি টেলিভিশন ‘চ্যানেল আই’ এ প্রচারিত জনপ্রিয় ইসলামী অনুষ্ঠান ‘শান্তির পথে’ ও ‘কাফেলা’র উপস্থাপক হিসেবে দর্শক মনে স্থান করে নেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর