সোমবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ভুতুড়ে ব্যক্তির নামে রূপালী ব্যাংকের ১০ কোটি টাকা ঋণ

আলী রিয়াজ

ভুতুড়ে ব্যক্তির নামে অ্যাকাউন্ট খুলে রূপালী ব্যাংকের স্থানীয় শাখায় ১০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রবাসী বাংলাদেশির আইডি কার্ড, পাসপোর্ট, জমির দলিল জাল করে এ অর্থ আত্মসাৎ করেছে একটি চক্র। আবু নাজিম পোল্ট্রি অ্যান্ড ফিশারিজ নাম দিয়ে কোম্পানি খুলে এ ঋণ অনুমোদন দেয় মতিঝিলে রূপালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় সংশ্লিষ্ট স্থানীয় শাখা। অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত তিন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। রূপালী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, আবু নাজিম মো. শহীদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির পরিচয় ব্যবহার করে চলতি বছরের মার্চ মাসে অ্যাকাউন্ট খোলা হয় স্থানীয় শাখায়। আবু নাজিম শহীদুল ইসলামের নাম, ঠিকানা, পরিচয়পত্র জাল করে একটি কোম্পানি গঠন করা হয়। কোম্পানির নাম দেওয়া হয় আবু নাজিম পোল্ট্রি অ্যান্ড ফিশারিজ লিমিটেড। যার প্রকল্প দেখানো হয়েছে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার আড়াবাড়ি গ্রামে। একই স্থানে জমির দলিলও তৈরি করা হয় যা ওই ব্যক্তিরই নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে। আবু নাজিম নামের ব্যক্তির যে পরিচয় দেওয়া হয়েছে তিনি বাংলাদেশের নাগরিক হলেও কানাডা প্রবাসী। দুই দশক ধরে তিনি সেই দেশেরও নাগরিক। কিন্তু ব্যাংকের কর্মকর্তাসহ একটি সিন্ডিকেট করে পুরো প্রকল্প ঋণ আবেদন করার পর এক মাসের মধ্যেই তা পাসও হয়ে যায়। প্রধান কার্যালয়ে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় কার্যালয়ের কর্মকর্তারা মিলে এই জাল প্রকল্প তৈরি করেছেন। পরে ঋণ ডিসবার্স (বিতরণ) হওয়ার পর ধরা পড়ে পুরো প্রকল্প, মর্টগেজ, জমির দলিল এমনকি যে ব্যক্তি ঋণ নিয়েছেন ওই নামে বাংলাদেশেই কেউ থাকে না। এই প্রকল্পের ঋণ অনুমোদনের জন্য ডিএমডি কাজী নেয়ামত উল্লাহ, ডিএমডি দেবাশিষ চক্রবর্তী সুপারিশ করেছেন। প্রকল্প সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন এজিএম শাখাওয়াত হোসেন, এজিএম কাজী মো. গোলাম মোস্তফা, সিনিয়র অফিসার এমআইএইচ চৌধুরী মামুন, সিনিয়র অফিসার রিয়াজুল ইসলাম। তাদের পরিদর্শন প্রতিবেদন পেয়ে ঋণের অর্থ ডিসবার্স করে দেওয়া হয়। ডিসবার্সের পর দেখা যায় পুরো বিষয়টি ভুয়া। যে জমির দলিল দেওয়া হয়েছে তা পুরোপুরি জালিয়াতি করে তৈরি করা হয়েছে। বর্তমান এমডি যোগদান করার পর বিষয়টি সামনে আসে। পরে ব্যাংকের পক্ষ থেকে গত ২৮ নভেম্বর একটি মামলা করা হয়। মতিঝিল থানায় মামলা নম্বর ৪১। মামলার বাদী জিএম নুরুজ্জামান। যিনি ওই শাখায় প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে ঋণ ডিসবার্স করেছেন। ওই প্রকল্পে যে ব্যক্তি আবু নাজিম নামে পরিচয় দিয়েছে তার মূল নাম মো. আসিফ বলে জানা গেছে। মামলা করার পর সম্প্রতি ওই কোম্পানির এমডি হিসেবে পরিচয় দেওয়া আবু নাজিম বা আসিফসহ তিন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার করা অন্য দুজন হলেন— মো. মাহফুজ হোসেন ও মো. শাহিন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম গ্রেফতারের বিষয়ে স্বীকার করে বলেন, নাম-ঠিকানা জাল করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে মামলার বাদী জিএম নুরুজ্জামান বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন। তদন্ত ছাড়া এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে না। ডিএমডি কাজী নেয়ামত উল্লাহ বলেন, এটি দেখেছেন দেবাশিষ চক্রবর্তী। তিনি বলতে পারবেন। ডিএমডি দেবাশিষ চক্রবর্তীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তদন্ত করে দেখছি। ব্যাংকের পক্ষ থেকে কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রূপালী ব্যাংকের এমডি আতাউর রহমান প্রধান বলেন, আমি যোগদান করার পর বিষয়টি ধরা পড়ে। এরপরই মামলার নির্দেশ দেওয়া হয়। তারা জাল পাসপোর্ট, আইডি কীভাবে নকল করেছে তা বলা মুশকিল। তবে যারাই জড়িত সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর