মঙ্গলবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

খুলনার রাজনীতিতে তারুণ্যের চ্যালেঞ্জ

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

খুলনার রাজনীতিতে তারুণ্যের চ্যালেঞ্জ

খুলনায় বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতিতে তরুণ নেতৃত্বের সূচনা আরও আগেই। এক সময়ের দাপুটে রাজনীতিবিদ সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাউদ্দিন ইউসুফ, বিএনপির সাবেক স্পিকার অ্যাডভোকেট রাজ্জাক আলী ও আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট মঞ্জুরুল ইমামের মৃত্যুর পর স্থানীয় রাজনীতিতে বড় ধরনের পালাবদল হয়। ষাটের দশকের রাজনীতিক সাবেক সংসদ সদস্য সেকেন্দার আলী ডালিম, সাবেক ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী তালুকদার আবদুল খালেক, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হারুণুর রশীদ ও মহানগর বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জুুর মতো প্রবীণ নেতাদের পাশাপাশি একসঙ্গে চলছেন তরুণ নেতারা।

খুলনা-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি আলহাজ মিজানুর রহমানের বাবা শামসুর রহমান মানি বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। খুলনা  আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ এখন চলছে বয়সের দিক থেকে অপেক্ষাকৃত তরুণ আলহাজ মিজানুর রহমান মিজানের নেতৃত্বে। দলে একচ্ছত্র প্রভাব ও আধিপত্য রয়েছে এই তরুণ নেতার। ছাত্র রাজনীতি থেকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ে নেতৃত্বে উঠে এসেছেন খুলনা সদর থানার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম। তিনি খুলনা চেম্বার অব কমার্সের সহ-সভাপতি ও ব্যবসায়ী নেতা হিসেবে ইতিমধ্যে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। স্বল্প সময়ের নোটিসে যে কোনো কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালনে সক্ষম সদর থানা সভাপতি ফকির মো. সাইফুল ইসলাম এবং পরপর দুবার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হওয়া মহানগর যুবলীগ আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আনিছুর রহমান পপলু দলে শক্ত অবস্থান গড়তে সক্ষম হয়েছেন। বিএনপির খুলনা মহানগর কমিটির কোষাধ্যক্ষ এস এম আরিফুর রহমান মিঠুর বাবা এস এম এ রব ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রজ্ঞাবান নেতা। পরে জাতীয় পার্টি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে মেয়র প্রার্থী হন। তিনি খুলনা চেম্বারের সভাপতি ও দৌলতপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। পারিবারিক সূত্র ধরেই রাজনীতিতে যুক্ত হন মিঠু। তরুণ বয়সেই খুলনা মহানগর বিএনপি ও খালিশপুর থানা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। খুলনা বিএনপিতে বিভক্তির রাজনীতি মাথাচাড়া দিলে আরিফুর রহমান মিঠু চলে আসেন বিএনপির একাংশের নেতৃত্বে। খুলনার পাঁচ থানার মধ্যে খালিশপুর, দৌলতপুর ও খানজাহান আলী থানার বেশির ভাগ নেতা-কর্মী মিঠুর পক্ষে অবস্থানের কারণে মহানগর ও থানা বিএনপির পূর্বঘোষিত সম্মেলন স্থগিত করে দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি। মিঠু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রাজনীতিতে তরুণ মেধাবীদের জায়গা করে দিলে দল আরও এগিয়ে যাবে। এতে দলের ভিতরে অস্থিরতা থাকবে না, তরুণ নেতৃত্বের বিকাশ ঘটবে। এদিকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ছাত্রদলের রাজনীতিতে আসেন তরিকুল ইসলাম জহির। এরপর ১৯৮৮-৮৯ সালে খুলনার সুন্দরবন কলেজে ভিপি ও পরবর্তীতে মহানগর ছাত্রদল সভাপতি নির্বাচিত হন জহির। দলের অন্তর্দ্বন্দ্বে পদপদবি না থাকা সত্ত্বেও দলে তার অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। জাহির বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘তরুণ নেতৃত্ব কোণঠাসা করতে গিয়েই দলে আজ বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। দলে তরুণ নেতাদের জায়গা দেওয়া এখন সময়ের দাবি।’ একইভাবে ছাত্রদল ও যুবদলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক থেকে বিএনপির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নেতৃত্বে রয়েছেন মহানগর সাংগঠনিক সম্পাদক ফখরুল আলম, মহানগর প্রথম যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম ও দফতর সম্পাদক এস এম আসাদুজ্জামান মুরাদ। অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম বলেন, তরুণরা রাজনীতিতে আসবেন এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে সিনিয়রদের যোগ্য সম্মাান দিয়ে তরুণরা নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারলে তারা নিজেরা যেমন অধিক সম্মানিত হবেন তেমনি সিনিয়ররাও তরুণদের রাজনীতির সুযোগ করে দিলে তারাও অধিক মর্যাদাবান হবেন। খুলনা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির উচ্চশিক্ষিত তরুণ নেতারা রাজনীতির পাশাপাশি চাকরি, ঠিকাদারি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত। চিংড়ি রপ্তানি, আবাসন ব্যবসা, শিক্ষকতা, ডিস ব্যবসা, আইনপেশা ও আমদানি-রপ্তানির পণ্য পরিবহনে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন তাদের কয়েকজন। বড় দুই দলের নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, সময়ের বিবর্তনে কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ কমেছে খুলনার প্রবীণ দাপুটে নেতাদের। চলমান জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে দলের মনোনয়ন পেতে রীতিমতো ঘাম ঝরাতে হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রবীণ রাজনীতিক শেখ হারুণুর রশীদকে। একেবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মনোনয়ন দৌড়ে লড়তে হয়েছে দলের অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক নেতা শেখ আলী আকবর, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক নেতা অজয় সরকার এবং জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চুর সঙ্গে। নির্বাচনে শেখ হারুণুর রশীদের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আলী আকবর ও অজয় সরকার মনোনয়নপত্র জমাও দিয়েছেন। এদিকে খুলনা বিএনপিতে বিভক্তির রাজনীতিতে চাপের মুখে পড়েছেন মহানগর বিএনপি সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু। গেল মাসের শুরুতে দলে বিশৃঙ্খলার অভিযোগে মহানগর কমিটির কোষাধ্যক্ষ এস এম আরিফুর রহমান মিঠুসহ ছয়জনকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তবে এস এম আরিফুর রহমান কেন্দ্রের সঙ্গে লবিং-গ্রুপিং করে ছয় দিনের মধ্যে ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার ও মহানগর-থানা পর্যায়ের সব সম্মেলন স্থগিত করাতে সক্ষম হন। এতে ক্ষিপ্ত হয় মঞ্জু অংশের নেতা-কর্মীরা। তারা বৈঠক করে খুলনার কোনো সাংগঠনিক সমস্যা নিয়ে আর কেন্দ্রের দ্বারস্থ হবেন না এমন ঘোষণা দেন। সর্বশেষ কেন্দ্র থেকে মঞ্জুকে খুলনা মহানগর সভাপতির পদ ছাড়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।  খুলনার রাজনীতিতে তারুণ্যের বিকাশ সম্পর্কে নগর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি শাহারুজ্জামান মোর্ত্তজা বলেন, বিগত কয়েক বছরে খুলনা বিএনপিতে তরুণ নেতৃত্বের বিকাশ ঘটেছে। ছাত্রসংগঠন থেকে এসব তরুণ নেতার অনেকে উঠে এসেছেন দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বে। তরুণদের দলে জায়গা দেওয়া সময়ের দাবি। খুলনা জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা বলেন, আমরা আর কতদিন কাজ করতে পারব। তরুণদেরই নেতৃত্বের শূন্যতা পূরণ করতে হবে। তিনি বলেন, তরুণরা রাজনীতিতে আসবে এটা একটা ধারবাহিকতা। তরুণদের দূরে সরিয়ে রাখলে সংগঠনে বড় ধরনের শূন্যতা তৈরি হবে। এ কারণে রাজনীতিতে তরুণদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর