মঙ্গলবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
বিসমিল্লাহর ঋণ কেলেঙ্কারি

সাত আসামির সম্পদের খোঁজে দুদক

মোস্তফা কাজল

বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বিসমিল্লাহ গ্রুপের প্রায় ১২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় সাত প্রধান আসামির অবৈধ সম্পদের খোঁজে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরা হলেন বিসমিল্লাহ গ্রুপের মালিক ও মেসার্স সাহরিশ কম্পোজিট টাওয়াল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) খাজা সোলেমান চৌধুরী, একই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও খাজা সোলেমানের স্ত্রী মিসেস নওরীন হাসিব, পরিচালক খাজা সোলেমানের পিতা সফিকুল আনোয়ার চৌধুরী, গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (জিএম ও অথরাইজড সিগনেটরি) মো. আবুল হোসাইন চৌধুরী, ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার ও অথরাইজড সিগনেটরি) রিয়াজউদ্দিন আহম্মেদ, নেটওয়ার্ক ফ্রেইট সিস্টেম লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. আক্তার হোসেন ও জনতা ব্যাংকের ডিএমডি এবং ঘটনার সময় করপোরেট শাখার মহাব্যবস্থাপক (জিএম) আবদুস সালাম আজাদ। দুদকের প্রধান কার্যালয় অবৈধ সম্পদ সন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর তিন সদস্যের অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে। দুদকের একটি সূত্র বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। দুদক উপ-পরিচালক জালাল উদ্দিন আহাম্মদের নেতৃত্বে এই টিম গঠন করা হয়েছে। অনুসন্ধান কাজ তদারক করছেন দুদক পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলী। সূত্র আরও জানায়, দুদক আইন, ২০০৪ ও দুদক বিধিমালা, ২০০৭ অনুসারে অভিযোগটির অনুসন্ধান কাজ সম্পন্ন করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দুদক থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর অনুসন্ধান করে কোনো ব্যাংক হিসাব জব্দ বা কোনো সম্পদ ক্রোক করা হলে তা লিখিত আকারে মানি লন্ডারিং শাখাকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে অনুসন্ধান টিমের তদারককারী কর্মকর্তা ও পরিচালক মীর জয়নুল আবেদিন শিবলী বলেন, কয়েক দিন আগে বিসমিল্লাহ ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুদকেরই দায়ের করা মামলার সাত আসামির বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। অনুসন্ধান প্রক্রিয়া দুই দিন আগে শুরু হয়েছে। এ ছাড়া টেরিটাওয়েল (তোয়ালে জাতীয় পণ্য) উৎপাদক প্রতিষ্ঠান বিসমিল্লাহ গ্রুপের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর মতিঝিল ও রমনা মডেল থানায় বিসমিল্লাহ গ্রুপের এমডি ও ১৩ কর্মকর্তাসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে ১২টি মামলা করে দুদক। এরপর ২০১৫ সালের বিভিন্ন সময়ে মামলার চার্জশিট দাখিল করে দুদক। বিসমিল্লাহ গ্রুপের আত্মসাৎ করা ফান্ডেড টাকার পরিমাণ ৯৯০ কোটি আর নন-ফান্ডেড ১৮৪ কোটি। মামলাগুলো ফান্ডেড (৯৯০ কোটি) অংশের হয়েছে। এর মধ্যে জনতা ব্যাংকের করপোরেট শাখা থেকে আত্মসাৎ হয়েছে ৩০৭ কোটি, মগবাজার শাখা থেকে ১৭৭ কোটি ও এলিফ্যান্ট রোড শাখা থেকে ১৫ কোটি; প্রাইম ব্যাংকের মতিঝিল শাখা থেকে ২৬৫ কোটি; প্রিমিয়ার ব্যাংকের মতিঝিল শাখা থেকে ২৩ কোটি; যমুনা ব্যাংকের দিলকুশা শাখা থেকে ১০৮ কোটি এবং শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক থেকে ৯৩ কোটি টাকা। বিসমিল্লাহ গ্রুপের এমডি খাজা সোলেমান চৌধুরী ও তার স্ত্রী নওরীন হাবিব ১২ মামলারই চার্জশিটভুক্ত আসামি। বিসমিল্লাহ গ্রুপের ৫৩ আসামির মধ্যে ১৩ জন বিসমিল্লাহ গ্রুপের বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ৪০ জন জনতা, প্রাইম, প্রিমিয়ার, যমুনা ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা। বিসমিল্লাহ গ্রুপের আসামিরা হলেন বিসমিল্লাহ গ্রুপের মালিক ও মেসার্স আলফা কম্পোজিট টাওয়াল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) খাজা সোলেমান চৌধুরী, একই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও খাজা সোলেমানের স্ত্রী নওরীন হাবিব, পরিচালক খাজা সোলেমানের পিতা সফিকুল আনোয়ার চৌধুরী, তিন পরিচালক আবিদা হাসিব, নাহিদ আনোয়ার খান, খন্দকার মো. মইনুদ্দিন আশরাফ, বিসমিল্লাহ গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি ও অথরাইজড সিগনেটরি) আকবর আজিজ মুতাক্কি, মহাব্যবস্থাপক (জিএম ও অথরাইজড সিগনেটরি) মো আবুল হোসাইন চৌধুরী, ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার ও অথরাইজড সিগনেটরি) রিয়াজউদ্দিন আহম্মেদ, নেটওয়ার্ক ফ্রেইট সিস্টেম লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো আক্তার হোসেন, বে ইয়ার্ন লিমিটেডের মালিক গোলাম মহিউদ্দিন আহম্মেদ ও টিডব্লিউ এক্সপ্রেসের মালিক মো. মঈন উদ্দিন। এ ঘটনায় জনতা ব্যাংকের পক্ষ থেকে যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন ঘটনার সময় ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) আবদুস সালাম আজাদ, উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) আজমুল হক, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) সজল কুমার ঘোষ, মোস্তাক আহমেদ খান, ফয়েজুর রহমান ভূঁইয়া, জেসমিন আক্তার, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার (এসইও) জয়নাল আবেদীন, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আতিকুর রহমান, সোহেবুল কবির ও সাবেক ম্যানেজার রফিকুল আলম। এর মধ্যে উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) আজমুল হক ও আবু হেনা মোস্তফা কামাল কারাগারে রয়েছেন। আবু হেনা মোস্তফা কামালকে দুবার দায়মুক্তি দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত মামলায় আসামি করা হয়েছে। অন্যদিকে বিসমিল্লাহ গ্রুপের ওই আসামিরা বর্তমানে পলাতক হিসেবে বিদেশে অবস্থান করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু দুদক থেকে বলা হচ্ছে, আসামিরা কোথায় অবস্থান করছেন, নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। দুদকের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। শিগগিরই সবাইকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।

সর্বশেষ খবর