বুধবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

অতিথি পাখিতে মুখর চিড়িয়াখানা

মোস্তফা কাজল

অতিথি পাখিতে মুখর চিড়িয়াখানা

নানা বর্ণের অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর রাজধানীর জাতীয় চিড়িয়াখানা। শত শত অতিথি পাখির আগমনে চিড়িয়াখানার চারপাশে বিরাজ করছে আনন্দঘন পরিবেশ। সেখানের সবুজ শ্যামল নৈসর্গিক পরিবেশকে আরও মোহনীয় করে তুলেছে অতিথি পাখির আগমন। এমন কি এলাকায় যারা বসবাস করেন তাদের ভোর হয় অতিথি পাখির কিচিরমিচির শব্দে। আর সন্ধ্যা নামে সেই অতিথি পাখির কলরবে। সেকি চমৎকার দৃশ্য। অবলোকন না করলে আসলেই উপলব্ধি করা যায় না। ভোরে সূর্য ওঠার আগে সেখানে সাজে আবির রঙে। পদ্ম শোভিত লেক ও উঁচু উঁচু গাছে এ পাখির সৌন্দর্য বাড়ছে। উপযুক্ত পরিবেশ আর নিরাপদ আশ্রয়ে এসব পাখি নির্ভাবনায় মেতে উঠেছে জলকেলিতে। কেউ আবার ডুব সাঁতারে ব্যস্ত। লেকের কোথাও তারা জুটিবদ্ধভাবে নিজেদের সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নিচ্ছে। কখনো তারা চক্রাকারে উড়ে বেড়াচ্ছে বিস্তীর্ণ আকাশে। এরপর লেকের পানিতে জলকেলি করে হাওয়া হয়ে যায় এমনটাই জানালেন পাখি শাখার জু অফিসার ও তথ্য কর্মকর্তা মো. আবদুল জলিল। প্রতি বছর নভেম্বর মাসে হিমালয়ের উত্তরে শীত নামতে শুরু করে। তখন প্রচণ্ড তুষারপাতে টিকতে না পেরে পাখিরা একটু উষ্ণতার খোঁজে পাড়ি জমায় নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে। মূলত ডিসেম্বর মাসের শুরুতে ঝাঁকে-ঝাঁকে আসতে থাকে অতিথি পাখি। মার্চে গরম ফিরে এলে আবার পাখিরা ফিরে যায় সুদূর সাইবেরিয়া, হিমালয় অঞ্চল, মঙ্গোলীয়, নেপাল, চীন ও প্রতিবেশী দেশ ভারতের দুর্গম অঞ্চল তাদের স্থায়ী নিবাসে। লেকের পাড়ে দাঁড়ালেই চোখে পড়ে অনেক সরালি ঝাঁক বেঁধে সাঁই সাঁই করে চলে।

 আবার ঝপাৎ করে বসে যাচ্ছে লেকের স্বচ্ছ পানিতে। কেউ বা সাঁতার কাটছে আপন মনে। অদূরে আছে ডাহুক। খুঁটে খুঁটে যেন খাচ্ছে। দৃষ্টি চলে যায় দুগ্ধধবল বক পাখির দিকে। আপন মনে লাফিয়ে লাফিয়ে হাঁটছে। সব চেয়ে বেশি মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি হয় ভোরে। এ সময় পাখিরা ঝাঁক বেঁধে বসে থাকে লেকের চারপাশে। পাখিপ্রেমীরা আকর্ষণীয় এ দৃশ্য দেখার জন্য সেখানে যান। গতকাল সরেজমিন দেখা গেছে এসব দৃশ্য। জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. এস এম নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এবার অতিথি পাখি তিন বছর পর চিড়িয়াখানায় আসল। অতিথি পাখিরা এখানে নিজেদের নিরাপদ মনে করে না বলেই তাদের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে দু-এক বছরের মধ্যে অতিথি পাখি দেখা নাও যেতে পারে। এ ছাড়া পাখি শিকারির কারণে অতিথি পাখির সংখ্যা দিন দিন কমছে। পাশাপাশি লেকের পাশ দিয়ে ঢাকা শহর রক্ষা বাঁধের ওপর দিয়ে যান চলাচল করায় পাখির আগমনের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমছে। বাংলাদেশ বার্ডস ক্লাবের সহ-সভাপতি কাজী আবদুল হাকিম বলেন, অতিথি পাখির জন্য নিরাপদ আবাসস্থল গড়ে তুলতে না পারলে এক সময় তারা আসা বন্ধ করে দিতে পারে। সরকারের উচিত এসব এলাকাকে অভয়ারণ্য ঘোষণা করা। এ এলাকায় এবার বালি হাঁসের সংখ্যা হাতেগোনা কয়েকটি। এবার সরালি, পচার্ড, ফ্লাইফেচার, গার্গেনি, ছোট জিরিয়া, মুরগ্যাধি, কোম্বডাক ও পাতাড়ি হাঁস, জলকুক্কুট ও খয়রা নামের শীতের পাখি দেখা গেছে। তিনি বলেন, অতিথি পাখিদের নিরাপত্তা দেওয়া গেলে পাখিদের আগমনের সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে।

সর্বশেষ খবর