বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
নির্বাচনী উত্তেজনা নারায়ণগঞ্জে

ভোটারদের দ্বারে দ্বারে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি

নারায়ণগঞ্জ ও সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি

ভোটারদের দ্বারে দ্বারে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে (নাসিক) ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। আশ্বাস, ওয়াদা, উন্নয়নের ফিরিস্তি আর প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি দিয়ে অলিতে-গলিতে প্রচারণা চালাচ্ছেন তারা। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে নির্বাচনী গণসংযোগ। ভোটারদের আকৃষ্ট করতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রতিশ্রুতি সংবলিত লিফলেটও বিতরণ করা হচ্ছে। পোস্টারে ছেয়ে গেছে নাসিকের ২৭টি ওয়ার্ড।

জানা গেছে, গতকাল সকালে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে আদমজী কদমতলী, কাশেমপাড়া, মিজমিজি দক্ষিণপাড়া, কদমতলী পশ্চিমপাড়া, গ্যাসফিল্ড ও পানির ট্যাংকি এলাকায় গণসংযোগ করেন নৌকা প্রতীকে মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। এ সময় তিনি ভোটারদের নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ‘ইতিমধ্যে সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডের মূল রাস্তা, মূল ড্রেন, বিশুদ্ধ পানি, নারী উন্নয়নের অনেক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে ছোট ছোট রাস্তাগুলো বাকি আছে। যেহেতু এটি স্থানীয় সরকার সেহেতু কাজ এত দ্রুত শেষ করা সম্ভবও নয়। তাই অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করার পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মের জন্য খেলার মাঠ, সবুজ বনায়ন, নিরাপদ শহর হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’ সকালে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের আমলাপাড়া, কালীরবাজারসহ আশপাশ এলাকায় গণসংযোগকালে বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত ভোটারদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে গুম, খুন, অপহরণ দুর্বৃত্তায়ন দূর করা হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে শিক্ষাব্যবস্থা, শীতলক্ষ্যা নদীদূষণ রোধ, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, উন্নত মানের বিশ্ববিদ্যালয়, শহরে যানজট, জলাবদ্ধতা, যত্রতত্র ময়লা অপসারণ, নারীদের মাতৃকালীন সেবা ও নাসিকের ট্যাক্স কমানো হবে।’ অন্য ৫ মেয়র প্রার্থীও দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।

মেয়র প্রার্থীদের পাশাপাশি থেমে নেই কাউন্সিলরা প্রার্থীরাও। ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক ভোটারদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তিনি নির্বাচিত হলে এ ওয়ার্ডকে সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত একটি মডেল ওয়ার্ড হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এই ওয়ার্ডের আরেক কাউন্সিলর প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম সমাজ থেকে নিরক্ষরতা দূর করতে ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো ছড়াতে চান। ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আলোচিত সাত খুন ঘটনার অন্যতম শিকার নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজ মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে চান। অন্যদিকে এ ওয়ার্ডের অন্যতম কাউন্সিলর প্রার্থী বিএনপি সমর্থক ইকবাল হোসেন তার ওয়ার্ডকে মাদকমুক্ত করে যুবসমাজকে এগিয়ে নিতে চান। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও এ ওয়ার্ডের যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক তোফায়েল হোসেন বলেন, তার এলাকায় এখনো রাস্তাঘাটের অনেক সমস্যা আছে। তিনি নির্বাচিত হলে রাস্তাঘাট উন্নয়নসহ সমাজ থেকে মাদককে দূর করবেন। ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম তার ওয়ার্ডের বড় সমস্যা রাস্তাঘাট ও মাদক। তিনি নির্বাচিত হতে পারলে ওয়ার্ডকে মাদকমুক্ত করার ঘোষণা দেন। আরেক কাউন্সিলর প্রার্থী জাতীয় শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি আবদুল মতিন মাস্টারের ছেলে বর্তমান কাউন্সিলর আরিফুল হক হাসান সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত এলাকা গড়তে চান।

৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী শফিকুল ইসলাম বাবুল এলাকার রাস্তাঘাট উন্নয়ন, মাদকমুক্ত সমাজ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।

৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী ও মহানগর ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, তার ওয়ার্ড এলাকায় মাদক একটি প্রধান সমস্যা। তিনি এলাকাকে মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত করার পাশাপাশি রাস্তাঘাট উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।

১১ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর জমশের আলী ঝন্টু ঘুড়ি ও নগর বিএনপি নেতা অহিদুল ইসলাম ছক্কু ঠেলাগাড়ি প্রতীক নিয়ে জয়ী হলে দুজনেই এলাকা মাদকমুক্ত করবেন বলে ভোটারদের স্ব স্ব এলাকায় গণসংযোগকালে আশ্বাস দিয়েছেন। ১২ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর ও নগর বিএনপি নেতা শওকত হাশেম শকু ঘুড়ি ও নাঈম ইসলাম ফুলের ঝুড়ি প্রতীক নিয়ে ডন চেম্বার ও খানপুর এলাকায় গণসংযোগ করেছেন।  একই চিত্র প্রত্যেকটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীর ক্ষেত্রে। তারা বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ভোটারদের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গণসংযোগ করছেন।

নেতা-কর্মীরা পাশে আছে : গণসংযোগকালে সেলিনা হায়াৎ আইভী সাংবাদিকদের জানান, নৌকা প্রতীক দেওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগের সব নেতা-কর্মী আমার পাশে আছে। আর প্রতীক বরাদ্দের পর তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করছে। দলের নেতা-কর্মীরা আমার পাশে নেই এমন বিভক্তি সৃষ্টি করবেন না। সবাই আমার পাশে আছে। যারা আসতে পারছে না তাদের নির্বাচনী আচরণবিধি রয়েছে। আমি নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন করতে চাই না।

আইভী ভুল নৌকায় পা দিয়েছে বিএনপির প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেনের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আইভী বলেন, ‘ভুল নৌকা না শুদ্ধ নৌকা সেটা ২২ তারিখ জনগণের ভোটে প্রমাণিত হবে। আইভীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য মো. মজিবুর রহমান, ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য ইয়াছিন মিয়া, বিপ্লব, বাবুলসহ এলাকার প্রায় শতাধিক নারী পুরুষ ও তরুণ।

এখনো গুমোট পরিবেশ : নাসিক নির্বাচনের পরিবেশ এখনো গুমোট মনে করেন সাখাওয়াত হোসেন খান। তিনি আবারও সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানান। ধানের শীষ প্রতীকের এই মেয়র প্রার্থী বলেন, নারায়ণগঞ্জে অনেক সন্ত্রাসী রয়েছে, অবৈধ-বৈধ অস্ত্র রয়েছে। এগুলো কখন কীভাবে ব্যবহার হবে তা দিনক্ষণ ঠিক করে বলা যাবে না। নির্বাচনে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্ভয়ে ভোটাররা ভোট দিতে পারলে ধানের শীষের বিজয় হবে। গতকাল দুপুরের পর নগরীর ১০ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচারণার সময় গণমাধ্যমের সঙ্গে এসব কথা বলেন বিএনপি দলীয় ধানের শীষ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শহরের ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় দলীয় কার্যালয় থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে প্রচারণা শুর করেন। এ সময় আইভী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা কাজী জাফর উল্লাহ, রশিদুল আলম, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান নওফেল, সুজিত রায় নন্দী, যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক অপু উকিল, জেলা সভাপতি আবদুল হাই, সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু, যুবলীগের ইকবাল পারভেজ প্রমুখ। এদিকে  আইভীর পক্ষে নির্বাচনে কাজ করতে পরিচালনা কমিটি গঠন করে জাতীয় শ্রমিক লীগ।

৫৩ কেন্দ্র অতিমাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ১৭৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫৩টি কেন্দ্র অতিমাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ দাবি করেছেন বিএনপির মনোনীত ধানের শীষের মেয়র পদের প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। এ জন্য তিনি নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় জেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়ে রিটার্নিং অফিসার নুরুজ্জামান তালুকদারের কাছে ওই কেন্দ্রগুলোর তালিকা জমা দেওয়া হয়। রিটার্নিং অফিসার নুরুজ্জামান তালুকদার তালিকার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘বিএনপির একটি তালিকা পেয়েছি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দেওয়া হবে এবং এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর