বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ময়মনসিংহে বড় দুই দলেই তরুণ্যের আবাহন

সৈয়দ নোমান, ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহে বড় দুই দলেই তরুণ্যের আবাহন

ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) আসন থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন জুয়েল আরেং। রাজনীতিতে নতুন মুখ জুয়েল প্রয়াত সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট প্রমোদ মানকিনের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। রাজনীতিতে নতুন মুখ হলেও জুয়েল উঠে আসছেন দলের মূল রাজনীতিতে। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন আবু ওয়াহাব আকন্দ। সেই সময় তিনি ছিলেন ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি। ওই সময়েই তিনি পেয়েছিলেন ‘লড়াকু’ রাজনীতিকের তকমা। প্রায় সাত বছর আগে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান ওয়াহাব আকন্দ। ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর মাহমুদ আলমও বয়সে অপেক্ষাকৃত তরুণ। শুধু তারাই নন, মূলত ময়মনসিংহে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং সংসদের বাইরে থাকা বিরোধী দল বিএনপিতে অপেক্ষাকৃত নবীন নেতারাই দলের হাল ধরছেন। সময়ের পালা বদলে অকুতোভয়, ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতারাই নেতৃত্বের আসনে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন। তারুণ্যের আবাহনেই দুই দলের ভিতরে-বাইরে রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ হচ্ছে। ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন শরীফ আহমেদ। বেশ কয়েকবারের সাবেক সংসদ সদস্য এম শামসুল হকের সন্তান শরীফ একই সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগেরও সভাপতি। তবে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাজনীতিতে সমানতালে উঠে আসছেন ব্যারিস্টার আবুল কালাম আজাদ। গত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন শরীফ হাসান অনু। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক এ সহ-সম্পাদক ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনে গত সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হন। অবশ্য নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে তিনি কাজ করেন। ২০১৩, ১৪, ১৫ সালের আন্দোলনে দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে বিশ্বস্ততার সঙ্গে জীবনবাজি রেখে রাজপথে কাজ করেছেন কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা লিটন আকন্দ। ময়মনসিংহের তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে দলের ভিতরে-বাইরে জনপ্রিয় ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র ইকরামুল হক টিটু। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় ময়মনসিংহ পৌর শহরকে আধুনিক ও তিলোত্তমা শহর হিসেবে রূপ দিয়েছেন মেয়র টিটু। তার রয়েছে বিশাল তরুণ ও প্রবীণ কর্মীবাহিনী। মহানগর আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে তাকে অন্তর্ভুক্তির দাবি তুলেছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। আসন্ন ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তিরও সবুজ সংকেত পেয়েছেন সফল এ পৌর পিতা, এমন দাবি সূত্রের। ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ধর্মমন্ত্রীর ছেলে সাবেক ছাত্রনেতা মোহিত উর রহমান শান্ত। দীর্ঘদিন পর জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেও এসেছে পরিবর্তন। আওয়ামী লীগের হাল ধরেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ সহচর অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা। তিনি পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ। সাধারণ সম্পাদক পদে মূল্যায়িত হয়েছেন আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের নাতজামাই আখতারুল আলম ফারুকেরও রাজনীতিতে অভিষেক ঘটেছে। প্রায় সাত বছর আগে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য হয়ে ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসনে দলকে গোছানোর কাজ করছেন এ নেতা। ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনে ল্যাবএইডের পরিচালক ডা. মাহাবুবুর রহমান লিটন স্থানীয় উপজেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।  ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সাত্তারকে রাজনীতির মাঠে কোণঠাসা করে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হয়েছেন মাহমুদুল হাসান সুমন। উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এ তরুণ নেতার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছেন অনেক প্রবীণ নেতা। ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল আবদুস সালামের (অব.) প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছেন বর্তমান তরুণ সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদিন তুহিন। ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল। এ আসনের প্রয়াত রাজনীতিক আলতাফ হোসেন গোলন্দাজের সন্তান তিনি। আওয়ামী লীগে তরুণ নেতৃত্বের বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা বলেন, সময়ের প্রয়োজনেই নবীন নেতারা দলীয় রাজনীতিতে উঠে আসছেন। এটা ইতিবাচক দিক। প্রবীণ-নবীনের সমন্বয়েই ময়মনসিংহে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর