শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ভবন ভাঙতে তিন বছর সময় চাইবে বিজিএমইএ

রিভিউ আবেদন আজ

রুহুল আমিন রাসেল

রাজধানীর হাতিরঝিলের সৌন্দর্য নষ্টের ক্যান্সার হিসেবে চিহ্নিত পোশাকশিল্প মালিকদের অবৈধ ১৬ তলা ভবনটি ভাঙতে উচ্চ আদালতের দেওয়া রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আজ আবেদন করবে বিজিএমইএ। একই সঙ্গে সংগঠনটি ভবন ভাঙার জন্য তিন বছর সময় চাইবে বলে জানা গেছে। যদিও আদালতের দেওয়া রায়ে বিজিএমইএকে নিজস্ব খরচে ভবন ভাঙার নির্দেশ দেওয়া আছে। আর বিজিএমইএ তা না করলে পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে রাজউককে ভবন ভাঙার নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা রিভিউ পিটিশন করব। আদালতের প্রতি আমাদের সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা আছে।’ বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশ বহাল রেখে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি ৮ নভেম্বর প্রকাশিত হয়। এর আগে জমির স্বত্ব না থাকা ও জলাধার আইন লঙ্ঘন করে হাতিরঝিলে নির্মিত বিজিএমইএ ভবনটি ভাঙতে পাঁচ বছর আগে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। রায়ের পর বিজিএমইএ লিভ টু আপিল করে। আপিলের সেই আবেদন খারিজ করে ২ জুন রায় দেয় আপিল বিভাগ। ৮ নভেম্বর সে রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। বিজিএমইএ সূত্র জানায়, বর্তমান ভবন ভেঙে উত্তরায় নতুন ভবন নির্মাণে ক্ষতিপূরণ হিসেবে বিজিএমইএ বিনামূল্যে ৯ বিঘা জমি চেয়েছে সরকারের কাছে। তবে সরকার এতেও আপত্তি তুলেছে। তাই পোশাকশিল্পের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে ভবন ভাঙতে আদালতের কাছে যৌক্তিক সময় চাওয়ার পথে বিজিএমইএ। প্রায় দুই দশক আগে বেগুনবাড়ী খালের ওপর নির্মিত বিজিএমইএ ১৬ তলাবিশিষ্ট ভবন ভাঙতে হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশ ২ জুন বহাল রাখে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল হাইকোর্ট ভবনটি ভাঙার নির্দেশ দেয়। এ বছর ১৯ মার্চ ওই রায়ের পূর্ণ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, বিজিএমইএ ভবন সৌন্দর্যমণ্ডিত হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যান্সারের মতো। এ ভবন অচিরেই বিনষ্ট করা না হলে এটি শুধু হাতিরঝিল প্রকল্পই নয়, পুরো ঢাকা শহরকে সংক্রামিত করবে। এ ছাড়া হাতিরঝিল একটি জনকল্যাণমূলক প্রকল্প। কাজেই সরকার ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষের ওপর নির্দেশ হলো, ভবনটি ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলতে হবে। জানা গেছে, আপিল বিভাগের রায়ের পর হাতিরঝিলের বিজিএমইএ ভবন রক্ষার আশা ছেড়ে দিয়েছেন এই খাতের উদ্যোক্তাদের শীর্ষ নেতারা। সব দিক বিবেচনায় উত্তরায় নতুন ভবন তৈরিতেই আগ্রহী পোশাকশিল্প মালিকরা। এজন্য উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরে সাড়ে ৯ বিঘা খাস জমিও পছন্দ করে রেখেছেন। এখন তারা বিজিএমইএ’র নতুন ভবন নির্মাণ ও সরানোর ক্ষতিপূরণ হিসেবে সরকারের কাছে ওই জমি বিনামূল্যে চেয়েছেন। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দৌড়ঝাঁপও করছেন বিজিএমইএ’র কর্তাব্যক্তিরা। এর আগে ২০১১ সালে তৎকালীন বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ জমির স্বত্ব না থাকা ও জলাধার আইন লঙ্ঘন করে বিধিবহির্ভূতভাবে নির্মাণ করায় বিজিএমইএ ভবন ভাঙার রায় দেয়। এর বিরুদ্ধে বিজিএমইএ আপিল করে। চলতি বছরের ২ জুন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের বেঞ্চ বিজিএমইএ’র আপিল আবেদন খারিজ করে দেয়। ১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগ শাসনামলে বিজিএমইএ ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। তখন এ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর বিএনপি শাসনামলে নির্মাণ শেষে ২০০৬ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ভবনটি উদ্বোধন করেন। পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠনের দাবি, উন্মুক্ত স্থান ও প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ লঙ্ঘন করে প্রাকৃতিক জলাধারের শ্রেণি বা প্রকৃতি পরিবর্তনের জন্য অনুমতি ছাড়াই বিজিএমইএ ভবন নির্মাণের জন্য হাতিরঝিলের বেগুনবাড়ী খালের একাংশ ভরাট করে ফেলা হয় এবং এতে খালের গতিপথ পরিবর্তিত হয়েছে, এটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। বিজিএমইএ ভবনটি ভেঙে ফেলতে হাইকোর্টের দেওয়া ৬৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে আরও বলা হয়, বিজিএমইএ যাদের কাছে ওই ভবনের ফ্ল্যাট বা অংশ বিক্রি করেছে, দাবি পাওয়ার এক বছরের মধ্যে তাদের টাকা ফেরত দিতে হবে। হাইকোর্ট বলেছে, ক্রেতাদের সঙ্গে ওই চুক্তি ছিল বেআইনি। কারণ, ওই জায়গায় ভবন নির্মাণ বা কোনো অংশ কারও কাছে বিক্রির কোনো অধিকার বিজিএমইএ’র ছিল না। তবে ক্রেতারা যেহেতু নিজেরাও জানতেন বা তাদের জানা উচিত ছিল যে, এই জমির ওপর বিজিএমইএ’র কোনো মালিকানা নেই এবং ভবনটি বেআইনিভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। সুতরাং তারা কোনো ইন্টারেস্ট পাওয়ার দাবিদার নন। রায়ে বলা হয়, ‘আর্থিক পেশিশক্তির অধিকারী বলে’ শক্তিশালী একটি মহলকে ‘আইনের ঊর্ধ্বে রাখতে হবে’ এমন যুক্তি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা হিসেবে বিজিএমইএ’র আইনের প্রতি আরও বেশি শ্রদ্ধাশীল হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ, অর্থাৎ যাদের প্রয়োজনে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল, তারাই মোট ৬ দশমিক ২১ একর জমি অপ্রয়োজনীয় বিবেচনায় ছেড়ে দেয় একই বছরে, অর্থাৎ ১৯৬০ সালে। পরে ১৯৯৮ সালে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ওই জমি একটি স্মারকের মাধ্যমে বিজিএমইএকে বেআইনিভাবে প্রদান করে। অথচ ইপিবি ২০০৬ সালের আগ পর্যন্ত আদৌ ওই জমির মালিক ছিল না। প্রসঙ্গত, ১৯৯৮ সালে বিজিএমইএ তাদের প্রধান কার্যালয় ভবন নির্মাণের জন্য হোটেল সোনারগাঁওয়ের পাশে বেগুনবাড়ী খালপাড়ের এ জায়গাটি নির্ধারণ করে এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে ইপিবির কাছ থেকে ৫ কোটি ১৭ লাখ টাকায় জমিটি কেনে। ওই বছরের ২৮ নভেম্বর ভবনটি তৈরির কাজ শুরু হয়। ভবনটি নকশা অনুযায়ী করা হয়নি বলে রাজউক বলে আসছিল। পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠনও ভবনটি ভাঙার দাবি জানিয়ে আসছিল।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর