বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

চিত্রাহরিণের নিঝুম দ্বীপ

নিজস্ব প্রতিবেদক

চিত্রাহরিণের নিঝুম দ্বীপ

নোয়াখালী জেলার সাগরের মোহনায় রয়েছে আকর্ষণীয় নিঝুম দ্বীপ। এ দ্বীপে রয়েছে বন বিভাগের একটি জাতীয় উদ্যান। উদ্যানটি অনেকটা প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয়েছে। উদ্যানে রয়েছে অসংখ্য চিত্রাহরিণ। দেশের অন্য কোনো বনে এত বেশি চিত্রাহরিণ দেখা যায় না। নানা পাখিও দেখা যায় এই দ্বীপে। নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার দক্ষিণাংশে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে ওঠা ছোট্ট দ্বীপ এটি। শোনা যায়, ওসমান নামে এক ব্যক্তি তার মহিষের বাথান নিয়ে এ দ্বীপে বসতি গড়ার পর এটি পরিচিতি পায় চর ওসমান নামে। পরে নাম হয় নিঝুম দ্বীপ, বল্লার চর, কামলার চর, চর ওসমান ও চর মুরি নামের প্রধান চারটি দ্বীপ ও ছোট ছোট কয়েকটি চর নিয়েই তৈরি হয়েছে এ দ্বীপ। উত্তর-দক্ষিণে এ দ্বীপ প্রায় ৯ কিলোমিটার লম্বা আর পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় সাত কিলোমিটার চওড়া। এ নিঝুম দ্বীপে আছে বড় একটি শ্বাসমূলীয় বন। সত্তরের দশকে বন বিভাগ এ দ্বীপে কেওড়া, ওড়া-জাতীয় শ্বাসমূলীয় গাছ রোপণ করে। সেই গাছপালাই এখন বিশাল মহীরুহে পরিণত হয়েছে। ২০০১ সালে নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যানের মর্যাদা পায়। ১৯৭৪ সালে এ বনে সর্বপ্রথম সুন্দরবন থেকে এনে চার জোড়া চিত্রাহরিণ ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই চারটি হরিণের বংশবিস্তারের ফলে এ বনে হরিণের সংখ্যা এখন ২০ হাজারেরও বেশি। নিঝুম দ্বীপের প্রধান পর্যটন আকর্ষণ চিত্রাহরিণ। নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যানের প্রধান প্রাণী চিত্রাহরিণ। এ ছাড়া এই বনে আছে উদবিড়াল, মেছো বাঘ, খেকশিয়াল ইত্যাদি। এ দ্বীপের জাতীয় উদ্যানের প্রায় প্রতিটি গাছের আড়ালে দেখতে পাওয়া যায় কমপক্ষে দুটি চিত্রাহরিণ। উদ্যানটি দেখতে সুন্দরবনের মতো হলেও তেমন কোনো হিংস্র প্রাণী নেই এ বনে। তাই নিঝুম দ্বীপে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকরা খুব কাছাকাছি থেকেই চিত্রাহরিণের দল দেখতে পান। এ দ্বীপের জাতীয় উদ্যানের পশ্চিম পাশে বিশাল বিশাল খোলা মাঠে পড়ন্ত বিকালে হরিণের দল ঘোরাঘুরি করে। এ দ্বীপের মনোরম দৃশ্য দেখতে হলে যেতে হবে নামাবাজারের পশ্চিম পাশে। এখান থেকে সাগরের অনিন্দ্য সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। সম্প্রতি নদীভাঙনে বিলীন হওয়ার পথে নিঝুম দ্বীপের জাতীয় উদ্যানের উত্তরাংশের বনাঞ্চল। গত তিন বছরে এ বনের বড় একটা অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। নিঝুম দ্বীপের পশ্চিম-দক্ষিণ প্রান্তে চৌধুরীর খাল এলাকা। নৌকায় চড়ে নামাবাজারের পাশের খাল ধরে যেতে হবে জায়গাটিতে। খালটি একেবারে বনের গহিনে চলে গেছে। নৌকায় কিংবা বনের পাশে কোথাও নিজেকে আড়াল করে চুপচাপ বসে থাকলে অনেক হরিণ দেখা সম্ভব। এ ছাড়া নিঝুম দ্বীপের পূর্ব পাশে জেগে ওঠা দমার চরের আকাশে দেখা মেলে নানা প্রজাতির পাখির মেলা। জলচর নানা পাখির নিরাপদ আবাসস্থল এই চর। তবে দমার চরের প্রধান আকর্ষণ এই দেশি গাঙচষা। এই চরই মহাবিপন্ন এই পাখিটির বাংলাদেশে অন্যতম আবাসস্থল। এ দ্বীপে দেখতে পাওয়া নানা পাখির মধ্যে রয়েছে নিশিবক, কানিবক, গোবক, পানকৌড়ি, ধূসর বক, কাদাখোঁচা, বালিহাঁস, লালপা, নানা জাতের মাছরাঙাসহ বিভিন্ন পরিযায়ী পাখি। নিঝুম দ্বীপের চরে দেখা মেলে ব্ল্যাক হেডেড আইবিসের, বাংলায় পাখিটির নাম কালোমাথা কাস্তেচরা। বিরল এই পাখিটি নিঝুম দ্বীপের চরে দেখা যায় শীতকালে। এই পর্যটনকেন্দ্রে সরকারি নজরদারি নেই বললেই চলে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর