বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
সংসদে প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী

রোহিঙ্গাদের স্রোতের মতো আসতে দিতে পারি না

বাল্যবিবাহ আইন বাস্তবসম্মত সমালোচকরা গ্রামে যান না

নিজস্ব প্রতিবেদক

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা দুয়ার খুলে দিয়ে কাউকে স্রোতের মতো আসার সুযোগ করে দিতে পারি না।

গতকাল জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্বে রোহিঙ্গা নিয়ে সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নানা ফাঁকফোকর গলিয়ে মিয়ানমার থেকে এখানে যারা সর্বহারা হয়ে চলে আসছে, তাদের স্থান দেওয়া হচ্ছে, শিশুদের খাদ্য দেওয়া হচ্ছে, চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমাদের মানবতার দিকটা দেখতে হচ্ছে। আবার প্রতিবেশী দেশে যেন বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে কোনো সন্ত্রাসী ঘটনা না ঘটে সেটাও দেখতে হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা দুয়ার খুলে দিয়ে স্রোাতের মতো তাদের এখানে আসার অবারিত সুযোগ দিতে পারি না। কারণ তারা আলাদা রাষ্ট্র। এটা আমাদের স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র। তিনি বলেন, আমাদের এখানে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা সেখানে এমন কিছু সৃষ্টি করবে না যাতে সেখানকার লোকজন বাংলাদেশে চলে আসে।

সন্ত্রাসী থাকলে ধরে ফেরত : রোহিঙ্গাদের ওপর সাম্প্রতিক দমন-পীড়নের আগে মিয়ানমারে সীমান্ত চৌকিতে হামলাকারীদের কেউ বাংলাদেশে পালিয়ে এলে তাদের ধরে ফেরত দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশে একটা ঘটনা ঘটেছে। নয়জন বর্ডার পুলিশকে হত্যা করা হয়েছে। আর্মির ট্রাকে হামলা হয়েছে। তারপর এই ঘটনা (সেনা অভিযান) ঘটেছে। তিনি বলেন, যারা এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা আমাদের এখানে লুকিয়ে আছে কিনা খুঁজে তাদের আমরা মিয়ানমার পুলিশের হাতে হস্তান্তর করব। তাদের কোনো স্থান এখানে হবে না। বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে প্রতিবেশীে দেশে কোনো অঘটন ঘটাক, এটা মেনে নেব না।

বাল্যবিবাহ আইন বাস্তবসম্মত : জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমামের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আদালতের অনুমতি নিয়ে ১৮ বছর বয়সের আগে বিয়ের বিষয়টি অত্যন্ত বাস্তবসম্মত। এ নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। প্রত্যেক আইনেই নমনীয়তার সুযোগ থাকে। আইন অনড় হতে পারে না। যদি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থার সৃষ্টি হয়, তাহলে সেখানে কী করণীয় তার একটা সুযোগ অবশ্যই দিতে হবে। সেটা যদি না দেওয়া হয়, তাহলে সমাজে অনেক বড় বিপর্যয় নেমে আসবে। তিনি বলেন, বিয়ের বয়স আমরা ১৮ বছর নির্দিষ্ট করে দিয়েছি। কিন্তু যে কোনো কারণেই হোক একটা মেয়ে ১২/১৩ বছর বয়সে গর্ভবতী হয়ে গেল, তার গর্ভপাত করানো গেল না। যে শিশুটি জন্ম নেবে, সেই শিশুর অবস্থান কোথায় হবে? তাকে সমাজ গ্রহণ করবে? তাকে কি বৈধভাবে নেবে? নেবে না। তিনি বলেন, পশ্চিমা দেশগুলোর অনেক দেশে ১৪ বছর বিয়ের বয়স। কোথাও ৯ বছর। ইউরোপ-আমেরিকায়  কিশোরী  মায়ের সংখ্যা অসংখ্য। এটা একটা সামাজিক ব্যাধির মতো। এই বাচ্চা মেয়েরা ১২/১৩/১৪ বছর বয়সে মা হয়ে যায়। দুই তিন বছর বাচ্চাকে লালন-পালন করে বাবা-মার কাছে সন্তান রেখে তারা যে যার মতো চলে যায়। পশ্চিমা দেশে এটা কোনো বিষয় নয়। কিন্তু আমাদের দেশে এটা আমরা মেনে নিই না। সমাজ বাবা-মা, মেয়েটাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে। ভবিষ্যতে মেয়েটাকে পতিতালয়ে যেতে হবে। আমাদের এখানে যারা বাল্যবিবাহ আইন নিয়ে কথা বলছেন, তারা কি এই বাস্তবতাটা চিন্তা করেন?

প্রধানমন্ত্রী বাল্যবিবাহ আইনের সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে বলেন, কিছু কিছু আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এটা নিয়ে অনেক কথা বলছে। যারা কথা বলছেন, তারা একটানা দুই-চার বছর গ্রামে বসবাস করেননি। তাদের গ্রাম সম্পর্কে, সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই। তারা দুটো এনজিও করে পয়সা কামায়।

জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ রোল মডেল : সরকারি দলের মমতাজ বেগমের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের জনগণ যেভাবে জঙ্গিবাদ ও উগ্র সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে, সেই নজির পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই। তাই আজ জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ রোল মডেল হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাচ্ছে। তিনি বলেন, সময় এসেছে জঙ্গিবাদ-মৌলবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর। সরকার সন্ত্রাসী হামলাকারীদের শেকড় খুঁজে বের করার যে দৃঢ়তা  দেখিয়ে যাচ্ছে তাতে দেশ ও বহির্বিশ্বে সরকারের ভাবমূর্তি  বেড়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর