শুক্রবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
নির্বাচনী রাজনীতি

জানুয়ারিতে সাংগঠনিক সফরে আওয়ামী লীগ

রফিকুল ইসলাম রনি

জানুয়ারিতে সাংগঠনিক সফরে আওয়ামী লীগ

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দল গোছানোর পর্যায়ে জানুয়ারিতে সাংগঠনিক সফর শুরু করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সফরকালে তৃণমূলে সংগঠনের দুর্বলতা চিহ্নিত করা হবে। কেন্দ্রীয় নেতারা দলীয় প্রধানের বিশেষ বার্তা নিয়েই এ সফর করবেন। বার্তায় তৃণমূলের প্রতি কেন্দ্রের নির্দেশনা থাকবে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন, সংগঠন শক্তিশালী এবং দলের নাম ভাঙিয়ে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়া নেতাদের তালিকা তৈরির। একই সঙ্গে এই সাংগঠনিক টিমের সদস্যরা আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে সহায়তা করবেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘চলতি মাসেই আমাদের জেলায় জেলায় সাংগঠনিক সফর শুরুর কথা ছিল। কিন্তু জেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল হওয়ায় আমরা যেতে পারছি না। কারণ অধিকাংশ নেতাই এমপি-মন্ত্রী হওয়ায় নির্বাচন কমিশনের একটি বিধিনিষেধ— আমরা জনসভা বা মতবিনিময় সভায় অংশ নিতে পারব না। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন শুরু হওয়ায় যারা এমপি-মন্ত্রী নন তারা সেখানে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত। তাই দলকে ঢেলে সাজাতে জানুয়ারিতে নতুন উদ্যমে সাংগঠনিক সফর শুরু করব।’ দলীয় সূত্রমতে, আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় নেতা, এমপি-মন্ত্রীরা নিজ নিজ এলাকায় নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। তারা বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরার পাশাপাশি সরকারবিরোধীদের অপপ্রচারের বিরুদ্ধেও জনমত সৃষ্টি করবেন। এসবের মাধ্যমে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হবে। দলটির নীতিনির্ধারক মহল মনে করেন, সরকারের সফলতাগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরতে এবং তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের দূরত্ব কমিয়ে আনতে পারলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ এবং বর্তমানে বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবিলা সম্ভব। পাশাপাশি মহাজোট, ১৪ দলসহ সমমনাদের সঙ্গে দূরত্ব কমানো ও তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর কাজেই এখন বেশি মনোযোগী আওয়ামী লীগ। দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, নতুন বছরের শুরুতেই তৃণমূল নেতাদের কাছে যাবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই এ বার্তা যাবে এবং বছরের শুরুতেই দল শুদ্ধি অভিযান চালাবে। ইতিমধ্যে যেসব জেলায় দলের সাংগঠনিক দ্বন্দ্ব্ব তীব্র সেসব জেলার তালিকা হয়েছে। নবনির্বাচিত কমিটি এসব জেলার নেতা-কর্মী নিয়ে বৈঠক শুরু করবে। দলের প্রেসিডিয়ামের এক সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। তৃণমূলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল থাকা খুবই স্বাভাবিক। তবে আমরা দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশে এসব কোন্দল মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করছি স্থানীয় পর্যায়ে। তার পরও যদি কোন্দল শেষ না হয় তাহলে তো কঠোর হতেই হবে।’ জানা গেছে, দলটির নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দায়িত্ব গ্রহণের পর সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিয়ে বৈঠক করেছেন এবং তৃণমূলে সমস্যা সমাধানে তাদের ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সাংগঠনিক সম্পাদকরা এরই মধ্যে ২০টির মতো জেলাকে বিরোধপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। একইভাবে দলীয় সভানেত্রীর উদ্যোগে একাধিক সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অবস্থান তুলে আনতে। আগামী নির্বাচনের এক বছর আগেই এসব বিবাদ মিটিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্লিন ইমেজের একটি দলে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে জানুয়ারি থেকে আমরা প্রত্যেক জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে গিয়ে মতবিনিময়, কর্মিসভা, বর্ধিত সভা ও জনসভা করব। সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতেই এ উদ্যোগ।’

চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন, ২০১৯ সালের সংসদ নির্বাচনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন দলের হাইকমান্ড। এজন্য তৃণমূলে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করতে নতুন বছরের শুরুতেই ধারাবাহিক সফর শুরু করা হবে। তিনি বলেন, এ মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা। সবচেয়ে জনপ্রিয় দল আওয়ামী লীগ। বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদে দেশের ব্যাপক উন্নয়ন হওয়ায় মানুষ আবারও আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতায় আনবে।

রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আসছে জানুয়ারিতেই সাংগঠনিক সফর শুরু হবে। তিনি রাজশাহীতে নিজের সাংগঠনিক এলাকার খোঁজখবর নিয়মিত রাখছেন বলে জানান।

সর্বশেষ খবর