শুক্রবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

জেলা পুনর্গঠনে পদে পদে বাধা বিএনপিতে

মাহমুদ আজহার

জেলা পুনর্গঠনে পদে পদে বাধা বিএনপিতে

পটুয়াখালী জেলা সভাপতি আলতাফ হোসেন চৌধুরী। তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানও। এক নেতার এক পদ কার্যকর হওয়ায় তাকে জেলার নেতৃত্ব ছেড়ে দিতে চাপ দিচ্ছে কেন্দ্র। কিন্তু তিনি জেলায় থাকতে আগ্রহী। আবার কেন্দ্রের পদ ছাড়ছেন না। অন্যদিকে তাকে ওই পদ থেকে সরাতেও প্রতিপক্ষ গ্রুপ তার বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে। এ নিয়ে বিপাকে কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। ময়মনসিংহ জেলার সভাপতি এ কে এম মোশাররফ হোসেন। তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাও। এখনো তিনি জেলার নেতৃত্বে থাকতে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু তা চেয়ারপারসন গ্রহণ করেননি। পরে তা দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতার কাছে জমা দেন তিনি। তাকে কেন্দ্রে রাখার চিন্তা বিএনপি হাইকমান্ডের। তিনি থাকতে চান জেলায়। এ নিয়েও অস্বস্তিতে পুনর্গঠনে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এ চিত্র শুধু দুই জেলাতে নয়, সারা দেশেই বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা প্রায় একই রকম। পুরনোদের অনেকেই এখনো নিজ জেলার নেতৃত্বে থাকতে চান। আবার কেউ কেউ নিজস্ব লোক বসাতে চান ওই পদে। আবার জেলার সভাপতি হতে প্রার্থীরও ছড়াছড়ি। অপেক্ষাকৃত অযোগ্যরাও চায় নেতৃত্ব। কেন্দ্রে তাদের তত্পরতাই অপেক্ষাকৃত বেশি। এ নিয়ে বিব্রত ও ক্ষুব্ধ দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। ২৩ জন কেন্দ্রীয় নেতা এখনো দুই পদে বহাল রয়েছেন। এ ছাড়া ২১ জন নেতা জেলার পদে থাকতে কেন্দ্রের পদ ছেড়ে দিয়েছেন। এ কারণে পুনর্গঠনের কাজ করতে গিয়েও বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন দায়িত্বশীল নেতারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জেলা সম্মেলন করতে গিয়ে বিএনপি বেশকিছু বাধার সম্মুখিন হচ্ছে। এর মধ্যে বড় একটি কারণ হলো সম্মেলনের আগে পুরো ইউনিটের কমিটি না থাকা। কেন্দ্রের কর্মকাণ্ডে স্থানীয় সাবেক মন্ত্রী-এমপির অযাচিত হস্তক্ষেপ করা। স্থানীয় প্রশাসনের বাধা তো আছেই। তা ছাড়া পুনর্গঠনকে কেন্দ্র করে পুরনো কোন্দলের নতুন মাত্রা পাচ্ছে। পক্ষে বিপক্ষে সভা করাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে কাউন্সিলকে ঘিরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। বাধ্য হয়ে বেশ কয়েকটি জেলায় সম্মেলন ছাড়াই কমিটি দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে বিএনপির হাইকমান্ড। জানা যায়, দুই পদে থাকা কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে রয়েছেন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, রাবেয়া চৌধুরী, মিজানুর রহমান মিনু, মজিবুর রহমান সরোয়ার, খায়রুল কবীর খোকন, আসাদুল হাবিব দুলু, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, ফজলুল হক মিলন, অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, আবদুল ওয়াদুদ ভূইয়া, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, কামরুল মনির, আফজাল এইচ খান, লুত্ফুর রহমান আজাদ, মোস্তাফিজুর রহমান বাবু, আমজাদ হোসেন, কাজী আকরামুজ্জামান, মাহমুদুর রহমান বাবু, শাজহাদা মিয়া, আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, গৌতম চক্রবর্তী, জি কে গউছ ও হাজী ইয়াসিন প্রমুখ। এর মধ্যে কেন্দ্রের পদ ছেড়েছেন, এ কে এম মোশাররফ হোসেন, মশিউর রহমান, সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী, অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার, আফরোজা খান রীতা, মাইনুল আহসান খান শান্ত, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, ম্যা মা চিং, শিরিন সুলতানা, আনিসুজ্জামান খান বাবু, আমিনুর রশীদ ইয়াসিন, শেখ ফরিদ উদ্দিন আহমেদ মানিক, অধ্যক্ষ সোহবার উদ্দিন, মোজাহার আলী প্রধান, ডা. দেওয়ান মো. সালাউদ্দিন, এ বি এম আশরাফ উদ্দিন নিজান, শফিকুল হক মিলন, শাহাবুদ্দিন শাবু, শামীমুর রহমান শামীম, শামসুজ্জামান প্রমুখ।

তবে দলের সিদ্ধান্ত মেনে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, ঢাকা জেলা সভাপতি আবদুল মান্নান, সিরাজগঞ্জ জেলা সভাপতি ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ঢাকা জেলার সাধারণ সম্পাদক আমান উল্লাহ আমান, মাগুরা জেলার আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, টাঙ্গাইল জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট আহমদ আজম খান, খুলনা জেলা সভাপতি অধ্যাপক মাজেদুর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সভাপতি অধ্যাপক শাহজাহান মিয়া, নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলা সভাপতি জয়নুল আবদিন ফারুক, নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা সভাপতি আখতার হামিদ সিদ্দিকী, ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলা সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার খালেদ মাহবুব শ্যামল, কুলিয়ারচর উপজেলা সভাপতি শরিফুল আলম ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলা সভাপতি আমিনুল ইসলাম পদত্যাগ করেন। ৩০ নভেম্বরের সময়সীমা প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘টাইম ফ্রেম দেওয়া হয় একটি লক্ষ্য নির্ধারণে। রাজনৈতিক দলগুলোতে শেষ বলতে কিছু নেই। তাছাড়া পুনর্গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। পুলিশ প্রশাসনের বাধা না হলে অনেক জেলায় কমিটি গঠন করা যেত। তারপরও আশা করছি, ডিসেম্বরের মধ্যে পুনর্গঠন কাজ শেষ করা যাবে।’ জানা যায়, বিএনপির সাংগঠনিক জেলা ৭৫টি। এর মধ্যে প্রায় ২০টির মতো জেলায় কমিটি হয়েছে। সম্প্রতি জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, মাগুরা ও কুমিল্লা উত্তরের কমিটি দেওয়া হয়েছে। বিএনপি ঘোষণা দিয়েছিল, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে প্রায় সব সাংগঠনিক জেলা পুনর্গঠন সম্পন্ন হবে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে মাত্র ৫টি জেলার কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়েছে। সাংগঠনিক পুনর্গঠনের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সব সাংগঠনিক জেলায় হোমওয়ার্কের কাজ শেষ হয়েছে। কয়েকটি জেলায় এরই মধ্যে সফর করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাজহাজানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।

আবার বাধার কারণে কয়েকটি জেলায় সম্মেলন স্থগিতও করা হয়।

বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, পুনর্গঠন প্রক্রিয়া একটি জটিল বিষয়। সবাইকে খুশি রেখে এ কাজ করা সম্ভব নয়। দীর্ঘদিন ধারাবাহিকভাবে কমিটি হচ্ছে না। এ কারণে ক্ষোভ-বিক্ষোভ আছে। পুরো ৭৫টি সাংগঠনিক জেলা পুনর্গঠনের কাজ শেষ করতে আরও অন্তত দুই-তিন মাস সময় লাগবে। 

বিএনপির সাংগঠনিক বিপর্যন্ত বিভাগের মধ্যে রয়েছে বরিশাল।  মহানগরসহ এ বিভাগে আটটি সাংগঠনিক জেলা। কোনোটিরই সম্মেলন কিংবা কমিটি হয়নি। ঝালকাঠি জেলায় সম্মেলন না হলেও কোনোমতে একটি সভা করেছে বিএনপি। আগামী ১৮ ডিসেম্বর পিরোজপুর এবং ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ভোলা জেলার সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। বরিশাল বিভাগীয়সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আ ক ন কুদ্দুসুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘প্রশাসনের বাধাসহ নানা প্রতিবদ্ধকতার মধ্য দিয়েও পুনর্গঠনের কাজ চলছে। কার্যক্রম থেমে নেই।’ আরেক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নু বলেন, ‘ডিসেম্বরের মধ্যে অধিকাংশ সাংগঠনিক জেলায় পুনর্গঠন সম্পন্ন হবে। আমাদের উচিত হবে, শুধু সম্মেলনই নয়, তৃণমূলকে শক্তিশালীকরণে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে হবে।’

জানা যায়, শিগগিরই নোয়াখালী, টাঙ্গাইল, সুনামগঞ্জ, পিরোজপুর, জামালপুর, কুষ্টিয়া, মাদারীপুর, মাগুরা, নওগাঁ, খাগড়াছড়ি, রাজশাহী জেলা, রাজশাহী মহানগর, বান্দরবান, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, লক্ষ্মীপুরসহ অন্তত ২০টি জেলার সম্মেলন করার চিন্তা-ভাবনা করছে বিএনপি। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি জেলার সম্মেলনের দিনক্ষণও নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান জানান, ‘সাংগঠনিক পুনর্গঠনে স্থানীয় প্রশাসনই বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার পরও থেমে নেই কার্যক্রম। আশা করছি, ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা আশানুরূপ জেলা কমিটি দিতে পারব।’

 

সর্বশেষ খবর