শুক্রবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ফেলনা প্লাস্টিকে বিদেশি মুদ্রার হাতছানি

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

ফেলনা প্লাস্টিকে বিদেশি মুদ্রার হাতছানি

পরিবেশের শত্রু হিসেবেই এতদিন বিবেচিত হয়ে আসছিল পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল। কিন্তু এই বোতল এখন আর ফেলনা নয়। কারণ এ বোতলের চিপস বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। এর ফলে তৈরি হয়েছে একদিকে বিদেশি মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্র, আরেকদিকে সৃষ্টি হয়েছে নতুন কর্মসংস্থান এবং একই সঙ্গে বোতল থেকে পরিবেশ দূষণের ব্যাপারও কেটে যাচ্ছে।  এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাসা-বাড়ি ও রাস্তা-ঘাটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পরিত্যক্ত প্লাস্টিক সংগ্রহ করে ভাঙাড়ি ব্যবসায়ীরা তা বিক্রি করেন প্লাস্টিক প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা মালিকদের কাছে। সেখানে বোতলগুলো পরিচ্ছন্ন করে চিপস আকারে কেটে তা রপ্তানি করা হয় চীন, কোরিয়া ও ভিয়েতনামের মতো শিল্প উন্নত দেশগুলোতে। ফলে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও এই ক্ষুদ্র শিল্পটি বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অপার সম্ভাবনা তৈরি করেছে। সিলেট পেট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. কামরুল হোসেন চৌধুরী জানান, সিলেটে ১৪টি কারখানায় প্লাস্টিক বোতল প্রক্রিয়াজাত করে চিপস তৈরি করা হয়। এখাতে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ১ হাজার মানুষের। এছাড়া প্রতি মাসে সিলেটের কারখানা থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা মূল্যের প্লাস্টিক চিপস রপ্তানির জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের কাছে পাঠানো হয়। সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শাহজালাল প্লাস্টিক কারখানার স্বত্বাধিকারী দবির চোকদার জানান, রঙভেদে তারা প্রতিকেজি পুরাতন প্লাস্টিক বোতল ২০ থেকে ৫০ টাকায় কিনে থাকেন। আর প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে প্রতিকেজি প্লাস্টিক চিপস বিক্রি করেন ৩৫ থেকে ৭০ টাকায়। এই ব্যবসা মোটামুটি লাভজনক হলেও ব্যাংক ঋণের চড়া সুদের কারণে মাস শেষে লাভের প্রায় পুরোটাই হাতছাড়া হয়ে যায়। ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমানো হলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা নিজেরাই বিদেশে প্লাস্টিক রপ্তানি করতে পারতেন। এতে করে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারতেন। পুরনো প্লাস্টিক প্রক্রিয়াজাতকরণের কারখানাগুলোর স্থায়ী জায়গা না থাকাকে বড় বাধা দাবি করে দক্ষিণ সুরমার আরাফাত প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজের স্বত্বাধিকারী হানিফ ভূইয়া জানান, ৫ বছরের জন্য জায়গা ইজারা নিয়ে তারা কারখানা চালান। ইজারার মেয়াদ শেষ হলে মালিক অস্বাভাবিক হারে ভাড়া বাড়িয়ে দেন। এর প্রতিবাদ করারও কোনো সুযোগ নেই। তাই সরকারি উদ্যোগে স্থায়ী জায়গার বন্দোবস্ত করা গেলে এ ব্যবসার প্রসার ঘটত এবং এর ফলে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হতো। নতুন এ রপ্তানি পণ্যকে সম্ভাবনাময় উল্লেখ করে সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি সালাহ উদ্দিন আলী আহমদ বলেন, পরিত্যক্ত প্লাস্টিক বোতল বিদেশে রপ্তানি হওয়ায় আমরা একদিকে যেমন বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছি, তেমনি পরিবেশ রক্ষাও করতে পারছি। ক্ষুুদ্র এই ব্যবসায়ীদের সরকারি উদ্যোগে পৃষ্ঠপোষকতা করা গেলে উদ্যোক্তারা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি নতুন এই রপ্তানি পণ্যের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবেন।

 

 

সর্বশেষ খবর