শিরোনাম
রবিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

মেট্রোরেলে বদলে যাবে ঢাকা

উত্তরা-মতিঝিল রুটের নির্মাণ শেষ ২০১৯ সালে, ৫টি রুট সম্পন্ন হলে ভোগান্তি কমবে

মানিক মুনতাসির

মেট্রোরেলে বদলে যাবে ঢাকা

ঢাকাবাসী বিদ্যুৎ গতিতে মাত্র ৩৮ মিনিটে উত্তরা থেকে মতিঝিল পৌঁছে যাবেন মেট্রোরেলে চেপে। ভাবতে স্বপ্নের মতোই মনে হয়। কেননা এখন তো এই পথ পাড়ি দিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয় যানজটে। হ্যাঁ, বিদ্যুৎ গতিতেই যাওয়া যাবে উত্তরা থেকে মতিঝিল। তবে সেটা ২০১৯ সাল নাগাদ মেট্রোরেল লাইন-৬ বাস্তবায়ন হওয়ার পর। রাজধানীবাসীর সময়ের দূরত্ব কমাবে এই স্বপ্নের মেট্রোরেল। বদলে যাবে দৃশ্যপট। বন্ধ হবে যাতায়াতের ভোগান্তি। পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াত করা যাবে মেট্রোরেলে। সড়কদ্বীপের ওপরে চলবে ট্রেন। আর নিচে চলবে গাড়ি। নিরসন হবে যানজট। ইতিমধ্যে এ প্রকল্পের দৃশ্যমান কাজ শুরু হয়েছে। উত্তরার দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেলের ডিপো নির্মাণের কাজও এগিয়ে চলছে। সম্প্রতি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ডিপো পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেছেন, ২০১৯ সালের মধ্যেই মেট্রোরেলের লাইন-৬ এর কাজ শেষ হবে। সে বছরই যাত্রী চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে মেট্রোরেল। সে প্রস্তুতি অনুযায়ীই কাজ করছে জাপান আন্তর্জাতিক  সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। মেট্রোরেল চালু হলে যাত্রীদের যানজটে বসে সময় নষ্ট করতে হবে না। গাড়ির হর্ন আর ভ্যাঁপসা গরমে অতিষ্ঠ হতে হবে না। এ কথা ভাবতেও স্বপ্নের মতোই মনে হয়। কিন্তু ঢাকাবাসীর এই স্বপ্নই এবার বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। মেট্রোরেলের কাজ শেষ হলে ঢাকাবাসীর যাতায়াত প্রক্রিয়া অত্যন্ত সহজ হবে। যার ফলে মানুষের জীবনে সময়ের দূরত্ব কমে আসবে। মেট্রোরেলের মোট লাইন হবে ৫টি। তবে এখন পর্যন্ত ৩টি লাইনের রুট চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে মেট্রোরেল-৬ এর রুট হচ্ছে উত্তরা থেকে মতিঝিল। লাইন-৫ এর রুট হচ্ছে গাবতলী থেকে ভাটারা। আর লাইন-১ এর রুট হচ্ছে কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর। বাকি তিনটি লাইনের রুট এখনো চূড়ান্ত হয়নি। পর্যায়ক্রমে এগুলোর কাজ এগিয়ে নিতে চায় সরকার। গাবতলী থেকে মিরপুর, বনানী, গুলশান হয়ে ভাটারা পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে দ্বিতীয় মেট্রোরেল, যা এমআরটি-৫ নামে পরিচিত। এর প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে জাইকা। এর বিস্তারিত সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজও ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে এটি গাবতলী-ভাটারা পর্যন্ত চলাচল করবে। পরবর্তীতে এটিকে আদাবর, মোহাম্মদপুর, কলাবাগান, কারওয়ান বাজার, হাতিরঝিল হয়ে আফতাবনগর পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে। ফলে রাজধানীর যানজট হ্রাসের পাশাপাশি অন্যান্য মেট্রোরেল ও বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) রুটের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করবে এমআরটি-৫। দ্রুত যাতায়াতের জন্য মেট্রোরেলের দৃশ্যমান কাজ শুরু হয়েছে। মেট্রোরেল লাইন-৬ এর কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। লাইন-৬ এর কাজ ২০১৯ সালের মধ্যে শেষ হবে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১৬টি স্টেশন থাকবে। যেখানে যাত্রী ওঠানামা করতে পারবেন। প্রতি পাঁচ মিনিট পরপর একটি করে ট্রেন স্টেশন ছেড়ে যাবে অন্য স্টেশনের উদ্দেশে। প্রতি ঘণ্টায় উভয় পাশে প্রায় ৬০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন এই মেট্রোরেলের মাধ্যমে। এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে জাইকা। মেট্রোরেলের সবগুলো রুটের নির্মাণ কাজে অর্থায়ন করতে আগ্রহী তারা। প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের মেট্রোরেল লাইন-৬ দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প।

ভোগান্তি চলবে ২০১৯ পর্যন্ত : স্বপ্নের মেট্রোরেল বাস্তবায়নে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হবে ঢাকাবাসীকে। সেই ভোগান্তি অবশ্য ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। প্রকল্পের মিরপুর অংশে মাটির নিচ থেকে সার্ভিস লাইন অপসারণের কাজ শুরু হয়েছে। এ জন্য দুই পাশ থেকে রাস্তা কাটা হচ্ছে। ফলে যান চলাচলের রাস্তা সরু হয়ে গেছে। তবে ভোগান্তি কমাতে দিনের পরিবর্তে শুধু রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত এ কাজ চলছে। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, মেট্রোরেলের মূল কাজ শুরুর আগে বৈদ্যুতিক তার সরাতে রাস্তা খোঁড়ায় যানজটের ভোগান্তিতে পড়েছেন মিরপুরের বাসিন্দারা। এই ভোগান্তি শুধু মিরপুরবাসীরই নয়, পর্যায়ক্রমে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পুরো এলাকার মানুষকেই পোহাতে হবে। পক্ষান্তরে পুরো ঢাকাবাসীকেই এ ভোগান্তি পেরিয়ে স্বপ্নের মেট্রোরেলে চড়তে হবে। অন্য রুটের কাজ শুরু হলে সেগুলোর জন্যও ভোগান্তিতে পড়বেন নগরবাসী। মিরপুরের বাসিন্দারা বলেছেন, শুধু সার্ভিস লাইন অপসারণের কারণেই যে সীমাহীন ভোগান্তি শুরু হয়েছে। তাহলে প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হলে যখন সড়কজুড়ে পাইলিং হবে, নির্মাণযজ্ঞ চলবে। তখন হয়তো রাস্তায় চলাফেরা করাই কঠিন হয়ে পড়বে। তবে স্থায়ী একটি যাতায়াত ব্যবস্থার জন্য সাময়িক কষ্ট সইতেই রাজি তারা। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, সূচি অনুযায়ী আগামী বছরের জুন থেকে ঢাকা মেট্রোরেলের মূল কাজ শুরু হবে। ভূগর্ভস্থ বৈদ্যুতিক সঞ্চালন তার প্রতিস্থাপনের জন্য এরই মধ্যে বেগম রোকেয়া সরণির তালতলা থেকে মিরপুর ১০ নম্বর পর্যন্ত সড়কের এক পাশ খুঁড়ে ফেলা হয়েছে। তিন লেনের মাঝের একটি লেন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ব্যারিকেড দিয়ে। ফলে দুই লেন দিয়ে ধীরগতিতে যানবাহন চলছে। সঙ্গে উড়ছে ধুলাবালি। সূত্র জানায়, মেট্রোরেলের পথে ওয়াসা, তিতাস, পিজিসিবি, টিঅ্যান্ডটিসহ ১২টি সেবা সংস্থার লাইন রয়েছে। প্রায় এক বছর ধরে খোঁড়াখুঁড়ি করে সেবা সংস্থার লাইনগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এখনো শাহবাগ থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশের কিছু কিছু স্থানে লাইন চিহ্নিত করা বাকি। তবে সব সংস্থার লাইন সব স্থানে নেই। ১৬টি স্টেশনের স্থানে প্রায় সব সংস্থার লাইনই সরাতে হবে।

সর্বশেষ খবর